দশম শ্রেণীর ছাত্র-ছাত্রীরা ইতিহাস পরীক্ষায় success পেতে মাধ্যমিক ইতিহাস দ্বিতীয় অধ্যায় (সংস্কার: বৈশিষ্ট্য ও পর্যালোচনা) থেকে এই গুরুত্বপূর্ণ 2 নম্বরের প্রশ্নগুলি তোমাদের অবশ্যই পড়তে হবে।
মাধ্যমিক ইতিহাস দ্বিতীয় অধ্যায় প্রশ্নের মান : 2
বামাবোধিনী পত্রিকার মূল উদ্দেশ্য কি ছিল?
বামাবোধিনী পত্রিকার মূল উদ্দেশ্য ছিল- নারী শিক্ষার বিস্তার ঘটানো, সমাজে নারীকে পুরুষের সমমর্যাদায় প্রতিষ্ঠা করা এবং বাল্যবিবাহ ও অসামবিবাহের বিরোধিতা করা।
উনিশ শতকের সমাজে হিন্দু প্যাট্রিয়ট পত্রিকার গুরুত্ব কি ছিল?
- একমাত্র হিন্দু প্যাট্রিয়ট পত্রিকা থেকে ১৯ শতকের শিক্ষিত বাঙালি মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি ও মানসিকতার পরিচয় পাওয়া যায়।
- এটি ছিল ভারতের একমাত্র পত্রিকা, যে পত্রিকা আদিবাসী সাঁওতাল বিদ্রোহ কে সমর্থন করেছিল।
- জমিদারদের অত্যাচারের বিরুদ্ধে এই পত্রিকার সোচ্চার হয়েছিল।
- বাংলার মধ্যে একমাত্র হিন্দু প্যাট্রিয়ট পত্রিকা ১৮৫৭ সালের মহাবিদ্রোহ কে কিছুটা হলেও সমর্থন করেছিল।
‘হুতোম প্যাঁচার নকশায়’ কলকাতার বাবু সংস্কৃতির কি পরিচয় পাওয়া যায়?
‘হুতোম প্যাঁচার নকশায়’ উনিশ শতকের কলকাতার বাবু সংস্কৃতির কিছু পরিচয় পাওয়া যায়। । এরা ছিল ইংরেজি জানা উচ্চ মধ্যবিত্ত। এরা বিলাস বৈভবে জীবন কাটাত। বুলবুলি পুষে, আর বিড়ালের বিবাহ দিয়ে অজস্র অর্থের অপচয় করত। তাদের পোশাকে থাকতো ইঙ্গ-বঙ্গীয় ছাপ।
‘নীলদর্পণ’ নাটকে কৃষকদের দুরবস্থা সম্পর্কে কোন চিত্র তুলে ধরা হয়েছে?
‘নীল দর্পণ’ নাটকে কৃষকদের করুন অবস্থা তুলে ধরা হয়েছিল। জানাজায় বাংলার চাষীরা নীলকর সাহেবদের
অত্যাচারের ভয়ে জমিতে নীল চাষ করতে বাধ্য হত। নীলকর সাহেবের জোর করে তাদের দাদন দিত। নীল চাষ না করলে চাষীদের বাড়ি-ঘর আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেয়া হতো। গরু-ছাগল কেড়ে নেয়া হতো। রেহাই পেতো না স্ত্রী- পুত্ররাও। নীলকুঠিতে নিয়ে গিয়ে তাদের উপর অকথ্য নির্যাতন চালানো হতো।
কাকে, কেন কাঙাল হরিনাথ বলা হতো?
গ্রামবার্তা প্রকাশিকা পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন হরিনাথ মজুমদার ওরফে কাঙাল হরিনাথ। তিনি শৈশবে অনাথ হয়ে গিয়েছিলেন এবং আজন্ম তাকে দারিদ্র্যের সঙ্গে কঠোর সংগ্রাম করতে হয়েছিল বলে তাকে কাঙাল হরিনাথ বলা হতো বলা হত।
মেকলে মিনিট কি?
