ইতিহাস, দশম শ্রেণী

19 শতকে নারী শিক্ষা বিস্তারে ড্রিঙ্কওয়াটার বেথুনের ভূমিকা

Admin

No Comments

19 শতকে নারী শিক্ষা বিস্তারে ড্রিঙ্কওয়াটার বেথুন-এর ভূমিকা একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন দশম শ্রেণীর (মাধ্যমিক) ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য। প্রশ্নটি আলোচনা করা হলো।

জন এলিয়ট ড্রিঙ্কওয়াটার বেথুন(12th Jul 1801 – 12th Aug 1851) ছিলেন একজন শিক্ষাবিদ, গণিতবিদ এবং বহুভাষী – যিনি ভারতে নারী শিক্ষা প্রচারের জন্য বিখ্যাত। তিনি ইংল্যান্ডে একজন আইনজীবী হিসাবে পেশাগত জীবন শুরু করেছিলেন এবং গভর্নর জেনারেলের মন্ত্রী পরিষদের আইন সদস্য হিসাবে নিয়োগ পেয়ে ভারতে এসেছিলেন। ১৯৪৮ সালে তিনি ভারতের সুপ্রিম কাউন্সিলের সদস্য হিসেবে নিযুক্ত হয়েছিলেন এবং পরবর্তীকালে শিক্ষা পরিষদের সভাপতি নিযুক্ত হয়েছিলেন।তিনি কলকাতায় ‘কলকাতা ফিমেল স্কুলে’র (বর্তমানে বেথুন কলেজ নামে পরিচিত) প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন।

Table of Contents

নারী শিক্ষা বিস্তারে ড্রিঙ্কওয়াটার বেথুনের ভূমিকা

ভূমিকা:

ভারতে নারী শিক্ষা বিস্তারে যে সমস্ত বিদেশি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিলেন, তাদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন স্কটল্যান্ডের ঘড়ি ব্যবসায়ী ড্রিঙ্কওয়াটার বেথুন। মাত্র তিন বছর (১৮৪৮ – ১৮৫১ খ্রিস্টাব্দ)।এদেশে অবস্থান করে নারী শিক্ষায় অভূতপূর্ব উদ্যোগ গ্রহণ করে তিনি স্মরণীয় হয়ে আছেন।

নারী শিক্ষায় উদ্যোগ গ্রহণ

১৮৪৮ খ্রিস্টাব্দে লর্ড ডালহৌসীর সময়ে আইন মন্ত্রী রূপে বেথুন সাহেব ভারতে এসে ‘কাউন্সিল অফ এডুকেশন’ এর সভাপতি হয়ে দক্ষিণারঞ্জন মুখার্জি, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, মদন মোহন তর্কালঙ্কার, রাধাকান্ত দেব প্রমুখ ব্যক্তিদের সঙ্গে আলোচনা করে নারী শিক্ষার গুরুত্বের বিষয়টি তুলে ধরেছিলেন।

বেথুন স্কুল প্রতিষ্ঠা

বেথুন কয়েকজন প্রখ্যাত ভারতীয় ব্যক্তি সহায়তায় ২১ জন ছাত্রীকে নিয়ে ১৮৪৯ খ্রিস্টাব্দের ৭ই মে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন ‘কলকাতা ফিমেল স্কুল’ যা পরবর্তীকালে বেথুন নামে স্কুল পরিচিতি পেয়েছে। এটি ছিল ভারতের প্রথম মহিলা বিদ্যালয়। এছাড়া এটি এশিয়ার প্রাচীনতম মহিলা কলেজ হিসেবেও বিবেচিত হয়।

