ইতিহাস, দশম শ্রেণী

হুতোম প্যাঁচার নকশা গ্রন্থে-উনিশ শতকের বাংলার সমাজ চিত্র(M.P-2018)

Admin

No Comments

দশম শ্রেণীর (মাধ্যমিক) ছাত্র-ছাত্রীদের ইতিহাসের দ্বিতীয় অধ্যায় ‘ সংস্কার বৈশিষ্ট্য ও পর্যালোচনা’ থেকে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন – হুতোম প্যাঁচার নকশা গ্রন্থ থেকে উনিশ শতকের বাংলার কি ধরনের সমাজ চিত্র পাওয়া যায় তা লেখ

কালীপ্রসন্ন সিংহ (১৮৪০ – ১৮৭0 খ্রিস্টাব্দে) রচিত ‘হুতোম প্যাঁচার নকশা’ বাংলা ভাষায় লেখা প্রথম সামাজিক ব্যঙ্গ সাহিত্য। ১৮৬২ খ্রিস্টাব্দে এর প্রথম ভাগ প্রকাশিত হয় এবং ১৮৬৪ খ্রিস্টাব্দে প্রথম ও দ্বিতীয় ভাগ একত্রে প্রকাশিত হয়।

এই গ্রন্থে হুতুম পেঁচা ছিলেন কালীপ্রসন্ন নিজেই। হুতুম পেঁচা ছিল তার ছদ্মনাম। কালিপ্রসন্ন এই গ্রন্থে কলকাতা নাগরিক সমাজের অন্ধকারে দিকগুলি তুলে ধরেছে। তদানীন্তন সমাজের অনাচার,দ্বিচারিত, ভন্ডামি, জাল জোচ্চুর, সামাজিক শৈথিল্য সবকিছুই তিনি সুন্দরভাবে বর্ণনা করেছেন এই গ্রন্থে।

Table of Contents

হুতোম প্যাঁচার নকশা গ্রন্থ থেকে উনিশ শতকের বাংলার সমাজ চিত্র – মান ৪

ভূমিকাঃ

উনিশ শতকের বাংলার সমাজ চিত্রকে বোঝার জন্য কালিপ্রসন্ন সিংহের লেখা’হুতোম প্যাঁচার নকশা” অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই গ্রন্থে লেখক উনিশ শতকের শহর কলকাতা ও তৎকালীন সমাজের বিভিন্ন দিককে ব্যঙ্গাত্মক এবং কৌতুকপূর্ণ ভাষায় উপস্থাপন করেছেন। এই গ্রন্থের মাধ্যমে আমরা তৎকালীন বাংলার সমাজের নানা দিক সম্পর্কে জানতে পারি।

বাবু সংস্কৃতি:

উনিশ শতকে পাশ্চাত্য শিক্ষার আলোকে কলকাতায় হঠাৎ ফুলেফেঁপে ওঠা ধনী নব্য বাবুদের সামাজিক অবক্ষয় কে ‘হুতুম প্যাঁচার নকশা’ গ্রন্থে সুন্দরভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে।এরা পশ্চিমা পোশাক, খাদ্যাভ্যাস ও বিলাসবহুল জীবনযাপনে অভ্যস্ত ছিল। সামাজিক অবস্থান প্রদর্শনের জন্য এরা বিলাসবহুল বৈঠকখানা ও নাচগানের আসর বসাত।

সামাজিক শ্রেণীবিভাগ:

কালিপ্রসন্ন সিংহ তার গ্রন্থে সমকালীন কলকাতা বাসীদের তিনটি শ্রেণীতে বিভক্ত করেছেন। যথা:

  1. ইংরেজি শিক্ষিত এবং সাহেরী চালচলনের অন্ধ অনুসরণকারী।
  2. ইংরেজি শিক্ষিত নব্যপন্থী, যারা সাহেরী চালচলনের অন্ধ অনুসরণকারী নয়।
  3. ইংরেজি না জানা গোরা হিন্দু সমাজ।

কালীপ্রসন্ন সিংহের মতে, এরা প্রত্যকেই জাল জোচ্চুরি ও ফন্দিফিকির করে প্রচুর অর্থ উপার্জন করতো।

হুতোম
হুতোম প্যাঁচার নকশা গ্রন্থ

কলকাতার সামাজিক উৎসব:

কালীপ্রসন্ন সিংহ রচিত ‘হুতোম প্যাঁচার নকশায়” তদানীন্তন কলকাতার সামাজিক জীবনের ছবি ফুটে উঠেছে। গ্রন্থটির প্রথম ভাগে আলোচিত হয়েছে কলকাতার চড়ক পার্বণ, বারোয়ারি পুজো, মহাপুরুষ, নানা সাহেব ,ছেলে ধরা, হঠাৎ অবতার, ভূত নাবানো, মাহেশের স্নানযাত্রা ইত্যাদি।

গ্রন্থটির দ্বিতীয় ভাগে দুর্গোৎসব, রথ, রামলীলা এবং রেলওয়ে প্রভৃতি উৎসবগুলির সুন্দর বর্ণনা আছে সুন্দর বর্ণনা আছে।

সামাজিক সংস্কার:

