ইতিহাস, দশম শ্রেণী

উনিশ শতকের বাংলায় নারী সমাজের বিকাশে বামাবোধিনী পত্রিকা

Admin

No Comments

বামাবোধিনী পত্রিকা ছিল উনিশ শতকের দ্বিতীয়ার্ধে প্রকাশিত নারী বিষয়ক মাসিক সাময়িক পত্র। এই পত্রিকাটি একপ্রকার নারী সমাজের গৃহ শিক্ষকের ভূমিকা পালন করেছিল।

১৮৬৩ খ্রিস্টাব্দে বিশিষ্ট ব্রাহ্মনেতা ও সিটি কলেজের অধ্যক্ষ উমেশচন্দ্র দত্ত কলকাতায় “বামাবোধিনী পত্রিকা” প্রকাশ করেন। এটি ছিল বাংলার প্রথম মহিলা শিক্ষাবিষয়ক সাময়িকী, যা নারীদের শিক্ষিত করে তুলতে এবং তাদের সামাজিক অবস্থান উন্নত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এই পত্রিকাটি ছিল ব্রাহ্মনেতা কেশব চন্দ্র সেন প্রতিষ্ঠিত ‘বামাবোধিনী সভা’র(১৮৬৩) মুখপত্র। পত্রিকাটির প্রথম সম্পাদক উমেশচন্দ্র দত্ত ১৯০৭ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত দীর্ঘ ৪৪ বছর সম্পাদনা করেন। এছাড়া অন্যান্য সম্পাদকরা ছিলেন-আশুতোষ ঘোষ, সন্তোষ কুমার দত্ত, সূর্যকুমার চট্টোপাধ্যায় প্রমুখ। পত্রিকাটির সর্বশেষ সম্পাদক ছিলেন আনন্দ কুমার দত্ত। ১৯২২ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত টানা ৬০ বছর পত্রিকাটি প্রকাশিত হয়েছিল

Table of Contents

উনিশ শতকের বাংলায় নারী সমাজের বিকাশে বামাবোধিনী পত্রিকার ভূমিকা বিশ্লেষণ কর।

ভূমিকাঃ

উনিশ শতকের বাংলা সমাজ ছিল পুরুষশাসিত, যেখানে নারীদের শিক্ষা, অধিকার ও সামাজিক মর্যাদা খুবই সীমিত ছিল। এই সময়ে নারীদের উন্নতি ও সমাজে তাদের অবস্থান সুদৃঢ় করার লক্ষ্যে বিভিন্ন প্রচেষ্টা নেওয়া হয়। এর মধ্যে ‘বামাবোধিনী পত্রিকা’ অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

নারী শিক্ষার প্রসারে ভূমিকাঃ

উনিশ শতকে বাংলার সমাজে নারীদের শিক্ষায় প্রচুর বাধা ছিল। ‘বামাবোধিনী পত্রিকা’ নারীদের শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে নারী সমাজকে সচেতন করে তোলে। এতে শিক্ষিত নারীদের গল্প, প্রবন্ধ ও জীবনী প্রকাশিত হতো, যা নারীদের মধ্যে শিক্ষার আগ্রহ সৃষ্টি করেছিল।

নারীদের অধিকার রক্ষায় অবদানঃ

‘বামাবোধিনী পত্রিকা’ নারীদের প্রতি সমাজের অন্যায় আচরণের বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলেছিল। বিধবা বিবাহ, নারী শিক্ষা, বাল্যবিবাহ রোধ ও নারীদের সামাজিক মর্যাদা বৃদ্ধির পক্ষে এই পত্রিকা বিভিন্ন প্রবন্ধ প্রকাশিত করতো। এর ফলে সমাজের প্রগতিশীল ব্যক্তিরা নারীদের অধিকারের জন্য এগিয়ে আসেন।

বামাবোধিনী পত্রিকা
উমেশচন্দ্র দত্ত

সাহিত্য ও সংস্কৃতির বিকাশঃ

‘বামাবোধিনী পত্রিকা’ নারীদের সাহিত্যচর্চার সুযোগ তৈরি করেছিল। অনেক নারী লেখিকা এই পত্রিকায় লেখার সুযোগ পান, যা নারীদের মেধা ও সৃজনশীলতা প্রকাশে সহায়ক হয়েছিল। এছাড়া এই পত্রিকা নারীদের জন্য বিভিন্ন নৈতিক, ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক বিষয়ে লেখা প্রকাশিত করতো, যা তাদের আত্মবিশ্বাস বাড়াতে সাহায্য করেছিল।

সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তনঃ

‘বামাবোধিনী পত্রিকা’ পুরুষ সমাজকেও নারীদের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তনের আহ্বান জানায়। শিক্ষিত সমাজের অনেক পুরুষ এই পত্রিকার লেখা পড়ে নারীদের প্রতি সম্মান ও তাদের অধিকারের কথা ভাবতে শুরু করেন। ফলে নারীরা ধীরে ধীরে ঘর থেকে বেরিয়ে আসার সুযোগ পান।

