ইতিহাস, দশম শ্রেণী

সংবাদপত্র রূপে ‘সোমপ্রকাশ ‘-এর গুরুত্ব বিশ্লেষণ কর

Admin

No Comments

‘সোমপ্রকাশ’ ১৯ শতকের একটি সাপ্তাহিক বাংলা পত্রিকা। পন্ডিত ইশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের প্রেরণায় ১৮৫৮ খ্রিস্টাব্দের ১৫ ই নভেম্বর পত্রিকাটি প্রকাশিত হয়।

ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের বন্ধু তথা সংস্কৃত কলেজের অধ্যাপক দ্বারকানাথ বিদ্যাভূষণ এর সম্পাদনায় পত্রিকাটি প্রকাশিত হয়। বাংলা ভাষায় প্রকাশিত প্রথম এই রাজনৈতিক পত্রিকাটি প্রতি সোমবার প্রকাশিত। তাই এর নাম হয়েছিল ‘সোমপ্রকাশ’। তারপর পরবর্তীকালে এই পত্রিকা সম্পাদনা করেন মোহনলাল বিদ্যাবাগীশ। দ্বিতীয় পর্যায়ে সম্পাদনার দায়িত্ব নিয়েছিলেন উপেন্দ্রকুমার, যিনি দ্বারকানাথ বিদ্যাভূষণের পুত্র ছিলেন।

উনিশ শতকে দ্বিতীয়ার্ধে এই পত্রিকায় গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক ঘটনাবলী প্রকাশিত হতো।

Table of Contents

সংবাদপত্র রূপে ‘সোমপ্রকাশ ‘- এর গুরুত্ব বিশ্লেষণ করঃ(M.P-2025)

ভূমিকাঃ

উনিশ শতকের বাংলায় সংবাদপত্র ও সাময়িকপত্র জাতীয় জীবনে নতুন চেতনার সঞ্চার করে। এই ধারায় অন্যতম প্রধান সংবাদপত্র ছিল ‘সোমপ্রকাশ’, যা ১৮৫৮ সালে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের সহযোগিতায় এবং দ্বারকানাথ বিদ্যাভূষণের সম্পাদনায় প্রকাশিত হয়।যা শুধু সংবাদ পরিবেশনের মাধ্যম ছিল না, বরং এই পত্রিকা সমকালীন সমাজ, রাজনীতি, অর্থনীতি এবং সংস্কারের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেছিল।

সামাজিক সংস্কারঃ

‘সোমপ্রকাশ’ বিধবা বিবাহ,কৌলিন্য প্রথা, নারীশিক্ষা, বাল্যবিবাহ নিষেধের মতো গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক সংস্কারের পক্ষে প্রগতিশীল চিন্তাধারার প্রচার চালায়। এটি বিদ্যাসাগরের চিন্তাধারার ধারক ছিল।

কৃষকদের কাহিনীঃ

এই পত্রিকায় প্রথম বাংলার কৃষকদের দুর্দশার কাহিনী জনসমক্ষে তুলে ধরা হয়। নীলকর সাহেবদের অত্যাচারে বাংলার কৃষকদের দুরবস্থা যে চরমসীমায় পৌঁছেছিল তা আমরা এই পত্রিকা থেকে জানতে পারি।

রাজনৈতিক সচেতনতাঃ

১৮৫৮ খ্রিস্টাব্দের পূর্বে শিক্ষিত বাঙালিরা তেমনভাবে রাজনীতি সম্পর্কে সচেতন ছিল না। সোমপ্রকাশ পত্রিকায় প্রথম রাজনৈতিক বিষয় নিয়ে আলোচনা শুরু করে। ভারত সভার প্রতিষ্ঠা (১৮৭৬খ্রিঃ), ভার্নাকুলার প্রেস অ্যাক্ট (১৮৭৮খ্রিঃ), ইলবার্ট বিল (১৮৮৩খ্রিঃ) ভারতের ইংরেজ শাসনের নানা দোষ ত্রুটি ও রাজনীতি বিষয়ক প্রবন্ধ ও সংবাদপত্র এই পত্রিকায় প্রকাশিত হতো।

সোমপ্রকাশ
দ্বারকানাথ বিদ্যাভূষণ

ভাষা ও সাহিত্যঃ

‘সোমপ্রকাশ’ আগেকার সাহেবি বাংলা, মৈথিলি বাংলা এবং সংস্কৃত বাংলা ভেঙে বিশুদ্ধ বাংলা ভাষা চালু করে বাংলা ভাষার বিকাশে বড় অবদান রেখেছিল। এছাড়া এই পত্রিকা সাহিত্য, সংস্কৃতি, দর্শন, বিজ্ঞান, সমাজতত্ত্ব প্রভৃতি বিষয়ও লেখালেখি করতো।

জাতীয়তাবোধের বিকাশঃ

এই পত্রিকায় প্রথম ব্রিটিশ সরকারের সীমাহীন শোষণ ও অত্যাচারের বিরুদ্ধে সরব হয়েছিল। যা পরবর্তীকালে জাতীয় আন্দোলনের পটভূমি তৈরি করতে সাহায্য করেছিল।