১৮৩৫ খ্রিস্টাব্দের ২রা ফেব্রুয়ারি গভর্নর-জেনারেলের পরিষদীয় আইন সদস্য লর্ড মেকলে ভারতে পাশ্চাত্য শিক্ষা বিস্তারে সরকারি অর্থ ব্যয়ের জন্য যে প্রসিদ্ধ স্মারকলিপি বড়লাট লর্ড বেন্টিং এর কাছে পেশ করেন তা ‘মেকলে মিনিট’ নামে পরিচিত।
‘চঁুইয়ে পড়া নীতি’ কি?
ইংরেজ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ভারতে পাশ্চাত্য শিক্ষা প্রসারের জন্য ‘চঁুইয়ে পড়া নীতি’ প্রণয়ন করে। লর্ড উইলিয়াম বেন্টিং চেয়েছিলেন, পাশ্চাত্য শিক্ষা সমাজের উপর তোলায় ছড়িয়ে দিলে নিচের তলায়ও সেই শিক্ষা চুরিয়ে পড়বে। এই নীতি শিক্ষা ক্ষেত্রে ‘চঁুইয়ে পড়া নীতি’ নামে পরিচিত।
এ দেশে পাশ্চাত্য শিক্ষা বিস্তারে খ্রিস্টান মিশনারীদের প্রধান উদ্দেশ্য কি ছিল?
- এ দেশের খ্রিস্ট ধর্মের প্রচার করা।
- আধুনিক বিজ্ঞান শিক্ষা প্রদান করা।
‘শ্রীরামপুর ত্রয়ী’ কাদের বলা হয়?
মার্শম্যান, উইলিয়াম ওয়ার্ড এবং উইলিয়াম কেরি এই তিন খ্রিস্টান মিশনারীকে একত্রে ‘শ্রীরামপুর ত্রয়ী’ বলা হয়।
লর্ড হার্ডিঞ্জ-এর শিক্ষা বিষয়ক নির্দেশনামার গুরুত্ব কি ছিল?
- ভারতে পাশ্চাত্য শিক্ষা বিস্তারের লক্ষ্য নিয়ে ১৮৪২ সালে ‘কাউন্সিল অফ এডুকেশন’ গঠিত হয়। এই পরিপ্রেক্ষিতে বড়লাট হার্ডিঞ্জ ১৮৪৪ সালে ঘোষণা করেন যে, সরকারি চাকরিতে ইংরেজি ভাষা জানা ব্যক্তিদের অগ্রাধিকার দেওয়া হবে।
- লর্ড হার্ডিঞ্জের এই ঘোষণাকে সামনে রেখে’ বোর্ড অফ কন্ট্রোল’ এর সভাপতি চার্লস উড ১৮৫৪ সালের ১৯শে জুলাই শিক্ষা বিষয়ে একটি প্রতিবেদন পেশ করেন, যার ভিত্তিতে ভারতে পাশ্চাত্য শিক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তোলার চেষ্টা শুরু হয়।
- বস্তুত, হার্ডিঞ্জের ঘোষণা ভারতীয়দের মধ্যে পাশ্চাত্য শিক্ষা গ্রহণের বিষয়ে উৎসাহ বাড়িয়ে দেয়। এবং এই পটভূমিতে উডের ড্রেস অনুসারে ১৮৫৭ সালে কলকাতা, বোম্বাই ও মাদ্রাজে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠিত হয়।
‘স্কুল বুক সোসাইটি’ কেন প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল?
ডেভিড হেয়ারের উদ্যোগে ১৮১৭ খ্রিস্টাব্দে কলকাতায় ‘ স্কুল বুক সোসাইটি’ প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এর উদ্দেশ্য গুলি হল-
- ইংরেজি ও বাংলা ভাষায় পুস্তক রচনা করা, প্রকাশ করা এবং দরিদ্র শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিনামূল্যে তা বিতরণ করা।
- স্কুল বুক সোসাইটির’ উদ্যোগে ১৮২৫ খ্রিস্টাব্দে পৃথিবীর মানচিত্র বাংলা ভাষায় প্রকাশিত হয়েছিল।
- অবৈতনিক ইংরেজি ও বাংলা মাধ্যমের স্কুলগুলি ‘স্কুল বুক সোসাইটির’ তত্ত্বাবধানেই ছিল।
মধুসূদন গুপ্ত কে ছিলেন ও স্মরণীয় কেন?
