মরু অঞ্চলে বায়ুর সঞ্চয় কার্যের ফলে নানান রকম ভূমিরূপ সৃষ্টি হয় । যখন কোন কারনে বায়ুপ্রবাহ বাধাপ্রাপ্ত হয়, তখন বায়ুর সঞ্চয় কার্য শুরু হয়।
বায়ু যখন ক্ষয়কার্য করে বিভিন্ন শিলাস্তর ও মাটির কণা অপসারণ করে, তখন সেই উপাদানগুলো কিছু দূরে নিয়ে গিয়ে সঞ্চয় করে নতুন ভূমিরূপ তৈরি করে। এই প্রক্রিয়াকে বায়ুর সঞ্চয় কার্য (Aeolian Deposition) বলা হয়। মরুভূমি ও শুষ্ক অঞ্চলে বায়ুর সঞ্চয় কার্য বেশি পরিলক্ষিত হয়।
বায়ুর সঞ্চয় কার্যের ফলে সৃষ্ট ভূমিরূপ গুলির চিত্রসহ আলোচনা কর।
বায়ুর সঞ্চয় কার্যের ফলে গঠিত বিভিন্ন ভূমিরূপ সম্পর্কে আলোচনা করা হলো—
বালিয়াড়িঃ
মরু বা শুষ্ক অঞ্চলে, বায়ুপ্রবাহের মাধ্যমে বয়ে আনা বালি একত্রিত হয়ে ডিবির মতো যে ভূমিরূপ সৃষ্টি করে তাকে বালিয়াড়ি বলে।
উৎপত্তিঃ
বালি পূর্ণ বায়ু প্রবাহের গতি কমে গেলে অথবা গাছপালা, বড় প্রস্তরখন্ড, ঝোপঝাড় বা অন্য কোন বাধা থাকলে বালি ও ধূলিকণা ওই স্থানে জমতে থাকে। দীর্ঘ সময় ধরে এই প্রক্রিয়া চলতে থাকলে বালিয়াড়ি গঠিত হয়।
বৈশিষ্ট্যঃ
- বালিয়াড়ির আকৃতি পরিবর্তনশীল এবং বাতাসের গতির ওপর নির্ভর করে।
- এগুলো একস্থান থেকে অন্যস্থানে স্থানান্তরিত হতে পারে।
- বালিয়াড়ির উচ্চতা কয়েক মিটার থেকে ৩০০ মিটার পর্যন্ত হতে পারে।
উদাহরণঃ সাহারা, থর, কালহারি মরুভূমিতে বালিয়াড়ি দেখা যায়।
বার্খানঃ
বায়ু প্রবাহের গতিপথে আরা-আড়ি ভাবে গঠিত বালিয়াড়ি কে বার্খান বা তীর্যক বালিয়াড়ি বলে।
উৎপত্তিঃ
বালি পূর্ণ বায়ু যখন একমুখী প্রবাহিত হয় তখন তার পথে কিছু বাধা সৃষ্টি হলে, বালি বাঁকানো আকৃতিতে জমতে শুরু করে এবং বার্খান গঠিত হয়।
বৈশিষ্ট্যঃ
- এর শীর্ষদেশ উঁচু এবং পাশে ঢালু থাকে।
- বায়ুর গতিবিধির ওপর নির্ভর করে এগুলো ধীরে ধীরে স্থান পরিবর্তন করে।
- এটি একধরনের গতিশীল ভূমিরূপ।
- এর উচ্চতা ১৫ থেকে ৩০ মিটারের মত হয়।
উদাহরণঃ মঙ্গোলিয়ার গোবি ও সাহারা মরুভূমি মরুভূমিতে বার্খান দেখা যায়।
সিফঃ
বায়ুপ্রবাহের গতিপথে সমান্তরালে গঠিত দীর্ঘ ও সরু বালিয়াড়িকে সিফ বা অনুদৈর্ঘ্য বালিয়াড়ি বলে বলে।
উৎপত্তিঃ
দুই বিপরীতমুখী বায়ুপ্রবাহের ফলে বালির কণা একত্রিত হয়ে সরু, দীর্ঘ এবং রেখাচিত্রের মতো সিফ ভূমিরূপ তৈরি করে।
বৈশিষ্ট্যঃ
- এটি দেখতে সোজা তরবারির মত হয়।
- এই ধরনের বালিয়াড়ি লম্বায় কয়েকশো কিলোমিটার পর্যন্ত বিস্তৃত হয়।
- সিফ বালিয়াড়ির উচ্চতা অনেক সময় ১০০ কিলোমিটারের বেশি হয়।
