দশম শ্রেণীর ছাত্র-ছাত্রীরা মাধ্যমিক ইতিহাস পরীক্ষায় success পেতে মাধ্যমিক ইতিহাস তৃতীয় অধ্যায় (প্রতিরোধ ও বিদ্রোহ: বৈশিষ্ট্য ও বিশ্লেষণ) থেকে এই গুরুত্বপূর্ণ 2 নম্বরের প্রশ্নগুলি তোমাদের অবশ্যই পড়তে হবে।
মাধ্যমিক ইতিহাস তৃতীয় অধ্যায় প্রশ্নের মান : 2
ঔপনিবেশিক অরণ্য আইন কেন প্রবর্তন করা হয়েছিল ?
ব্রিটিশ সরকারের উপনিবেশিক অরণ্য আইন প্রবর্তনের উদ্দেশ্য ছিল- 1) কাঠ ও বনজ সম্পদকে ঔপনিবেশিক স্বার্থে ব্যবহার করে মুনাফার অর্জন করা। ২) কৃষি জমির উপর অত্যাধিক পরিমাণে কর আরোপ করে রাজস্ব বৃদ্ধি করা।
অভ্যুত্থান বলতে কী বোঝো ?
কোন একটি শাসক বা সরকারের অপশাসনের বিরুদ্ধে ব্যক্তিগত বা সমষ্টিগতভাবে সংগঠিত সংগ্রামকে অভ্যুত্থান বলে। যেমন-প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর জার্মানিতে হিটলারের উত্থান।
বিদ্রোহ বলতে কী বোঝায় ?
কোন একটি নির্দিষ্ট অঞ্চলে প্রচলিত ব্যবস্থার বিরুদ্ধে কোন একজন ব্যক্তি বা জনগণের সশস্ত্র সংগ্রামকে বিদ্রোহ বলে। যেমন-সাঁওতাল বিদ্রোহ, সিপাহী বিদ্রোহ ইত্যাদি।
বিপ্লব বলতে কি বোঝ ?
বিপ্লব কথার অর্থ-আমূল পরিবর্তন। অর্থাৎ কোন প্রচলিত ব্যবস্থার দ্রুত, ব্যাপক, আমূল পরিবর্তন কে বলা হয় বিপ্লব। যেমন-ফরাসি বিপ্লব, রুশ বিপ্লব ইত্যাদি।
জঙ্গলমহল কি ?
মেদিনীপুর জেলার উত্তর-পশ্চিম অংশ, বাঁকুড়া জেলার দক্ষিণ-পশ্চিম অংশ, এবং মানভূম জেলার পূর্ব দিকের দুর্গম অরণ্য অধ্যুষিত পাহাড়ি এলাকা জঙ্গলমহল নামে পরিচিত।
‘চুয়াড়’ কাদের বলা হয় ?
‘চুয়াড়’ শব্দের অর্থ দুর্বৃত্ত বা নিজ জাতি। মূলত মেদিনীপুর, বাঁকুড়া ও মানভূম জেলার ভূমিজ আদিম অধিবাসীরা চুয়ার নামে পরিচিত।
পাইক কাদের বলা হত ?
‘চুয়াড়’ সম্প্রদায়ের মানুষ কৃষিকাজ ও পশুপালনের পাশাপাশি তারা স্থানীয় জমিদারদের অধীনে সৈনিকের কাজ করতো। এদের পাইক বলা হতো। এর পরিবর্তে তারা জমিদারদের কাছ থেকে যে নিষ্পর জমি পেত তা পাইকান নামে পরিচিত।
চুয়াড় বিদ্রোহের গুরুত্ব লেখো ।
চুয়াড় বিদ্রোহ ছিল ব্রিটিশ শাসন ও শোষণের বিরুদ্ধে ভারতের প্রথম আদিবাসী কৃষক বিদ্রোহ। এই বিদ্রোহের পর ব্রিটিশ সরকার ১৮০০ খ্রিস্টাব্দে চুয়াড়দের জন্য আলাদা ‘জঙ্গলমহল’ নামে একটি জেলা গঠন করেছ।
রংপুর বিদ্রোহ কেন হয়েছিল ?
রংপুরে খাজনার হার ছিল অত্যাধিক, এই খাজনা না দিতে পারলে কৃষকদের উপর চরম অত্যাচার করা হতো। মূলত অত্যাচারী ইজারাদার দেবী সিংহের অত্যাচারের বিরুদ্ধে ১৮৮৩ খ্রিস্টাব্দে রংপুরের কৃষকরা বিদ্রোহ করেছিল। এই সময় রংপুরের কালেক্টর ছিলেন গুডল্যান্ড।
‘দক্ষিণ-পশ্চিম সীমান্ত’ এজেন্সি কি ?