হুগলি জেলার বৈদ্যবাটির মধুসূদন গুপ্ত সামাজিক কুসংস্কার লঙ্ঘন করে ১৮৩৬ খ্রিস্টাব্দে কলকাতা মেডিকেল কলেজে প্রথম শব ব্যবচ্ছেদ করেছিলেন। তিনি প্রথম ভারতীয় শব ব্যবচ্ছেদকারী ছিলেন এই জন্য স্মরণীয় হয়ে আছেন।
কাদম্বিনী (বসু) গঙ্গোপাধ্যায় স্মরণীয় কেন?
কাদম্বিনী গঙ্গোপাধ্যায় ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে আছেন। কারণ-
- তিনি ছিলেন ব্রিটিশ ভারতে প্রথম দুজন নারী স্নাতক এর একজন।
- ইউরোপীয় চিকিৎসা শাস্ত্রে শিক্ষিত দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম নারী চিকিৎসক ছিলেন এই কাদম্বিনী গঙ্গোপাধ্যায়।
- ১৮৮৯ খ্রিস্টাব্দে কংগ্রেসের পঞ্চম অধিবেশনে বোম্বে শহরে প্রথম যে ৬ জন নারী প্রতিনিধি নির্বাচিত হয়েছিল তাদের মধ্যে একজন ছিলেন কাদম্বিনী গঙ্গোপাধ্যায়।
- ১৮১৪ খ্রিস্টাব্দে তিনি কলকাতায় সাধারণ ব্রাহ্মসমাজের অধিবেশনের সভাপতি দায়িত্ব পালন করেছিলেন।
শিক্ষা বিস্তারে প্রাচ্যবাদী ও পাশ্চাত্যবাদী বিতর্ক কি?
১৮১৩ খ্রিস্টাব্দের চার্টার অ্যাক্ট অনুযায়ী ইংল্যান্ডের পার্লামেন্ট ভারতবর্ষের শিক্ষা বিস্তারের জন্য বাহ্যিক ১ লক্ষ টাকা ব্যয়ের সুপারিশ করে। কিন্তু এই টাকা কোন খাতে ব্যয় করা হবে তা সুদ নির্দিষ্ট না থাকায় গভীর বিতর্ক দেখা দেয়
- উইলসন, প্রিন্সেপ, কোলব্রুক প্রমুখ প্রাচ্য শিক্ষা বিস্তারে সরকারি অর্থব্যয়ের দাবি জানান এরা ‘প্রাচ্যবাদী’ বা ‘অরিয়েন্টালিস্ট’ নামে পরিচিত।
- অন্যদিকে মেকলে, ডাফ, রামমোহন রায় প্রমুখ পাশ্চাত্য শিক্ষার জোরালো দাবি তোলেন। এরা ‘পাশ্চাত্যবাদী’ বা ‘অ্যাংলিসিস্ট’ নামে পরিচিত।
নববিধান কি?
কেশব চন্দ্র সেন ১৮৮০ খ্রিস্টাব্দে ভারতবর্ষে ব্রাহ্মসমাজের বাহিরে বিজয় কৃষ্ণ গোস্বামী সহযোগিতায় ‘নববিধান’ গঠন করেন। তার এই ব্রাহ্মসমাজ ‘নববিধান ব্রাহ্মসমাজ’ নামে পরিচিতি লাভ করে।
ভারতবর্ষে ব্রাহ্মসমাজ বিভক্ত হলো কেন?
১৮৬৬ খ্রিস্টাব্দে কেশবচন্দ্র সেন ও তার অনুগামীরা ব্রাহ্মসমাজ থেকে বহিষ্কৃত হয়ে ‘ভারতবর্ষীয় ব্রাহ্মসমাজ’ প্রতিষ্ঠা করেন। পরে কেশবচন্দ্রের খ্রিস্টধর্মের অনুকরণে প্রার্থনা করা ও ইংরেজি প্রীতি, যিশুবাদ ও চৈতন্যবাদ সংমিশ্রণ, নিজেকে ঈশ্বরের অবতার বলে অভিহিত করা, নারীদের উচ্চ শিক্ষার বিরোধিতা করা এবং হিন্দু আচার-অনুষ্ঠান ও দেব দেবীর বিরোধিতা করায় তরুণ সদস্যদের সঙ্গে মতবিরোধ শুরু হয়। ফলে আনন্দমোহন বসু, শিবনাথ শাস্ত্রী, দুর্গা মোহন দাস, দ্বারকানাথ গঙ্গোপাধ্যায় প্রমুখ ‘ভারতবর্ষীয় ব্রাহ্মসমাজ’ থেকে বেরিয়ে এসে ১৮৭৮ খ্রিস্টাব্দের ১৫ ই মে সাধারণ ব্রাহ্মসমাজ প্রতিষ্ঠা করেন।
সমাজ সংস্কারে নব্যবঙ্গদের ভূমিকা কেমন ছিল?