ড্রিঙ্কওয়াটার বেথুন
Bethune College

বেথুন স্কুলের পৃষ্ঠপোষকতা

১৮৫০ খ্রিস্টাব্দে পন্ডিত ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর এই স্কুলের সম্পাদক নিযুক্ত হয়েছিলেন। রাধাকান্তদেবের মত রক্ষণশীল ব্যক্তি ও এই বিদ্যালয়ের দেখভালের দায়িত্ব গ্রহণ করেছিলেন। শুধু তাই নয়, আর্থিক কারণে বিদ্যালয়টি যাতে আগামীতে বন্ধ হয়ে না যায় সেই জন্য বেথুন তার মৃত্যুর পূর্বে (১৮৫১ খ্রিস্টাব্দে) সমস্ত অস্থাবর সম্পত্তি বেথুন স্কুল কে দান করে যান। এমনকি, লর্ড ডালহৌসিও তার ব্যক্তিগত তহবিল থেকে এই বিদ্যালয়ের জন্য অর্থ মঞ্জুর করেছিলেন।

নারী শিক্ষা জনমত গঠন

বেথুন স্কুল প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি তিনি নারী শিক্ষায় জনমত গঠনে জোর দিয়েছিলেন। এ জন্য তিনি নিজে উদ্যোগে রামমোহনের ‘স্ত্রী শিক্ষা বিষয়ক’ বইটির একটি সংস্করণ ছেপে প্রচার করেছিলেন। এ ছাড়া তিনি ‘ফিমেল জুভেনাইল সোসাইটি’ কেও নানাভাবে সাহায্য করেছিলেন।

ধর্মনিরপেক্ষ আদর্শ

বেথুন সাহেব নারী শিক্ষাকে ধর্মীয় ছোঁয়া থেকে দূরে রেখেছিলেন। তিনি কখনোই মিশনারিদের পথে বেথুন স্কুলকে পরিচালিত হতে দেননি। রাধাকান্তদেরকে আশ্বস্ত করেছিলেন যে, ‘স্ত্রী শিক্ষায় কখনোই খ্রিস্টধর্মের প্রচার করা হবে না’

ভারতের প্রথম মহিলা স্নাতক এর কারিগর

ড্রিঙ্কওয়াটার বেথুন প্রতিষ্ঠিত বেথুন স্কুল ১৮৭৮ খ্রিস্টাব্দে বেথুন কলেজ এ পরিণত হয়। যার প্রথম মহিলা স্নাতক ছিলেন কাদম্বিনী গাঙ্গুলী ও চন্দ্রমুখী বসু। এরা শুধু বেথুন কলেজের প্রথম মহিলা স্নাতক ছিলেন না, এরা ছিলেন ভারতের প্রথম মহিলা স্নাতক।

উপসংহার

নারী শিক্ষা বিস্তারে বেথুনের অবদান মূল্যায়ন করতে গিয়ে আমাদের মনে রাখতে হবে, বেথুন স্কুল প্রতিষ্ঠার আগে ভারতে কোন নারী শিক্ষার বিদ্যালয় গড়ে ওঠেনি। বেথুন সাহেবই সর্বপ্রথম নারী শিক্ষায় উদ্যোগী হয়ে সরকারি কোনরকম সহায়তার জন্য অপেক্ষা না করে নিজে উদ্যোগে বেতন ফুল তৈরি করেছিল। তিনি সরকারের শিক্ষা সচিব হিসেবে নারী শিক্ষার প্রতি আলাদা গুরুত্ব দিয়েছিলেন। যে কারণে আজও ভারতের ইতিহাসে তিনি শ্রদ্ধার আসনে আছেন।

2025 মাধ্যমিক ইতিহাস সাজেশনটি দেখতে Click করুন এখানে

তথ্যসূত্র

এই ব্লগের কাজ করতে Wikipedia এর সাহায্য নিয়েছে।

ড্রিঙ্কওয়াটার বেথুনের ভূমিকা সংক্রান্ত দশটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন – উত্তর

প্রশ্ন: জন এলিয়ট ড্রিঙ্কওয়াটার বেথুন কে ছিলেন?

উত্তর: ড্রিঙ্কওয়াটার বেথুন ছিলেন একজন শিক্ষাবিদ, গণিতবিদ এবং ভারতে নারী শিক্ষার প্রসারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখা একজন বহুভাষী ব্যক্তি। তিনি বেথুন কলেজের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন।

প্রশ্ন: ড্রিঙ্কওয়াটার বেথুনের ভারত আগমনের কারণ কী ছিল?

