‘ভারতমাতা'(বঙ্গমাতা) চিত্রটি ভারতের বিখ্যাত কবি ও চিত্রশিল্পী অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর ১৯০৫ খ্রিস্টাব্দে স্বদেশী আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে অঙ্কন করেন।
১৯০৫ খ্রিস্টাব্দে বঙ্গভঙ্গ বিরোধী স্বদেশী আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে আধুনিক ভারতীয় চিত্রকলার জনক অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর বঙ্গমাতা চিত্রটি অঙ্কন করেন। পরে ভগিনী নিবেদিতার অনুরোধ তিনি এই ছবিটির নাম রাখেন ‘ভারতমাতা‘। এই চিত্রটি ছিল এক সাধারণ নারী গেরুয়া পোশাক পরিহিতা। তার চারটি হাতে একটিতে আছে সাদা কাপড়, যা তাঁত বস্ত্রের প্রতীক। অপর হাতে রয়েছে পুঁথি,, যা জ্ঞান বা শিক্ষার প্রতীক। আরেকটি হাতে রয়েছে ধানের শীষ, যা অন্নের প্রতীক। অন্য হাতে রয়েছে কোন কণ্ঠীমালা, যা সাধনা বা ধ্যানের প্রতীক। স্বদেশী আন্দোলনের মূল স্বদেশী ভাবনা ছিল এই ভারত মাতা চিত্র। ভারতের নব জাগ্রত জাতীয়তাবাদ এবং বঙ্গভঙ্গ বিরোধী স্বদেশী আন্দোলনই ছিল ভারত মাতা অংকনের অনুপ্রেরণা।
উনিশ শতকের জাতীয়তাবাদের বিকাশে ‘ভারতমাতা’ চিত্রটির অবদান কি ছিল ?
ভূমিকাঃ
১৯০৫ সালে ব্রিটিশ শাসক লর্ড কার্জন বঙ্গভঙ্গ ঘোষণা করেন। এর প্রতিবাদে সারা বাংলায় আন্দোলন শুরু হয়। তারই আবেগঘন বহিঃপ্রকাশ হল অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘ভারতমাতা’ চিত্র অঙ্কন। যা জাতীয়তাবাদী চেতনা জাগিয়ে তুলতে এবং ভারতকে একটি মাতৃরূপে কল্পনা করার মাধ্যমে সাধারণ মানুষের মনে দেশপ্রেম জাগাতে বিশেষ ভূমিকা পালন করেছিল।
জাতীয় পরিচয়ের প্রতীকঃ
ভারতমাতা চিত্রটি ভারতকে মাতৃরূপে কল্পনা করে। যে মাতৃশক্তি গেরুয়া বস্ত্র পরিহিতা চতুর্ভূজা। যার চারটি হাতে ছিল তাঁত বস্ত্র, ধানের শীষ, পুঁথি, এবং কণ্ঠীমালা। যেগুলি স্বদেশী ভাবনার প্রতীক। যা জনমানসে এক আবেগঘন জাতীয় ঐক্যের অনুভূতি সৃষ্টি করে। এটি মানুষকে দেশের প্রতি এক মাতৃস্নেহের মতো ভালোবাসা ও আত্মত্যাগে উদ্বুদ্ধ করে।
ধর্মনিরপেক্ষ জাতীয়তাবাদকে উৎসবঃ
চিত্রটিতে ভারতমাতাকে সাধারণত সনাতন রূপে দেখানো হলেও, তার পিছনে ছিল ভারতবাসীর এক অভিন্ন সাংস্কৃতিক ও ঐতিহাসিক পরিচয় গঠনের প্রচেষ্টা—যা হিন্দু, মুসলমান, খ্রিস্টান নির্বিশেষে সবাইকে দেশের জন্য ঐক্যবদ্ধ হতে আহ্বান জানায়।

ব্রিটিশ বিরোধিতার প্রতীকঃ
ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ও স্বরাজের আহ্বানে এই চিত্রটি এক প্রতীকী অস্ত্র হয়ে ওঠে। ভারত মাতা যেন পরাধীন ভারতের মুক্তির আহ্বান জানাচ্ছেন, এমন ধারণা জনমনে গেঁথে যায়।
বিপ্লবী ও স্বাধীনতা সংগ্রামীদের প্রেরণাঃ
বিপ্লবী সংগঠনগুলোর কাছে ভারতমাতা ছিলেন- সন্তানের প্রতি মায়ের অভয় শক্তি ও স্বদেশিয়ান। তাই তাঁরা ভারতমাতার মুক্তির জন্য নিজেদের জীবন উৎসর্গ করতেন। এই ভাবনাটি জাতীয়তাবাদকে আরও দৃঢ় করে।
উপসংহারঃ
উনিশ শতকের জাতীয়তাবাদের বিকাশে ভারতমাতা চিত্রটি কেবলমাত্র একটি শিল্পকর্ম ছিল না—এটি একটি সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক প্রতীক, যা জাতীয় ঐক্য, আত্মত্যাগ ও স্বাধীনতার অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে ওঠে।
টিকা-মহারানী ভিক্টোরিয়ার ঘোষণাপত্র। সম্পূর্ণ উত্তর দেখতে Click করুন এখানে।
তথ্যসূত্রঃ
এই ব্লগের কাজ করতে Wikipedia এর সাহায্য নেওয়া হয়েছে।
ভারতমাতা চিত্র থেকে কিছু গুরুত্বপূর্ণ সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তরঃ
প্রশ্ন: ভারতমাতা চিত্রটি কে অঙ্কন করেছিলেন ?
