১৯০৬ সালে প্রতিষ্ঠিত বেঙ্গল টেকনিক্যাল ইনস্টিটিউট বাংলায় কারিগরি শিক্ষার অগ্রগতিতে এক যুগান্তকারী ভূমিকা পালন করে।
তারকনাথ পলিত ও রাশবিহারী ঘোষের নেতৃত্বে এটি প্রতিষ্ঠিত হয়, যার লক্ষ্য ছিল তরুণ প্রজন্মকে আধুনিক কারিগরি দক্ষতায় প্রশিক্ষিত করা। এটি ব্রিটিশ শাসনের সময় শিল্প বিকাশ ও স্বনির্ভরতার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। পরবর্তীতে এটি যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরিত হয়ে কারিগরি শিক্ষার উৎকর্ষ সাধন করে।
কারিগরি শিক্ষার বিকাশে ‘বেঙ্গল টেকনিক্যাল ইনস্টিটিউট ‘ এর ভূমিকা।
ভূমিকাঃ
১৯০৬ সালে বাংলায় কারিগরি শিক্ষার প্রসারে প্রতিষ্ঠিত ‘বেঙ্গল টেকনিক্যাল ইনস্টিটিউট’ দেশীয় শিল্প ও কর্মসংস্থান বৃদ্ধির লক্ষ্যে এক গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগ নিয়ে ছিল। তারকনাথ পলিত ও রাশবিহারী ঘোষের নেতৃত্বে এটি স্বদেশি আন্দোলনের অংশ হিসেবে আত্মনির্ভরশীল জাতি গঠনের লক্ষ্য নিয়ে কাজ শুরু করে। ১৯২৮ খ্রিস্টাব্দে ‘বেঙ্গল টেকনিক্যাল ইনস্টিটিউট’ এর নতুন নামকরণ হয় ‘কলেজ অফ ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড টেকনোলজি’।
পরিচালন মন্ডলঃ
প্রতিষ্ঠানটির পরিচালনায় ছিলেন বাংলার তৎকালীন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও সমাজসেবীগণ। তারকনাথ পলিত ছিলেন প্রতিষ্ঠার মূল ব্যক্তিত্ব। প্রমথনাথ বসু ছিলেন এই প্রতিষ্ঠানের প্রথম অধ্যক্ষ। নীলরতন সরকার ছিলেন প্রথম সম্পাদক। রাশবিহারী ঘোষ, জগদীশচন্দ্র বসু, ব্রজেন্দ্রনাথ শীল, প্রফুল্লচন্দ্র রায়সহ অন্যান্য নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিত্ব এই প্রতিষ্ঠানের উপদেষ্টা মন্ডলীতে ছিলেন
পাঠ্যক্রমঃ
পাঠক্রমের তিনটি প্রধান বিষয় ছিল-যন্ত্রবিজ্ঞান ও বৈদ্যুতিক যন্ত্রবিজ্ঞান, ফলিত রসায়ন এবং ভূবিদ্যা। এছাড়া এখানে প্রকৌশল, যন্ত্রবিদ্যা, বিল্ডিং কন্সট্রাকশন, এবং অন্যান্য কারিগরি বিষয়ে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হতো। তত্ত্ব এবং ব্যবহারিক শিক্ষার সমন্বয়ে শিক্ষার্থীদের দক্ষ করে তোলা হয়।
বিভিন্ন বিষয় ও বিশিষ্ট শিক্ষকগঃ
এই প্রতিষ্ঠানটিতে কলা বিভাগের পাশাপাশি পদার্থবিদ্যা, রসায়ন, প্রযুক্তি, শিল্প ইত্যাদি বিভিন্ন বিষয়ে শিক্ষাদানের ব্যবস্থা করা হয়। ১৯২১ খ্রিস্টাব্দে এই প্রতিষ্ঠানে কেমিকাল ইঞ্জিনিয়ারিং সংক্রান্ত শিক্ষার সূচনা হয়। প্রমথনাথ বসু, শরৎ দত্ত, প্রফুল্ল মিত্র, নিবারণ রায়, যোগেশ ঘোষ, প্রফুল্লচন্দ্র রায়, অক্ষয়কুমার মৈত্র প্রমুখ খ্যাতনামা শিক্ষকগণ এই প্রতিষ্ঠানের মান বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন।
বিশিষ্ট দাতাগণঃ
বেঙ্গল টেকনিক্যাল ইনস্টিটিউটের স্থাপনা ও উন্নয়নে বিশিষ্ট দাতাগণ যেমন তারকনাথ পলিত, মহারাজা মানিন্দ্র চন্দ্র নন্দী, রাসবিহারী ঘোষ, আশুতোষ চৌধুরী, ব্যোমকেশ চক্রবর্তী আর্থিক সহায়তা প্রদান করেন। তাঁদের অবদানের জন্য প্রতিষ্ঠানটি আরও পরিপুষ্ট হয়ে ওঠে।
নতুন কর্মকেন্দ্রঃ
পরবর্তীতে বেঙ্গল টেকনিক্যাল ইনস্টিটিউট বিভিন্ন শাখায় কার্যক্রম শুরু করে। ১৯৫৫ সালে এটি যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরিত হয়, যা কারিগরি শিক্ষার ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক মান অর্জন করে।