কোল বিদ্রোহের পর ব্রিটিশ সরকার উপলব্ধি করে যে, আদিবাসী এলাকায় ব্রিটিশ প্রশাসনিক আইনের পরিবর্তে আদিবাসীদের নিজস্ব নিয়ম-কানুন প্রবর্তিত হওয়া প্রয়োজন। এই জন্য সরকার ১৮৩৪ খ্রিস্টাব্দে ছোটনাগপুর অঞ্চলে উপজাতি অধ্যুষিত একটি আদিবাসী এলাকা গঠন করে যা ‘দক্ষিণ-পশ্চিম সীমান্ত এজেন্সি’ নামে পরিচিত।
‘দামিন-ই-কোহ’ কি ?
‘দামিন-ই-কোহ’ শব্দের অর্থ পাহাড়ে প্রান্ত দেশ। আদিবাসী সাঁওতালরা কোম্পানির কর্মচারী ও জমিদারদের অত্যাচারের হাত থেকে রক্ষা পেতে তাদের আদিভূমি ত্যাগ করে রাজমহলের পার্বত্য অঞ্চল ও মুর্শিদাবাদের একাংশের বনভূমি পরিষ্কার করে কৃষিকার শুরু করে। সাঁওতালরা তাদের এই নতুন অঞ্চলের নাম দেয় ‘দামিন-ই-কোহ’।
তিতুমীর স্মরণীয় কেন ?
তিতুমীর (মূল নাম সাইদ মীর নিসার আলি) বাংলার স্বাধীনতা সংগ্রামের এক বীর যোদ্ধা ছিলেন। তিনি ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে ও অত্যাচারী জমিদারদের অন্যায়ের বিরুদ্ধে সাধারণ কৃষকদের নিয়ে সংঘবদ্ধ আন্দোলন গড়ে তোলেন। তাঁর নেতৃত্বে সংগঠিত হয়েছিল বারাসাতের বিদ্রোহ বা তিতুমীরের বিদ্রোহ, যা ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আছে।
ফরাজি আন্দোলন কি ধর্মীয় পুনর্জাগরণের আন্দোলন ? অথবা ফরাজী আন্দোলন কি নিছক ধর্মীয় আন্দোলন ছিল ?
ফরাজি আন্দোলন নিছক ধর্মীয় আন্দোলন ছিল না; এটি ছিল ধর্মীয় পুনর্জাগরণের পাশাপাশি সামাজিক ও অর্থনৈতিক শোষণের বিরুদ্ধেও একটি গুরুত্বপূর্ণ আন্দোলন। উনিশ শতকের বাংলায় মুসলিম সমাজের অধঃপতন, কুসংস্কার ও সামাজিক অবক্ষয়ের বিরুদ্ধেই ছিল এর মূল লক্ষ্য। শরীয়তুল্লাহ ১৮১৮ সালে এই আন্দোলনের সূচনা করেন
দুদুমিঞা স্মরণীয় কেন ?
১৮৩৭ খ্রিস্টাব্দে শরীয়ৎ উল্লাহের মৃত্যুর পর তার পুত্র দুদুমিঞা ফরাজি আন্দোলনের নেতৃত্ব দেন। তার সুযোগ্য নেতৃত্বে ফরাজি আন্দোলন ধর্মীয় আন্দোলন থেকে সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক আন্দোলনে রূপান্তরিত হয়। তিনিই ছিলেন বাংলায় ফরাজী আন্দোলনের প্রকৃত প্রতিষ্ঠাতা ।এই জন্যই তিনি ইতিহাসের স্মরণীয় হয়ে আছে।
নীলকররা নীল চাষীদের উপর কিভাবে অত্যাচার করতো ?
নীলকররা নীল চাষীদের উপর বিভিন্নভাবে অত্যাচার করতো-1) নীল চাষীদের উপর লাঠি দিয়ে প্রহার করতো, এমনকি হত্যা করত। এই অত্যাচার থেকে তার পরিবারের লোকেরাও বাদ যেত না।২) চাষীদের গরু-বাছুর নীলকুঠিতে আটকে রাখা হতো।৩) তাদের ঘরবাড়িতে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হত, স্ত্রী-কন্যার সম্মানহানি করা হত ইত্যাদি।
কবে, কাদের মধ্যে বালাকোটের যুদ্ধ হয়েছিল ?