এই গ্রন্থে কালীপ্রসন্ন সিংহ তৎকালীন সমাজের বিভিন্ন কুসংস্কার, যেমন: বাল্যবিবাহ, বহুবিবাহ, সতীদাহ প্রথা প্রভৃতির কথা উল্লেখ করেছেন। এই সামাজিক ব্যাধি গুলির বিরুদ্ধে রাজা রামমোহন রায়, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর প্রমুখ সোচ্চার হয়েছিলেন তাও তিনি বিনম্র শ্রদ্ধার সাথে উল্লেখ করেছেন।

নারী অবস্থা:

উনিশ শতকের বাংলায় নারীদের অবস্থা ছিল শোচনীয়। তারা গৃহবন্দী অবস্থায় জীবন কাটাত এবং শিক্ষার সুযোগ থেকে বঞ্চিত থাকত। স্ত্রীশিক্ষার প্রসার এবং নারী স্বাধীনতার অভাব ছিল সমাজের একটি বড় সমস্যা। এই সমস্যার কথা কাজী প্রসন্ন সিংহ তার গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন।

উপসংহারঃ

এইভাবে, হুতোম প্যাঁচার নকশা গ্রন্থের মাধ্যমে উনিশ শতকের বাংলার সমাজের কুসংস্কার, বিলাসবহুল জীবনযাপন, নারী অবস্থা, এবং শিক্ষার প্রসার সম্পর্কে একটি সুস্পষ্ট ধারণা পাওয়া যায়।

আরো অন্যান্য বিষয়গুলি দেখতে নিচের দেওয়া লিংকে ক্লিক করুন

নারী ইতিহাসের উপর টীকা লেখ (M.P 2017

মাধ্যমিক ভূগোল সাজেশন।Madhyamik Geography Suggestion 2025।

মাধ্যমিক ইতিহাস সাজেশন।Madhyamik History Suggestion 2025।

তথ্যসূত্রঃ

এই ব্লগ লিখতে উইকিপিডিয়ার সাহায্য নিয়েছে।

‘ভারতের ইতিহাস ও পরিবেশ চর্চা’ – শচীন্দ্রনাথ মন্ডল (দশম শ্রেণী) ।

‘ ইতিহাস ও পরিবেশ চর্চা’ – সমর কুমার মল্লিক ও প্রশান্ত দত্ত (দশম শ্রেণী)।

*কিছু উল্লেখযোগ্য তথ্যসমূহ:

Q. ‘হুতোম প্যাঁচার নকশায়’ কোন কোন ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট তুলে ধরা হয়েছে ?

Ans: নীল বিদ্রোহ, সিপাহী বিদ্রোহ ইত্যাদি।

Q. ‘হুতোম প্যাঁচার নকশা’ গ্রন্থটির পৃষ্ঠা সংখ্যা কটি ?

Ans: ১৪০ টি ।

Q.’হুতোম প্যাঁচার নকশা’ গ্রন্থটি কে রচনা করেছিলেন ?

Ans: কালীপ্রসন্ন সিংহ ১৮৬২ সালে এই গ্রন্থটি রচনা করেন।

Q. এই গ্রন্থে উনিশ শতকের কলকাতার ‘বাবু সংস্কৃতি’ কেমনভাবে বর্ণিত হয়েছে?

Ans: পশ্চিমা পোশাক, খাদ্যাভ্যাস এবং বিলাসবহুল জীবনযাপনে অভ্যস্ত ধনী নব্য বাবুদের জীবনবোধ ফুটে উঠেছে।

Q. হুতোম প্যাঁচার প্রকৃত নাম কি ?

Ans: কালীপ্রসন্ন সিংহ।

Q.কোন কোন সামাজিক উৎসব ‘হুতোম প্যাঁচার নকশায়’ আলোচিত হয়েছে ?

Ans: চড়ক, বারোয়ারি পুজো, মহাপুরুষ, দুর্গোৎসব, রথযাত্রা, রামলীলা প্রভৃতি উৎসবগুলির কথা বলা হয়েছে।

Q. হুতোম প্যাঁচা কার ছদ্মনাম ছিল ?

Ans: কালীপ্রসন্ন সিংহের।

Q.কালীপ্রসন্ন সিংহের লেখনীতে কোন ধরনের দিক তুলে ধরা হয়েছে?

Ans: সমাজের অনাচার, দ্বিচারিতা, ভণ্ডামি, এবং সামাজিক শৈথিল্য ব্যঙ্গাত্মকভাবে তুলে ধরা হয়েছে।

Q.নকশা বলতে কি বোঝায় ?

Ans: নকশা বলতে বোঝায় সেই জাতীয় লেখা যা ব্যঙ্গধর্মী বা বিদ্রুপাত্মক এবং সমাজের কোনও অংশের সমালোচনামূলক।

Q.কালীপ্রসন্ন সিংহ সমাজকে কিভাবে শ্রেণীবিভাগ করেছেন ?

Ans: তিনটি শ্রেণীতে বিভক্ত: ইংরেজি শিক্ষিত সাহেবি আদব-কায়দা অনুসরণকারী, নব্যপন্থী ইংরেজি শিক্ষিতরা, এবং ইংরেজি না জানা গোরা হিন্দু সমাজ।

Sharing Is Caring:

Leave a Comment