ইতিহাস, দশম শ্রেণী

ধর্ম সংস্কার আন্দোলন রূপে ব্রাহ্ম আন্দোলনের মূল্যায়ন

Admin

No Comments

দশম শ্রেণীর (মাধ্যমিক) ছাত্র-ছাত্রীদের ইতিহাসের দ্বিতীয় অধ্যায়ঃ সংস্কার, বৈশিষ্ট্য ও পর্যালোচনা থেকে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন ধর্ম সংস্কার আন্দোলন রূপে ব্রাহ্ম আন্দোলনের মূল্যায়ন কর।

Table of Contents

ধর্ম সংস্কার আন্দোলনরূপে ব্রাহ্ম আন্দোলন

ভূমিকাঃ

ধর্মীয় গোড়ামী ও সামাজিক কুসংস্কার দূর করার উদ্দেশ্যে রাজা রামমোহন রায় ১৮২৮ খ্রিস্টাব্দে ব্রাহ্মসভা প্রতিষ্ঠা করেন। ১৮৩৩ খ্রিস্টাব্দে তার মৃত্যুর পর দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর ব্রাহ্ম সভার কার্যভার গ্রহণ করেন। এরপর ১৮৫৮ খ্রিস্টাব্দে কেশবচন্দ্র সেন ব্রাহ্মসমাজের যোগ দিলে ব্রাহ্ম আন্দোলনে নতুন গতি আসে এবং ধর্ম সংস্কার আন্দোলনরূপে ব্রাহ্ম আন্দোলন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

বেদান্তের আদর্শঃ

রামমোহন রায়ের ধর্ম সাধনার মূল ভিত্তি ছিল বেদান্ত। তিনি বেদান্তের আদর্শ অনুসারে একদিকে যেমন হিন্দু ধর্মের পুনঃপ্রতিষ্ঠা করেন, অন্যদিকে তেমনি খ্রিস্টান মিশনারীদের আক্রমণের হাত থেকেও হিন্দু ধর্মকে রক্ষা করেন।

একেশ্বরবাদ প্রচারঃ

ব্রাহ্মসমাজের সদস্যরা একেশ্বরবাদে বিশ্বাসী এবং পৌতলিকতাবাদের বিরোধী ছিলেন। রামমোহন রায় বলেন, একেশ্বরবাদই হল সকল ধর্মের মূল কথা এবং হিন্দু ধর্ম শাস্ত্রে উল্লেখিত নিরাকার ব্রম্ভের উপাসনাই শ্রেষ্ঠ ধর্ম। এজন্য তিনি ‘তুহাফৎ-উল-মুয়াহিদ্দিন বা একেশ্বরবাদীদের প্রতি‘ নামে একটি পুস্তিকা প্রকাশ করেন। এছাড়া তিনি বলেন, বেদ ও উপনিষদে পৌত্তলিকতা, পুরোহিত তন্ত্র ও বহু দেবতাদের উল্লেখ নেই। এই সমস্ত গ্রন্থের বাংলা অনুবাদ প্রকাশের দ্বারা তিনি তার মতবাদ প্রচার করেন।

আত্মীয় সভা প্রতিষ্ঠাঃ

কলকাতার উদারপন্থী শিক্ষিত ব্যক্তিদের স্বাধীনভাবে ধর্মালোচনার সুযোগ দেয়ার উদ্দেশ্যে রাজা রামমোহন রায় ১৮১৫ খ্রিস্টাব্দে আত্মীয় সভা প্রতিষ্ঠা করেন। হিন্দু ধর্মের পৌতলিকতা, জাতিভেদ প্রথা, সতীদাহ প্রথা প্রভৃতি ধর্মীয় ও সামাজিক কুসংস্কারের বিরুদ্ধে এই সভা মুখ খুলেছিল। দ্বারকানাথ ঠাকুর, প্রসন্নকুমার ঠাকুর, নন্দকিশোর বসু প্রমুখ ছিলেন আত্মীয় সভার উল্লেখযোগ্য সদস্য।

ব্রাহ্মসভা প্রতিষ্ঠাঃ

রামমোহন রায় ১৮২৮ খ্রিস্টাব্দে, একেশ্বরবাদী আদর্শ প্রচারের উদ্দেশ্যে ব্রাহ্মসভা প্রতিষ্ঠা করেন-যা ১৮৩০ খ্রিস্টাব্দে ব্রাহ্মসমাজ নামে পরিচিত হয়। এই প্রতিষ্ঠানের আদর্শ ছিল নিরাকার ব্রহ্মের উপাসনা।

ধর্ম সংস্কার আন্দোলন
ব্রাহ্মসভা ও কেশবচন্দ্র সেন

সর্বধর্ম সমন্বয়ের আদর্শ স্থাপনঃ

ব্রহ্ম আন্দোলনে সর্বধর্ম সমন্বয়বাদীর আদর্শ প্রতিফলিত হয়েছিল। রামমোহনের একেশ্বরবাদী ধর্ম চেতনার সঙ্গে ইসলামীয় ও খ্রিস্টীয় ধ্যান ধারণার সংমিশ্রণ ঘটেছিল। দেবেন্দ্রনাথের ব্রাহ্ম ধর্ম কোনো আলাদা ধর্ম ছিল না। আর কেশবচন্দ্র মনে করতেন, ব্রাহ্ম ধর্ম হলো একটি সার্বজনীন ধর্ম। যেখানে সকল জাতির ও সকল ধর্মের মানুষের অবাধ প্রবেশাধিকার থাকবে।