উদাহরণঃ থর, সাহারা, কালাহারি মরুভূমিতে সিফ দেখা যায়।
লোয়েসঃ
মরু অঞ্চলের বালি, পলি বায়ুর মাধ্যমে অনেক দূরে উরে গিয়ে সঞ্চিত হয়ে যে নতুন ভূমিরূপ সৃষ্টি করে তাকে লোয়েস বলে।
উৎপত্তিঃ
মরু ও শুষ্ক অঞ্চলে বায়ু ক্ষয়জাত সূক্ষ্ম কণা বহন করে কিছু দূরে নিয়ে গিয়ে স্তর আকারে জমা করে, নতুন সমতল ভূমি লোয়েস গঠন করে।
বৈশিষ্ট্যঃ
- লোয়েস ভূমি অত্যন্ত উর্বর এবং কৃষির জন্য উপযোগী।
- এটি সাধারণত হালকা হলুদ বা বাদামি রঙের হয়।
- এটি সহজেই ক্ষয়প্রাপ্ত হয় এবং নদীর মাধ্যমে অন্যত্র স্থানান্তরিত হতে পারে।
উদাহরণঃ গোবি মরুভূমির বালি উড়ে এসে বিশ্বের বৃহত্তম লোয়েস সমভূমি ‘ হোয়াং টু’ সঞ্চিত হয়েছে চীনের হোয়াংহো নদী অববাহিকা অঞ্চলে।
উপসংহারঃ
এই ভূমিরূপগুলি প্রাকৃতিক পরিবেশ ও আবহাওয়ার পরিবর্তনের সাথে সাথে ক্রমাগত পরিবর্তিত হয় এবং ভূমির উপর দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব ফেলে।
বায়ুর ক্ষয় কার্যের ফলে সৃষ্ট ভূমিরূপ গুলির চিত্রসহ আলোচনা কর। সম্পূর্ণ উত্তরটি দেখতে Click করুন এখানে।
তথ্যসূত্রঃ
এই ব্লগের কাজ করতে Wikipedia এর সাহায্য নেয়া হয়েছে।
বায়ুর সঞ্চয় কার্য থেকে গুরুত্বপূর্ণ সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন উত্তরঃ
প্রশ্নঃ ধ্রিয়ান কি ?
উত্তরঃ থর মরুভূমিতে চলমান বালিয়াড়িকে ধ্রিয়ান বলে।
প্রশ্নঃ থেরিস বা টেরিস কাকে বলে ?
উত্তরঃ কেরালার মালাবার উপকূলের বালিয়াড়ি গুলিকে স্থানীয় ভাষায় থেরিস বা টেরিস বলে।
প্রশ্নঃ বার্খান শব্দের অর্থ কি ?
উত্তরঃ বার্খান একটি তুর্কি শব্দ, যার অর্থ-বালির পাহাড়। বার্খান নামকরণটি করেন- হাডিন ।
প্রশ্নঃ সিফ শব্দের অর্থ কি ?
উত্তরঃ সিফ একটি আরবি শব্দ, যার অর্থ তলোয়ার।
প্রশ্নঃ গাসি কি ?
উত্তরঃ দুটি সিফ বালিয়াড়ির র মধ্যবর্তী ফাঁকা অংশকে গাসি বা করিডর বলে।
প্রশ্নঃ পশ্চিমবঙ্গের কোথায় বালিয়াড়ি দেখা যায় ?
উত্তরঃ পূর্ব মেদিনীপুরের কাঁথি সমুদ্র উপকূলে বালিয়াড়ি দেখা যায়।
প্রশ্নঃ লোয়েস শব্দের অর্থ কি ?
উত্তরঃ লোয়েস শব্দের অর্থ -স্থানচুত বস্তু ।
প্রশ্নঃ সিফ কি থেকে সৃষ্টি হয় ?
উত্তরঃ বার্খান থেকে সিফ সৃষ্টি হয়।
প্রশ্নঃ বালিয়াড়ি কীভাবে গঠিত হয়?
উত্তরঃ বায়ুপ্রবাহের মাধ্যমে বহন করা বালি যখন কোনো বাধার সম্মুখীন হয়, তখন ধীরে ধীরে সেই স্থানে জমা হতে থাকে এবং দীর্ঘ সময়ের ব্যবধানে বালির স্তূপ বা ডিবির মতো ভূমিরূপ গঠিত হয়, যা বালিয়াড়ি নামে পরিচিত।