১৮৩১ খ্রিস্টাব্দে সৈয়দ আহমেদের সঙ্গে সের সিংয়ের বালাকোটের যুদ্ধ হয়েছিল। এই যুদ্ধে সৈয়দ আহমেদ পরাজিত ও নিহত হয়েছিলেন।
নীল বিদ্রোহে হরিশচন্দ্র মুখোপাধ্যায়ের ভূমিকা কিরূপ ছিল ?
হিন্দু পেট্রিয়ট পত্রিকা সম্পাদক হরিশচন্দ্র মুখোপাধ্যায় নীলকরদের অত্যাচারের কাহিনী নির্ভীকভাবে প্রকাশ করে নীল বিদ্রোহীদের পক্ষে জনমত গঠন করেছিলেন। তার ক্ষুরধার লেখনের ফলে ইংরেজ সরকার ১৮৬০ খ্রিস্টাব্দে নীল কমিশন গঠন করে। এছাড়া তিনি নীল চাষীদের আর্থিক সহায়তা এবং মামলা মকদ্দমা চালানোর ক্ষেত্রে আইনি সহায়তা করেছিলেন।
‘তিন কাঠিয়া’ প্রথা কি ?
১৮৬০ খ্রিস্টাব্দে নীল কমিশনের রিপোর্টের ভিত্তিতে ঠিক করা হয় যে, চাষিরা বিঘা প্রতি তিন কাঠা জমিতে নীল চাষ করতে পারবে। তার বেশি নয়। এই প্রথাক বলা হয় ‘তিন কাঠিয়া’ প্রথা।
নীল বিদ্রোহে খ্রিস্টান মিশনারীদের ভূমিকা কিরূপ ছিল ?
নীল বিদ্রোহে খ্রিস্টান মিশনারিরা নীলচাষিদের প্রতি সহানুভূতিশীল ভূমিকা পালন করেছিলেন। তারা নীলকরদের অত্যাচারের ঘটনা সংবাদপত্রে প্রকাশ করে কৃষকদের দুর্দশা সমাজের সামনে তুলে ধরেন এবং ন্যায়বিচারের দাবিতে প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। তাদের এই ভূমিকা নীলচাষিদের মনোবল বাড়াতে সহায়তা করে এবং ব্রিটিশ প্রশাসনকে নীলকরদের অত্যাচার নিয়ন্ত্রণে পদক্ষেপ নিতে উৎসাহিত করে।
বারাসাত বিদ্রোহ ব্যর্থ হল কেন ?
বারাসাত বিদ্রোহের নেতা তিতুমীর ও তার অনুগামীদের পরিকল্পনা ও আগ্নেয় অস্ত্রের অভাব ছিল। অন্যদিকে ইংরেজীদের উন্নতর রণকৌশল ও আগ্নেয়াস্ত্র ছিল। যার ফলে বারাসাত বিদ্রোহ ব্যর্থ হয়।
সাঁওতাল বিদ্রোহের(১৮৫৫-১৮৫৬) গুরুত্ব কি ?
১৮৫৫-৫৬ খ্রিস্টাব্দের সাঁওতাল বিদ্রোহ ব্যর্থ হলেও এর গুরুত্ব ছিল অনস্বীকার্য- 1) সাঁওতালরা এই বিদ্রোহ শুরু করলেও ক্রমশ এই বিদ্রোহে কামার, কুমোর, তাঁতি, ডোম, গোয়ালা প্রভৃতি হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে। 2) এই বিদ্রোহের পর সরকার সরকার সাঁওতালদের পৃথক ‘উপজাতি’ ঘোষণা করে ছোটনাগপুর অঞ্চলে তাদের জন্য সাঁওতাল পরগনা গঠন করে দেয়।
‘হেদায়তী’ নামে কারা পরিচিত ছিল ?
‘হেদায়তী’ নামে ফরাজি আন্দোলনের অনুসারীরা পরিচিত ছিল। তারা শরিয়ত মোতাবেক জীবনযাপন করতেন এবং সমাজে ধর্মীয় শুদ্ধতার প্রচার করতেন। শারীরিক ও আধ্যাত্মিক উভয় ক্ষেত্রেই ইসলামের নীতি অনুসরণ করা তাদের প্রধান লক্ষ্য ছিল।
ফরাজি আন্দোলনের ব্যর্থতার কারণ কি ?
