ভূগোল

হিমবাহের ক্ষয়কার্যের ফলে সৃষ্ট ভূমিরূপ গুলির চিত্রসহ বর্ণনা

Admin

No Comments

হিমবাহের ক্ষয়কার্য পার্বত্য অঞ্চলে পাহাড়, শিলা ও উপত্যকার বিভিন্ন অংশ ক্ষয় করে নানা আকৃতির ভূমিরূপ সৃষ্টি করে।

হিমবাহ হলো পাহাড়ি অঞ্চলে জমে থাকা বরফের বিরাট স্তর, যা ধীরে ধীরে নীচের দিকে গড়িয়ে চলে। চলার পথে এই হিমবাহ পাথর, মাটি ইত্যাদি নিজের সঙ্গে টেনে নিয়ে যায় এবং ভূমিকে ক্ষয় করে নানা রকম ভূমিরূপ সৃষ্টি করে। একে হিমবাহের ক্ষয়কার্য বলা হয়।

হিমবাহের ক্ষয়কার্যের ফলে সৃষ্ট ভূমিরূপঃ

হিমবাহের ক্ষয় কার্যের ফলে যে সমস্ত ভূমিরূপ লক্ষ্য করা যায় সেগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল-

সার্ক বা করিঃ

হিমবাহের ক্ষয়কার্যের ফলে সৃষ্ট চেয়ার আকৃতির অবনত ভূমিরূপকে সার্ক বলে।

উৎপত্তিঃ

উচ্চ পার্বত্য অঞ্চলে হিমবাহের প্রভাব পথে উৎপাদন ও অবঘর্ষ প্রক্রিয়ায় পাহাড়ের খাঁজে অর্ধ গোলাকৃতি গহবর বা হাতলযুক্ত ডেক চেয়ারের ন্যায় সার্ক সৃষ্টি হয়।

সার্ককে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইংল্যান্ড, স্কটল্যান্ডে করি, ফ্রান্সে সার্ক, জার্মানিতে কার, নরওয়েতে বাটন ও কিডেল বলা হয়।

হিমবাহের ক্ষয়কার্য

বৈশিষ্ট্যঃ

  • পিছনে খাড়া দেওয়াল অবস্থিত।
  • মধ্যভাগ চামচের মত গর্ত বা অবনত।
  • তিন দিক ঘেরা ও সামনের দিক খোলা
  • অনেক সময় হিমবাহ বলে গিয়ে মাঝখানে জল জমে জমে ফাঁদে সৃষ্টি করে এগুলিকে টার্ন বা করি হ্রদ বলে।

উদাহরণঃ

আন্টার্টিকার ওয়ালকট পৃথিবীর গভীরতম সার্ক।

হিমবাহের ক্ষয়কার্য

হিমদ্রোনী বা ইউ আকৃতির উপত্যকাঃ

হিমবাহের ক্ষয় কার্যের ফলে সৃষ্ট ইউ আকৃতির হিমবাহ উপত্যকাকে হিমদ্রোনী বলে।

উৎপত্তিঃ

হিমবাহ, উপত্যকার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হওয়ার সময় অবঘর্ষ ও উৎপাটন প্রক্রিয়ায় পার্শ্বক্ষয় ও নিম্ন ক্ষয় সমান হরে করে ইংরেজি U আকৃতি বিশিষ্ট হিমদ্রোনী সৃষ্টি করে।

বৈশিষ্ট্যঃ

  • নিচের অংশ চওড়া ও সমতল হয়।
  • পাশের ঢাল গুলি খাড়া হয়।
  • অনেক সময় বরফ গলে গিয়ে হ্রদের সৃষ্টি হয়। এগুলিকে প্যাটার্ন হ্রদ বলে।

উদাহরণঃ

স্কটল্যান্ডের গ্লেন রয় একটি ক্লাসিক ইউ-আকৃতির উপত্যকা।

ঝুলন্ত উপত্যকাঃ

প্রধান হিমবাহ উপত্যকার ওপড় যখন অনেক ছোট ছোট হিমবাহ উপত্যকা ঝুলন্তভাবে অবস্থান করে তখন তাকে ঝুলন্ত উপত্যকা।

উৎপত্তিঃ

প্রধান হিমবাহের সাথে অনেক ছোট ছোট উপ হিমবাহ এসে মিলিত। ছোট হিমবাহ উপত্যকার থেকে প্রধান হিমবাহ উপত্যকা অনেক গভীর ও প্রশস্ত হয়। এরূপ অবস্থায় মনে হয় ছোট হিমবাহ উপত্যাগুলি প্রধান হিমবাহ উপত্যকার উপর ঝুলে রয়েছে।