উপসংহারঃ

‘বামাবোধিনী পত্রিকা’ উনিশ শতকের বাংলায় নারী উন্নয়নে এক বিপ্লব ঘটায়। এটি নারীদের শিক্ষিত করে তুলতে, তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে এবং সমাজে তাদের মর্যাদা বাড়াতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে।

সভ্যতার বিকাশে যানবাহন ও যোগাযোগ ব্যবস্থার গুরুত্ব আলোচনা কর:Click সম্পূর্ণ উত্তরটি দেখতে করুন এখানে।

তথ্যসূত্রঃ

এই ব্লগের কাজ করতে Wikipedia এর সাহায্য নেওয়া হয়েছে।

উনিশ শতকে নারী শিক্ষা কিছু গুরুত্বপূর্ণ সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তরঃ

প্রশ্ন: ‘বামাবোধিনী’ শব্দের অর্থ কি ?

উত্তর: ‘বামা’ শব্দের অর্থ নারী আর ‘বোধিনী’ শব্দের অর্থ বন্ধনা বা প্রশংসা। অর্থাৎ বামাবোধিনী কথার সম্পূর্ণ অর্থ- হলো নারী প্রশংসা বা বন্ধনা।

প্রশ্ন: ‘বামাবোধিনী’ পত্রিকার মূল উদ্দেশ্য কি ছিল ?

উত্তর: বামাবোধিনী পত্রিকার মূল উদ্দেশ্য ছিল নারী শিক্ষার বিস্তার ঘটানো, নারীদের শিক্ষিত করে তোলা, এবং বাল্যবিবাহ ও অসম বিবাহের বিরোধিতা করা।

প্রশ্ন: বামাবোধিনী পত্রিকার প্রতিষ্ঠাতা কে ?

উত্তর: বামাবোধিনী পত্রিকার প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন বিশিষ্ট ব্রাহ্মনেতা ও শিক্ষাবিদ উমেশচন্দ্র দত্ত।

প্রশ্ন: এই পত্রিকার প্রথম সম্পাদক কে ছিলেন ?

উত্তর: বামাবোধিনী পত্রিকার প্রথম সম্পাদক ছিলেন উমেশচন্দ্র দত্ত, যিনি ১৯০৭ সাল পর্যন্ত এটি সম্পাদনা করেন।

প্রশ্ন: বামাবোধিনী পত্রিকা কত বছর ধরে প্রকাশিত হয়েছিল ?

উত্তর: পত্রিকাটি ৬০ বছর (১৮৬৩-১৯২২) পর্যন্ত টানা প্রকাশিত হয়েছিল।

প্রশ্ন: এই পত্রিকার দুটি বৈশিষ্ট্য লেখ ।

উত্তর: ১) এটি ছিল একটি নারী বিষয়ক পত্রিকা। ২) এই পত্রিকায় অধিকাংশ লেখিকায় ছিলেন সাধারণ অনামি গৃহবধূ।

প্রশ্ন: এই পত্রিকার গুরুত্ব কি ছিল ?

উত্তর: ১) উনিশ শতকে নারী শিক্ষাকে গৃহের অভ্যন্তরে পৌঁছে দিয়েছিল এই পত্রিকা। ২) নারী শিক্ষার পাশাপাশি বিভিন্ন সামাজিক কুসংস্কার যেমন- বাল্যবিবাহ , বহুবিবাহ ইত্যাদি বিষয়ে সচেতন করে তুলেছিল এই পত্রিকা।

প্রশ্ন: এই পত্রিকা পুরুষদের উপর কী প্রভাব ফেলেছিল ?

উত্তর: শিক্ষিত পুরুষ সমাজের অনেকে নারীদের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করেন এবং তাদের অধিকারের পক্ষে সমর্থন জানান।

প্রশ্ন: বামাবোধিনী পত্রিকা নারী শিক্ষায় কীভাবে অবদান রেখেছিল ?

উত্তর: পত্রিকাটি নারীদের শিক্ষার গুরুত্ব বোঝাতে বিভিন্ন প্রবন্ধ, জীবনী, শিক্ষামূলক লেখা ও সমাজ সংস্কারমূলক তথ্য প্রকাশ করত, যা নারীদের মধ্যে শিক্ষার আগ্রহ বাড়িয়েছিল।

প্রশ্ন: নারী অধিকার প্রতিষ্ঠায় পত্রিকাটির ভূমিকা কী ছিল ?

উত্তর: এই পত্রিকা বাল্যবিবাহ রোধ, বিধবা বিবাহ প্রচলন, নারী শিক্ষার প্রসার ও নারীর সামাজিক মর্যাদা বৃদ্ধি বিষয়ে প্রচারণা চালাতো।

আরো পড়ুনঃ

Sharing Is Caring:

Leave a Comment