উপসংহারঃ

সব শেষে বলা যায়, শুধু ধর্ম সংস্কার আন্দোলনরূপে ব্রাহ্ম আন্দোলন পরিচালিত হয়নি। ধর্মীয় ক্ষেত্রে পাশাপাশি সামগ্রিক রূপে জাতীয় তথা আন্তর্জাতিক জাগরণেও ব্রাহ্ম আন্দোলনের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল।

দশম শ্রেণির ইতিহাসের প্রথম অধ্যায় থেকে ২ নম্বরের প্রশ্ন-উত্তরগুলি দেখতে Click করুন এখানে

ধর্ম সংস্কার আন্দোলনরূপে ব্রাহ্মণ আন্দোলন

তথ্যসূত্রঃ

এই ব্লগের কাজ করতে Wikipedia এর সাহায্য নেয়া হয়েছে।

ধর্ম সংস্কার আন্দোলনরূপে ব্রাহ্মণ আন্দোলন থেকে কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন-উত্তরঃ

প্রশ্ন: ব্রাহ্ম আন্দোলনের মূল উদ্দেশ্য কী ছিল?

উত্তর: ব্রাহ্ম আন্দোলনের মূল উদ্দেশ্য ছিল ধর্মীয় গোড়ামি ও সামাজিক কুসংস্কার দূর করা এবং একেশ্বরবাদ ও নিরাকার ব্রহ্মের উপাসনা প্রচার করা।

প্রশ্ন: ব্রাহ্মসভা কখন এবং কাদের দ্বারা প্রতিষ্ঠিত হয়?

উত্তর: ব্রাহ্মসভা ১৮২৮ খ্রিস্টাব্দে রাজা রামমোহন রায় কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত হয়।

প্রশ্ন: বেদান্তের আদর্শ কিভাবে ব্রাহ্ম আন্দোলনে প্রভাব ফেলেছিল?

উত্তর: বেদান্তের আদর্শে রামমোহন রায় হিন্দু ধর্মের পুনঃপ্রতিষ্ঠা করেন এবং খ্রিস্টান মিশনারিদের আক্রমণ থেকে হিন্দু ধর্মকে রক্ষা করেন।

প্রশ্ন: ব্রাহ্মসমাজ কোন ধর্মীয় মতবাদ প্রচার করে?

উত্তর: ব্রাহ্মসমাজ একেশ্বরবাদে বিশ্বাসী এবং পৌতলিকতাবাদের বিরোধী ছিল।

প্রশ্ন: রামমোহন রায়ের কোন পুস্তিকায় একেশ্বরবাদের মূল কথা উল্লেখ ছিল?

উত্তর: রামমোহন রায় তার ‘তুহাফৎ-উল-মুয়াহিদ্দিন বা একেশ্বরবাদীদের প্রতি’ পুস্তিকায় একেশ্বরবাদের মূল কথা উল্লেখ করেন।

প্রশ্ন: আত্মীয় সভা কী উদ্দেশ্যে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল?

উত্তর: ধর্মালোচনার স্বাধীন পরিবেশ সৃষ্টির উদ্দেশ্যে ১৮১৫ খ্রিস্টাব্দে আত্মীয় সভা প্রতিষ্ঠা করেন রামমোহন রায়।

প্রশ্ন: ব্রাহ্ম আন্দোলনের সর্বধর্ম সমন্বয়ের আদর্শ কীভাবে প্রতিফলিত হয়েছিল?

উত্তর: রামমোহনের একেশ্বরবাদী ভাবনার সাথে ইসলাম ও খ্রিস্টীয় ধ্যান ধারণার সংমিশ্রণে সর্বধর্ম সমন্বয়ের আদর্শ ব্রাহ্ম আন্দোলনে প্রতিফলিত হয়েছিল।

প্রশ্ন: কেশবচন্দ্র সেন ব্রাহ্মসমাজে যোগ দিলে কী প্রভাব পড়েছিল?

উত্তর: ১৮৫৮ খ্রিস্টাব্দে কেশবচন্দ্র সেনের যোগদানে ব্রাহ্ম আন্দোলনে নতুন গতি আসে এবং তা ধর্ম সংস্কার আন্দোলন হিসেবে ব্যাপক প্রভাব ফেলে।

প্রশ্ন: ব্রাহ্মসভা কবে থেকে ব্রাহ্মসমাজ নামে পরিচিত হয়?

উত্তর: ১৮৩০ খ্রিস্টাব্দে ব্রাহ্মসভা ব্রাহ্মসমাজ নামে পরিচিত হয়।

প্রশ্ন: ব্রাহ্ম আন্দোলনের আন্তর্জাতিক প্রভাব কীভাবে প্রকাশ পেয়েছিল?

উত্তর: ব্রাহ্ম আন্দোলন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক জাগরণের ক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা পালন করে, যা হিন্দু সমাজের সংস্কার ও আধুনিকীকরণের পথ সুগম করে।

আরো পড়ুনঃ

Sharing Is Caring:

Leave a Comment