হিমবাহের ক্ষয়কার্য

বৈশিষ্ট্যঃ

  • দেখতে উঁচুতে ঝুলন্ত বা ভাসমান উপত্যকার মত।
  • প্রায়শই এই স্থান থেকে জলপ্রপাত সৃষ্টি হয়।
  • এই উপত্যকার মধ্যে নদীর সৃষ্টি হয়।

উদাহরণঃ

হিমালয়ের বদ্রিনাথের নিকট কুবের ঝুলন্ত উপত্যকার উদাহরণ।

শুষ্ক অঞ্চলে বায়ু ও জলধারার মিলিত কার্যের ফলে সৃষ্ট ভূমিরূপ গুলির বর্ণনা দাও? সম্পূর্ণ উত্তরটি দেখতে Click করুন এখানে।

উপসংহারঃ

হিমবাহের ক্ষয়কার্যের ফলে সৃষ্ট ভূমিরূপগুলি শুধু ভূপৃষ্ঠের গঠন বুঝতেই সাহায্য করে না, বরং অতীত জলবায়ু সম্পর্কে ধারণা দিতেও সহায়ক। এই ভূমিরূপগুলি পাহাড়ি অঞ্চলে ভ্রমণকারীদের জন্য এক অসাধারণ প্রাকৃতিক দৃশ্য উপহার দেয়।

তথ্যসূত্রঃ

এই ব্লগের কাজ করতে Wikipedia এর সাহায্য নেওয়া হয়েছে।

হিমবাহের ক্ষয়কার্য থেকে কিছু গুরুত্বপূর্ণ সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন-উত্তরঃ

প্রশ্ন: রসেমতানে কি ?

উত্তর: হিমবাহের প্রবাহ পথে কোন উঁচু ঢিবি অবস্থান করলে সামনের দিক অবঘর্ষ ক্ষয়ের ফলে মসৃণ ও বিপরীত দিকে উৎপাটন ক্ষয়ের ফলে অমসৃণ হয়ে যে ভূমিরূপ তৈরি হয় তাকে রসেমতানে বলে।

প্রশ্ন: হর্ন কি ?

উত্তর: হর্ন হলো একটি পিরামিড আকৃতির তীক্ষ্ণ পর্বতশৃঙ্গ, যা চার বা ততোধিক সার্ক দ্বারা চারপাশ থেকে ক্ষয় হয়ে গঠিত হয়।

প্রশ্ন: আরেট কি ?

উত্তর: আরেট হলো দুইটি সার্কের মাঝখানে অবস্থিত সরু, উঁচু ও ধারালো পর্বতের শৃঙ্গবিশিষ্ট অংশ।

প্রশ্ন: ক্র্যাগ ও টেল কি ?

উত্তর: হিমবাহের প্রবাহ পথে কঠিন শিলার পরে কমল শিলা অবস্থান করলে কমলশিলা ক্ষয়ের হাত থেকে রক্ষা পায়। ফলে সামনে কঠিন শিলা উঁচুভাবে অবস্থান করে এবং পিছনে কমল শিলা সরু লেজের মতো অবস্থান করে। একে ক্রাগ ও টেল বলে।

প্রশ্ন: ফিয়র্ড কাকে বলে ?

উত্তর: হিমবাহের ক্ষয় কার্যের ফলে সৃষ্ট আংশিক জলপূর্ণ গিরিখাত কে ফিয়র্ড বলে।

প্রশ্ন: হিমসিঁড়ি কাকে বলে

উত্তর: অসম ক্ষয় কার্যের ফলে হিমবাহ উপত্যকায় সিঁড়ির ধাপের মতো যে ভূমিরূপ সৃষ্টি হয় তাকে হিমসিঁড়ি বলে ।

প্রশ্ন: বহিঃবিধৌত সমভূমি কাকে বলে ?

উত্তর: হিমবাহের ক্ষয় কার্যের ফলে পার্বত্য অঞ্চলে ক্ষয়প্রাপ্ত নুরি, কাঁকর, বালি ইত্যাদি হিমবাহ দ্বারা বাহিত হয়ে অনেক দূরে গিয়ে সঞ্চিত হয় যে সমভূমি সৃষ্টি করে তাকে বহিঃবিধৌত সমভূমি বলে ।

প্রশ্ন: পিরামিড চূড়া কি ?

উত্তর: পর্বত শৃঙ্গের বিভিন্ন দিক থেকে কয়েকটি ইরিটি একসঙ্গে গঠিত হয়ে মাঝখানে পিরামিডের চূড়ার মত অবস্থান করে, একে পিরামিড চূড়া বলা হয়।

আরো পড়ুনঃ

Sharing Is Caring:

Leave a Comment