ইতিহাস, দশম শ্রেণী

নীল বিদ্রোহের প্রতি শিক্ষিত বাঙালি সমাজের ভূমিকা কীরূপ ছিল ?

Admin

No Comments

১৮৫৯ সালে সংঘটিত নীল বিদ্রোহের প্রতি শিক্ষিত বাঙালি সমাজ সরাসরি অংশগ্রহণ করেনি। তবে তারা বিভিন্ন উপায়ে বিদ্রোহীদের সমর্থন করেছিল।

নীল চাষীদের ওপর নীলকর সাহেবদের অমানবিক অত্যাচার ও নির্মম শোষণের বিরুদ্ধে ১৮৫৯ সালে নদীয়া জেলার কৃষ্ণনগরের চৌগাছা গ্রামে বিষ্ণুচরণ বিশ্বাস ও দিগম্বর বিশ্বাসের নেতৃত্বে নীল বিদ্রোহ শুরু হয়েছিল। নীল বিদ্রোহের প্রতি শিক্ষিত বাঙালি সমাজের ভূমিকা ।

Table of Contents

নীল বিদ্রোহের প্রতি শিক্ষিত বাঙালি সমাজের ভূমিকাঃ(M.P-2025)

ভূমিকাঃ

১৮৫৯-৬০ খ্রিস্টাব্দে বাংলার গ্রামাঞ্চলে ঘটে যাওয়া নীলবিদ্রোহ ছিল কৃষকদের স্বতঃস্ফূর্ত প্রতিবাদের এক গৌরবময় অধ্যায়। ব্রিটিশ নীলকরদের শোষণ ও অত্যাচারের বিরুদ্ধে কৃষকেরা প্রথম সংঘবদ্ধভাবে রুখে দাঁড়িয়েছিল। তবে এই বিদ্রোহ শুধু একটি গ্রামীণ আন্দোলন হিসেবে সীমাবদ্ধ ছিল না। সমাজের শিক্ষিত বাঙালি মধ্যবিত্ত সম্প্রদায় এটির প্রতি যে সংবেদনশীলতা এবং সমর্থন দেখিয়েছিল, তা ইতিহাসে এক গুরুত্বপূর্ণ দৃষ্টান্ত।

সহানুভূতি প্রদর্শনঃ

শিক্ষিত বাঙালিরা কৃষকদের উপর ইংরেজ নীলকরদের নিষ্ঠুরতা দেখে ক্ষুব্ধ হন এবং বিদ্রোহীদের প্রতি সহানুভূতি প্রকাশ করেন। তারা মনে করতেন যে কৃষকদের প্রতি এই অবিচার সমাজের প্রতি এক বড় ধরনের অন্যায়।

পত্র-পত্রিকায় প্রতিবাদঃ

বহু শিক্ষিত বাঙালি সাংবাদিক ও লেখক বিভিন্ন সংবাদপত্রে প্রতিবেদন ও নিবন্ধ লিখে কৃষকদের দুর্দশার কথা জনসমক্ষে তুলে ধরেন। ১৮২২ খ্রিস্টাব্দে নীলকর সাহেবদের নির্মম অত্যাচারের কাহিনী সর্বপ্রথম প্রকাশিত হয় ‘সমাচার দর্পণ’ ও ‘সমাচার চন্দ্রিকা’ পত্রিকায়। ১৮৪৯ খ্রিস্টাব্দে অক্ষয় কুমার দত্ত ‘তত্ত্ববোধিনী পত্রিকায়’ এ বিষয়ে বিশদ আলোচনা করেন। হিন্দু প্যাট্রিয়ট পত্রিকার সম্পাদক হরিশচন্দ্র মুখোপাধ্যায় এ বিষয়ে বলিষ্ঠ ভূমিকা নেন। তাঁর লেখনীতে উঠে আসে কৃষকদের জীবনযন্ত্রণা, নীলকরদের নিপীড়নের নৃশংস চিত্র এবং প্রশাসনের নিস্ক্রিয়তা। সংবাদপত্রের এই লেখাগুলি বাঙালি সমাজে সহানুভূতির জোয়ার তোলে এবং ব্রিটিশ প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

নাটক ও সাহিত্যে প্রতিবিম্বঃ

দীনবন্ধু মিত্র রচিত নাটক “নীল দর্পণ” ছিল নীল বিদ্রোহের প্রতি শিক্ষিত বাঙালি সমাজের প্রতিক্রিয়া এবং কৃষকদের দুর্দশার বাস্তব চিত্র। এই নাটকে কৃষক জীবনের নির্মম বাস্তবতা ও নীলকরদের নিষ্ঠুরতা স্পষ্টভাবে উপস্থাপিত হয়। যা সমাজকে আন্দোলিত করে এবং ব্রিটিশদেরও বিব্রত করে তোলে।

নীল বিদ্রোহের প্রতি শিক্ষিত বাঙালি সমাজ
দীনবন্ধু মিত্র

আইনজীবীদের অবদানঃ

কিছু শিক্ষিত আইনজীবী বিনা পারিশ্রমিকে চাষিদের পক্ষে মামলা লড়েছিলেন। শম্ভুনাথ পণ্ডিত এবং প্রসন্নকুমার ঠাকুর এই ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করেন।

প্রশাসনিক তদন্তে সহযোগিতাঃ

বাঙালি শিক্ষিত সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি ও চাপের ফলেই ব্রিটিশ সরকার ১৮৬০ সালে নীল কমিশন গঠন করতে বাধ্য হয়। এই কমিশনে অনেক বাঙালি সাক্ষ্য দিয়ে কৃষকদের পক্ষে জবানবন্দি দেন, যা নীলকরদের বিরুদ্ধে শক্তিশালী প্রমাণ উপস্থাপন করে।