উত্তর: বেথুন ভারতে আসেন ১৮৪৮ সালে, গভর্নর জেনারেলের মন্ত্রী পরিষদের আইন সদস্য হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার পর। তিনি নারী শিক্ষার প্রসারে উদ্যোগ নেন।

প্রশ্ন: বেথুন কেন ভারতের নারী শিক্ষায় এতটা গুরুত্বপূর্ণ?

উত্তর: ড্রিঙ্কওয়াটার বেথুন ভারতের প্রথম নারী বিদ্যালয় ‘কলকাতা ফিমেল স্কুল’ (বর্তমানে বেথুন কলেজ) প্রতিষ্ঠা করেন, যা ভারতীয় নারীদের শিক্ষায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করে।

প্রশ্ন: বেথুন স্কুল প্রতিষ্ঠা হয়েছিল কবে?

উত্তর: ১৮৪৯ সালের ৭ই মে বেথুন কলকাতায় ‘কলকাতা ফিমেল স্কুল’ প্রতিষ্ঠা করেন, যা পরে বেথুন স্কুল ও কলেজ নামে পরিচিতি পায়।

প্রশ্ন: বেথুন স্কুলের প্রথম দাতা ও সমর্থক কারা ছিলেন?

উত্তর: পন্ডিত ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর ও রাধাকান্ত দেব ছিলেন বেথুন স্কুলের প্রথম দাতা ও সমর্থক। তারা বেথুনের নারী শিক্ষা উদ্যোগকে আর্থিক এবং নৈতিকভাবে সমর্থন করেছিলেন।

প্রশ্ন: বেথুনের মৃত্যুর পরে তার সম্পত্তি কী হয়েছিল?

উত্তর: বেথুন তার মৃত্যুর আগে বেথুন স্কুলকে সমস্ত অস্থাবর সম্পত্তি দান করে যান, যাতে বিদ্যালয়টি অর্থের অভাবে বন্ধ না হয়ে যায়।

প্রশ্ন:বেথুন নারী শিক্ষায় ধর্মীয় নিরপেক্ষতা কীভাবে বজায় রেখেছিলেন?

উত্তর: বেথুন সাহেব নারী শিক্ষায় কখনো খ্রিস্টধর্মের প্রচার হতে দেননি এবং শিক্ষাকে ধর্মীয় প্রভাব থেকে মুক্ত রাখতে সচেষ্ট ছিলেন। তিনি নারী শিক্ষায় ধর্মনিরপেক্ষ আদর্শ বজায় রেখেছিলেন।

প্রশ্ন: ভারতের প্রথম মহিলা স্নাতক কারা ছিলেন?

উত্তর: বেথুন স্কুল থেকে বেথুন কলেজে উন্নীত হওয়ার পর, ভারতের প্রথম মহিলা স্নাতক কাদম্বিনী গাঙ্গুলী ও চন্দ্রমুখী বসু ছিলেন।

প্রশ্ন: বেথুনের নারী শিক্ষা প্রচার নিয়ে কী বিশেষ উদাহরণ রয়েছে?

উত্তর: বেথুন নিজ উদ্যোগে রামমোহন রায়ের ‘স্ত্রী শিক্ষা বিষয়ক’ বইয়ের একটি সংস্করণ প্রচার করেন, যা নারীদের শিক্ষার গুরুত্ব বোঝাতে সাহায্য করেছিল।

প্রশ্ন: বেথুন স্কুল প্রতিষ্ঠার পেছনের মূল উদ্দেশ্য কী ছিল?

উত্তর: বেথুনের মূল উদ্দেশ্য ছিল ভারতীয় নারীদের মধ্যে শিক্ষার আলো পৌঁছে দেওয়া এবং নারী শিক্ষার প্রসার ঘটানো। তিনি নারী শিক্ষার প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছিলেন।

আরো পড়ুন:

Sharing Is Caring:

Leave a Comment