উত্তর: ভারত মাতা চিত্রটি ভারতের বিখ্যাত কবি ও চিত্রশিল্পী অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর ১৯০৫ খ্রিস্টাব্দে অঙ্কন করেন।
প্রশ্ন: ভারতমাতা চিত্রটি কিসের প্রেক্ষাপটে আঁকা হয়েছিল ?
উত্তর: ১৯০৫ সালের বঙ্গভঙ্গ বিরোধী স্বদেশী আন্দোলনের আবেগঘন প্রেক্ষাপটে চিত্রটি অঙ্কন করা হয়।
প্রশ্ন: ভারত মাতা চিত্রটির নাম ‘ভারতমাতা’ কে রেখেছিলেন ?
উত্তর: ভগিনী নিবেদিতার অনুরোধে অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর এই চিত্রটির নাম রাখেন ‘ভারতমাতা’।
প্রশ্ন: ভারত মাতা চিত্রে মাতৃমূর্তির কী কী বৈশিষ্ট্য আছে ?
উত্তর: চিত্রটিতে মাতৃমূর্তিকে গেরুয়া বস্ত্র পরিহিতা, চতুর্ভূজা রূপে দেখানো হয়েছে। তাঁর হাতে ছিল তাঁত বস্ত্র, ধানের শীষ, পুঁথি, ও কণ্ঠীমালা।
প্রশ্ন: এই চিত্রটি জাতীয়তাবাদের বিকাশে কীভাবে ভূমিকা রাখে ?
উত্তর: এটি ভারতবাসীর মনে ভারতকে মাতৃরূপে কল্পনা করে গভীর আবেগ, আত্মত্যাগ ও দেশপ্রেম জাগিয়ে তোলে, যা জাতীয়তাবাদকে শক্তিশালী করে।
প্রশ্ন: ভারত মাতা চিত্রটি ধর্মনিরপেক্ষ জাতীয়তাবাদের প্রতীক কীভাবে ?
উত্তর: চিত্রটি সব ধর্মের মানুষকে এক অভিন্ন জাতীয় পরিচয়ে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানায়, যা ধর্মনিরপেক্ষ চেতনা গঠনে সহায়তা করে।
প্রশ্ন: স্বদেশী ভাবনার প্রতীক হিসেবে চিত্রটিতে কী চিহ্নগুলি ছিল ?
উত্তর: তাঁত বস্ত্র (স্বদেশী শিল্প), ধানের শীষ (উৎপাদনশীলতা), পুঁথি (জ্ঞান), ও কণ্ঠীমালা (আধ্যাত্মিকতা) – এ সবই স্বদেশী ভাবনার প্রতীক।
প্রশ্ন: এই চিত্র বিপ্লবীদের জন্য কী গুরুত্ব বহন করত ?
উত্তর: বিপ্লবীদের কাছে ভারত মাতা ছিলেন আত্মত্যাগ ও দেশমাতৃকার মুক্তির প্রেরণা, যার জন্য তাঁরা জীবন উৎসর্গ করতেও প্রস্তুত ছিলেন।
প্রশ্ন: ‘ভারত মাতা’ চিত্রটি কোন আন্দোলনের সঙ্গে বিশেষভাবে যুক্ত ?
উত্তর: এটি ১৯০৫ সালের বঙ্গভঙ্গ বিরোধী স্বদেশী আন্দোলনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত।
প্রশ্ন: ভারত মাতা চিত্রটি কীভাবে একটি রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক প্রতীক হয়ে ওঠে ?
উত্তর: এটি কেবল চিত্রকর্ম নয়, বরং ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে আত্মত্যাগ, ঐক্য ও মাতৃভূমির প্রতি প্রেমের এক শক্তিশালী প্রতীক হয়ে ওঠে।