উপসংহারঃ

নীল বিদ্রোহ ছিল বাংলার কৃষক সমাজের এক বিশাল আত্মপ্রকাশ, আর শিক্ষিত বাঙালি সমাজ সেই প্রতিবাদে তাঁদের কলম ও বিবেক দিয়ে এক দৃঢ় সহযোদ্ধার ভূমিকা পালন করে। তাঁদের লেখনী ও সমালোচনার মাধ্যমেই নীলকরদের দুঃশাসনের পর্দা সরে গিয়েছিল এবং ভবিষ্যতের কৃষক ও জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের ভিত্তি নির্মাণ করেছিল।

নীল বিদ্রোহে সংবাদপত্রের ভূমিকা বিশ্লেষণ কর। সম্পূর্ণ উত্তরটি দেখতে Click করুন এখানে।

তথ্যসূত্রঃ

এই ব্লগের কাজ করতে Wikipedia এর সাহায্য নেওয়া হয়েছে।

নীল বিদ্রোহ ও শিক্ষিত বাঙালি মধ্যবিত্ত সমাজের ভূমিকা থেকে। কিছু গুরুত্বপূর্ণ সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন-উত্তরঃ

প্রশ্ন: নীল বিদ্রোহ কখন ও কোথায় শুরু হয়েছিল ?

উত্তর: ১৮৫৯ সালে নদীয়া জেলার কৃষ্ণনগরের চৌগাছা গ্রামে বিষ্ণুচরণ বিশ্বাস ও দিগম্বর বিশ্বাসের নেতৃত্বে নীল বিদ্রোহ শুরু হয়।

প্রশ্ন: শিক্ষিত বাঙালি সমাজ সরাসরি নীলবিদ্রোহে অংশগ্রহণ করেছিল কি ?

উত্তর: না, তারা সরাসরি অংশগ্রহণ করেনি, তবে বিভিন্ন উপায়ে বিদ্রোহীদের প্রতি সহানুভূতি ও সমর্থন জানিয়েছিল।

প্রশ্ন: সংবাদপত্রে এই বিদ্রোহ নিয়ে কে প্রথম প্রতিবেদন প্রকাশ করেন ?

উত্তর: সমাচার দর্পণ’ ও ‘সমাচার চন্দ্রিকা’ পত্রিকায় প্রথম নীল বিদ্রোহ ও নীলকরদের অত্যাচার সম্পর্কে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।

প্রশ্ন: ‘তত্ত্ববোধিনী পত্রিকা’-য় কে নীলবিদ্রোহ নিয়ে বিশ্লেষণ করেন ?

উত্তর: অক্ষয় কুমার দত্ত ১৮৪৯ সালে ‘তত্ত্ববোধিনী পত্রিকা’-য় নীল বিদ্রোহ সম্পর্কে বিশদ আলোচনা করেন।

প্রশ্ন: হরিশচন্দ্র মুখোপাধ্যায় কীভাবে নীল বিদ্রোহে অবদান রেখেছিলেন ?

উত্তর: হরিশচন্দ্র মুখোপাধ্যায় ‘হিন্দু প্যাট্রিয়ট’ পত্রিকায় ধারাবাহিকভাবে লেখনী দ্বারা কৃষকদের দুর্দশা ও নীলকরদের অত্যাচার তুলে ধরেন এবং প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তার সমালোচনা করেন।

প্রশ্ন: নীল দর্পণ’ নাটকটি কে রচনা করেন এবং এর গুরুত্ব কী ?

উত্তর: দীনবন্ধু মিত্র রচিত ‘নীল দর্পণ’ নাটকটি নীল বিদ্রোহের বাস্তবতা ও কৃষকের দুঃখ দুর্দশার প্রতিচ্ছবি তুলে ধরে। এটি শিক্ষিত সমাজে ব্যাপক প্রভাব ফেলে।

প্রশ্ন: কোন আইনজীবীরা কৃষকদের পক্ষে নিঃস্বার্থে লড়েছেন ?

উত্তর: শম্ভুনাথ পণ্ডিত ও প্রসন্নকুমার ঠাকুর বিনা পারিশ্রমিকে কৃষকদের পক্ষে মামলা লড়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।

প্রশ্ন: ব্রিটিশ সরকার কবে ও কেন নীল কমিশন গঠন করে ?

উত্তর: ১৮৬০ সালে ব্রিটিশ সরকার কৃষকদের অভিযোগ তদন্তের জন্য নীল কমিশন গঠন করে।

প্রশ্ন: শিক্ষিত বাঙালির সহানুভূতি কীভাবে ব্রিটিশ প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করে ?

উত্তর: শিক্ষিত বাঙালিরা সংবাদপত্র, নাটক ও সাহিত্যের মাধ্যমে বিদ্রোহীদের প্রতি সহানুভূতি প্রকাশ করে এবং কৃষকদের বাস্তব অবস্থা তুলে ধরেন, যার ফলে প্রশাসন নীল কমিশন গঠনে বাধ্য হয়।

প্রশ্ন: নীল বিদ্রোহ ও শিক্ষিত বাঙালির ভূমিকা ইতিহাসে কেন গুরুত্বপূর্ণ ?

উত্তর: এটি ছিল প্রথম কৃষক বিদ্রোহ, যাতে শিক্ষিত বাঙালিরা কলম ও বিবেক দিয়ে পাশে দাঁড়ান। ভবিষ্যতের জাতীয় আন্দোলনের বীজ রোপণেও এর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল।

আরও পড়ুনঃ

Sharing Is Caring:

Leave a Comment