সমন্বয়ঃ
১৯১০ খ্রিস্টাব্দে ‘বেঙ্গল টেকনিক্যাল ইনস্টিটিউট’ ও ‘বেঙ্গল ন্যাশনাল কলেজ’ একসঙ্গে মিশে যায়। ১৯২৮ খ্রিস্টাব্দে এর নাম হয় ‘কলেজ অফ ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড টেকনোলজি‘।এটি প্রযুক্তি ও বিজ্ঞানের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের কর্মমুখী করে তোলে।
বর্তমান পরিচিতিঃ
ভারত স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৫৫ খ্রিস্টাব্দে এটি যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় নামে পরিচিত লাভ করে।
উপসংহারঃ
উপনিবেশিক শিক্ষার পুতুল গড়ার কল ভেঙ্গে প্রকৃত মানুষ গড়ার শপথ নিয়েছিল এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও এর সঙ্গে যুক্ত শিক্ষাব্রতীরা। মনে রাখতে হবে, এক্ষেত্রে উদ্যোগ ছিল সম্পূর্ণ দেশীয়। এটি শুধু একটি প্রতিষ্ঠান নয়, বরং শিক্ষার ইতিহাসে একটি যুগান্তকারী অধ্যায়।
ছাপা বইয়ের সঙ্গে শিক্ষা বিস্তারের সম্পর্ক বিশ্লেষণ করঃ সম্পূর্ণ উত্তরটি Click করুন এখানে।
তথ্যসূত্রঃ
এই ব্লগের কাজ করতে Quora এর সাহায্য নেওয়া হয়েছে।
বেঙ্গল টেকনিক্যাল ইনস্টিটিউট থেকে কিছু গুরুত্বপূর্ণ সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন-উত্তরঃ
প্রশ্ন: বেঙ্গল টেকনিক্যাল ইনস্টিটিউট কে প্রতিষ্ঠা করেন?
উত্তর: তারকনাথ পলিত এবং রাশবিহারী ঘোষ।
প্রশ্ন: বেঙ্গল টেকনিক্যাল ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্য কি ছিল?
উত্তর: এই প্রতিষ্ঠানের উদ্দেশ্য ছিল স্বদেশি আন্দোলনের অংশ হিসেবে তরুণ প্রজন্মকে আধুনিক কারিগরি দক্ষতায় প্রশিক্ষিত করা এবং দেশীয় শিল্পের উন্নয়ন ঘটানো।
প্রশ্ন: বেঙ্গল টেকনিক্যাল ইনস্টিটিউটের বর্তমান নাম কি?
উত্তর: বর্তমানে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় নামে পরিচিত, যা কারিগরি শিক্ষার উৎকর্ষ সাধনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
প্রশ্ন: বেঙ্গল টেকনিক্যাল ইনস্টিটিউটের প্রথম অধ্যক্ষ কে ছিলেন?
উত্তর: প্রথম অধ্যক্ষ ছিলেন প্রমথনাথ বসু।
প্রশ্ন: বেঙ্গল টেকনিক্যাল ইনস্টিটিউট কবে প্রতিষ্ঠিত হয়?
উত্তর: ১৯০৬ সালে বাংলায় কারিগরি শিক্ষার প্রসারে প্রতিষ্ঠিত হয়।
প্রশ্ন: এই প্রতিষ্ঠানের তিনটি প্রধান পাঠ্যক্রম কী কী ছিল?
উত্তর: এর তিনটি প্রধান পাঠ্যক্রম ছিল যন্ত্রবিজ্ঞান ও বৈদ্যুতিক যন্ত্রবিজ্ঞান, খনিজ রসায়ন, এবং ভূবিদ্যা।
প্রশ্ন: কারা এই প্রতিষ্ঠানকে আর্থিক সহায়তা প্রদান করেছিলেন?
উত্তর: তারকনাথ পলিত, রাসবিহারী ঘোষ, মহারাজা মানিন্দ্র চন্দ্র নন্দী, আশুতোষ চৌধুরী, এবং ব্যোমকেশ চক্রবর্তী এই প্রতিষ্ঠানে আর্থিক সহায়তা প্রদান করেন।
প্রশ্ন: BTI এর প্রথম সম্পাদক কে ছিলেন
উত্তর: এই প্রতিষ্ঠানের প্রথম সম্পাদক ছিলেন নীলরতন সরকার।
প্রশ্ন: BTI কোন আন্দোলনের সাথে যুক্ত ছিল?
উত্তর: স্বদেশি আন্দোলন।
প্রশ্ন: BTI বাংলার শিক্ষার ইতিহাসে কী ভূমিকা রেখেছে?
উত্তর: BTI বাংলার কারিগরি শিক্ষার অগ্রগতিতে এক যুগান্তকারী ভূমিকা পালন করেছে। এটি দেশীয় শিল্প বিকাশ ও স্বনির্ভরতার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।