সমাজ সংস্কারে নব্যবঙ্গদের ভূমিকা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য-
- ইয়ং বেঙ্গল বা ডিরোজিও পন্থীরা চেয়েছিল আর্থসামাজিক ও রাষ্ট্রীয় জীবনে যেসব ভন্ডামি ও লোক দেখানো নিয়মকানুন ছিল সেগুলোর অবসান ঘটাতে।
- এরা জাতিভেদ,অস্পৃশ্যতা,বাল্যবিবাহ, বহুবিবাহ, সতীদাহ প্রথা কে সমূলে বিনাশ করার আদর্শ গ্রহণ করেছিল।
- এছাড়া সংবাদপত্রে স্বাধীনতা, নারী শিক্ষা, নারী স্বাধীনতা প্রভৃতির স্বপক্ষে এরা আন্দোলন চালিয়ে সমাজে যুক্তিবাদের প্রসার ঘটিয়েছিল।
ডিরোজিওকে মনে রাখা হয় কেন?
বাংলায় নববঙ্গ আন্দোলনের জনক ছিলেন হেনরি লুইস ভিভিয়ান ডিরোজিও। তিনি চেয়েছিলেন শিক্ষার প্রসার ঘটিয়ে ভারতের হিন্দু সমাজ ও ধর্মের কুসংস্কার গুলি দূর করতে এবং ভারতীয়দের জাতীয়তা বোধের উদ্বুদ্ধ করেত।
ইয়ং বেঙ্গল বা হার্ডিঞ্জ গোষ্ঠী কাদের বলা হত
হিন্দু কলেজে তরুণ শিক্ষক হেনরি লুইস ভিভিয়ান ডিরোজিওর ছাত্র-ছাত্রীদের ও তার অনুগামীদের একত্রে নব্যবঙ্গ গোষ্ঠী বলা হত
তিন আইন কি?
কেশবচন্দ্র সেনের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় ও সহযোগিতায় বিডি সরকার ১৮৭২ খ্রিস্টাব্দে সংস্কার মূলক ‘তিন আইন’ পাশ করে। এই আইন দ্বারা ভারতে হিন্দু সমাজে বাল্যবিবাহ ও বহুবিবাহ নিষিদ্ধ হয় এবং অসবর্ণ বিবাহ আইনসিদ্ধ হয়।
বাংলার নবজাগরণ বলতে কী বোঝো?
উনিশ শতকে পাশ্চাত্য শিক্ষা-সংস্কৃতির প্রভাবে বাংলা তথা ভারতের মধ্যযুগীয় কুসংস্কার ও সংকীর্ণ মানসিকতার পরিবর্তে যুক্তিবাদ, মানবতাবাদ, ব্যক্তিসাতন্ত্রবাদ প্রভৃতির ওপর ভিত্তি করে ধর্ম, সমাজ, শিক্ষা, অর্থনীতি, সংস্কৃতি প্রভৃতি সকল ক্ষেত্রে যে সংস্কার আন্দোলনের সূচনা হয়, তাকে ইউরোপীয় রেনেসাঁসের সাথে তুলনা করে বেশিরভাগ ঐতিহাসিক ‘ বাংলার নবজাগরণ’ আখ্যা দিয়েছেন।
উচ্চ শিক্ষার বিকাশে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূমিকাঃ প্রশ্নের উত্তরটি দেখতে Click করুন এখানে।
তথ্যসূত্র:
এই ব্লগের কাজ করতে SKGUIDEBANGLA ওয়েবসাইটের সাহায্য নেয়া হয়েছে।