উপসংহারঃ

এই পত্রিকা আধুনিক ভারতের ইতিহাসচর্চার একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হিসেবে বিবেচিত হয়। এর নির্ভীক সমালোচনা এবং সহজ ভাষা এটিকে একটি আদর্শ সংবাদপত্রের উদাহরণ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে। বাংলার সমাজে যুক্তিবাদ, মানবতাবাদ ও জাতীয়তাবাদের বিকাশে এর অবদান ছিল অনস্বীকার্য।

উনিশ শতকে বাংলায় নারী সমাজের বিকাশে বামাবোধিনী পত্রিকার ভূমিকা বিশ্লেষণ কর। সম্পূর্ণ উত্তরটি দেখতে Click করুন এখানে।

তথ্যসূত্রঃ

এই ব্লগের কাজ করতে Wikipedia এর সাহায্য নেওয়া হয়েছে।

সোমপ্রকাশ পত্রিকা থেকে কিছু গুরুত্বপূর্ণ সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন উত্তরঃ

প্রশ্ন: ‘সোমপ্রকাশ ‘ কি ধরনের পত্রিকা

উত্তর: এটি ছিল বাংলা ভাষায় প্রকাশিত একটি সাপ্তাহিক পত্রিকা।

প্রশ্ন: এই পত্রিকা প্রথম কবে প্রকাশিত হয় ?

উত্তর: পন্ডিত ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের প্রেরণায় ১৮৯৮ খ্রিস্টাব্দে ১৫ ই নভেম্বর এই পত্রিকা প্রথম প্রকাশিত হয়।

প্রশ্ন: এর প্রথম সম্পাদক কে ছিলেন ?

উত্তর: এর প্রথম সম্পাদক ছিলেন-বিদ্যাসাগরের বন্ধু দ্বারকানাথ বিদ্যাভূষণ।

প্রশ্ন: সমাজ সংস্কারের ক্ষেত্রে ‘সোমপ্রকাশ’ কী ভূমিকা পালন করেছিল?

উত্তর: এই পত্রিকা বিধবা বিবাহ, নারীশিক্ষা, বাল্যবিবাহ রোধ, কৌলিন্য প্রথার মতো সামাজিক সংস্কারের পক্ষে জোরালো প্রচার চালিয়েছিল।

প্রশ্ন: এই পত্রিকা কেন বন্ধ হয়ে গিয়েছিল ?

উত্তর: লর্ড লিটনের ‘সংবাদপত্র নিয়ন্ত্রণ আইন’ বা ‘ভার্নাকুলার প্রেস অ্যাক্টে’র (১৮৭৮ খ্রিস্টাব্দ) বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করায় ব্রিটিশ সরকার পত্রিকাটি বন্ধ করে দিয়েছিল।

প্রশ্ন: বাংলার কৃষকদের দুঃখ-দুর্দশা সম্পর্কে ‘সোমপ্রকাশ’ কী বলেছিল ?

উত্তর: এই পত্রিকায় প্রথম বাংলার কৃষকদের উপর নীলকর সাহেবদের অত্যাচার ও দুর্দশার চিত্র তুলে ধরা হয়।

প্রশ্ন: ‘সোমপ্রকাশ’ কীভাবে রাজনৈতিক সচেতনতা বাড়াতে সাহায্য করেছিল?

উত্তর: এটি ভারতসভা, ভার্নাকুলার প্রেস অ্যাক্ট, ইলবার্ট বিলের মতো রাজনৈতিক বিষয় নিয়ে প্রথম আলোচনা শুরু করে এবং জনগণের মধ্যে সচেতনতা গড়ে তোলে।

প্রশ্ন: ‘সোমপ্রকাশ’ বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের ক্ষেত্রে কী অবদান রেখেছে?

উত্তর: এটি সাহেবি বাংলা বা সংস্কৃত নির্ভর ভাষার পরিবর্তে বিশুদ্ধ, সরল বাংলা চালু করে এবং সাহিত্যের বিভিন্ন শাখায় লেখালেখির মাধ্যমে ভাষার বিকাশ ঘটায়।

প্রশ্ন: ‘সোমপ্রকাশ’ পত্রিকাটি কেন ইতিহাসচর্চার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ?

উত্তর: কারণ এটি উনিশ শতকের সমাজ, রাজনীতি ও সংস্কারের প্রামাণ্য দলিল হিসেবে কাজ করে। যুক্তিবাদ, মানবতাবাদ ও জাতীয়তাবাদের বিকাশে এর ভূমিকা অনস্বীকার্য।

প্রশ্ন: যুক্তিবাদ ও যুক্তিনিষ্ঠতায় এই পত্রিকার ভূমিকা কি ?

উত্তর: এই সংবাদপত্র কুসংস্কার ও ধর্মীয় গোঁড়ামির বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে যুক্তির পক্ষে সওয়াল করত। ধর্মীয় রক্ষণশীলতার বিরুদ্ধেও এর ভূমিকা ছিল স্পষ্ট।

আরও পড়ুনঃ

Sharing Is Caring:

Leave a Comment