১৮১৮-১৯০৬ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত বাংলায় ইংরেজ ও জমিদার শ্রেণীর অত্যাচারের বিরুদ্ধে গড়ে ওঠা ফরাজি আন্দোলন বিভিন্ন কারণে ব্যর্থ হয়- 1) ১৮৬২ খ্রিস্টাব্দে দুদুমিঞার মৃত্যুর পর নোয়ামিয়া নেতৃত্বে ফরাজি আন্দোলনে ধর্মের উপর অধিক গুরুত্ব আরোপ করার ফলে আন্দোলনের ভিত্তি দুর্বল হয়। 2) জমিদার, নীলকর এবং ইংলিশ সেনাবাহিনী তীব্র আক্রমণে ফরাজী আন্দোলনের ব্যর্থ হয়েছিল।
সন্ন্যাসী-ফকির বিদ্রোহ কেন ব্যর্থ হয় ?
দীর্ঘ সময় ধরে চলা সন্ন্যাসী ফকির বিদ্রোহ বিভিন্ন কারণে ব্যর্থ হয়েছিল- ১) ইংরেজ সেনাদের সঙ্গে যুদ্ধ করার জন্য সন্ন্যাসী ফকিরদের পূর্ব অভিজ্ঞতা ও যোগ্য নেতৃত্বের অভাব ছিল। ২) ইংরেজদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার মত উন্নত আগ্নেয়াস্ত্রের অভাব বিদ্রোহীদের দুর্বল করে দিয়েছিল।
মুন্ডা বিদ্রোহের লক্ষ্য কী ছিল ?
মুন্ডা বিদ্রোহের লক্ষ্য ছিল ব্রিটিশ শাসন, জমিদার ও মহাজনদের শোষণের অবসান ঘটিয়ে মুন্ডা সমাজের প্রথাগত খুঁটকাট্টি প্রথা পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা। এছাড়া জমির অধিকার পুনরুদ্ধার, করের বোঝা লাঘব এবং ব্রিটিশ প্রশাসনিক ও অর্থনৈতিক শোষণ থেকে মুক্তি পাওয়াও ছিল এই বিদ্রোহের মূল উদ্দেশ্য। সিদ্ধু কানুর নেতৃত্বে ১৮৯৯-১৯০০ খ্রিস্টাব্দে এই বিদ্রোহ সংঘটিত হয়।
‘দাদন’ প্রথা কি ?
‘দাদন’ শব্দের অর্থ অগ্রিম অর্থ। এই প্রথায় নীলকর সাহেবরা চাষীদের আগে টাকা দিয়ে নীল চাষ করতে বাধ্য করত। চাষীরা নীল চাষ ছাড়া অন্য কিছু ফসল চাষ করতে পারত না এই অর্থ শোধ করতে না পারলে চাষীদের উপর চলতো নীলকরদের চরম অত্যাচার। এই প্রথা ছিল নীল বিদ্রোহের একটি অন্যতম কারণ ।
তারিকা-ই-মোহাম্মাদিয়া কি ?
তারিকা-ই-মোহাম্মাদিয়া শব্দের অর্থ মোহাম্মদ নির্দেশিত পথ। সৈয়দ আহমেদ মুসলমান সমাজের মধ্যে থেকে সকল অনাচার ও কুসংস্কার দূর করার জন্য যে জাতীয়তাবাদী আন্দোলন শুরু করেছিলেন তা তরিকা-ই-মোহাম্মাদিয়া নামে পরিচিত।
নিজ এলাকা ও বে এলাকা কি ?
নীলকররা যখন নিজের জমিতে নীল চাষ করত তখন তাকে নিজ এলাকা বলা হতো। । আবার যখন অন্যের জমি লিজ নিয়ে নীল চাষ করত তখন তাকে বে এলাকা বলা হত।
বাঁশের কেল্লা কি ?
ওয়াহাবি আন্দোলনের নেতা তিতুমীর অত্যাচারী পড়ার জমিদার কৃষ্ণদেব রায় ও ইংরেজদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য। উত্তর ২৪ পরগনা জেলার নারকেলবেরিয়া গ্রামে বাঁশ দিয়ে একটি কেল্লা নির্মাণ করেন। যা বাঁশের কেল্লা নামে পরিচিত।
১৮৫৫ খ্রিস্টাব্দে সাঁওতাল বিদ্রোহ কেন হয়েছিল ? এই বিদ্রোহ ব্যর্থ হয়েছিল কেন ? এর সম্পূর্ণ উত্তর দেখতে Click করুন এখানে।
তথ্যসূত্রঃ
এই ব্লগের কাজ করতে itishten.blospot.com এর সাহায্য নেওয়া হয়েছে