১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের ২৪ শে জানুয়ারি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম আচার্য ও উপাচার্য ছিলেন যথাক্রমে গভর্নর জেনারেল লর্ড ক্যানিং ও সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি জেমস উইলিয়াম কোলভিল।
ভারতে ব্রিটিশ সরকারের শিক্ষা সচিব ফ্রেডরিক জন লন্ডনে সরকারের নিকট লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ের ধাঁচে কলকাতায় একটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব দেন। এই প্রস্তাবনার পরিপ্রেক্ষিতে তৎকালীন ভারত শাসক লর্ড ডালহৌসির শাসনকালে চার্লস উডের প্রতিবেদনের ভিত্তিতে (১৮৫৪ খ্রিস্টাব্দে) কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়।এই বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার প্রয়োজনীয় জমি দান করেছিলেন দ্বারভাঙার মহারাজ মহেশ্বর সিং বাহাদুর। ১৮৫৮ সালে বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় ও যদুনাথ বসু বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রথম স্নাতক হন।১৮৮২ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম মহিলা স্নাতক হন কাদম্বিনী গঙ্গোপাধ্যায় ও চন্দ্রমুখী বসু। এশিয়ার প্রথম ডি. লিট বেনীমাধব বড়ুয়া এই বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র ছিলেন।
উচ্চ শিক্ষার বিকাশে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূমিকা
ভূমিকাঃ
ভারতে পাশ্চাত্যের ধাঁচে আধুনিক উচ্চতর শিক্ষার প্রসার ঘটানোর উদ্দেশ্যে লর্ড ক্যানিং এর শাসন কালে ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়। এই বিশ্ববিদ্যালয়টি ছিল অক্সফোর্ডের মডেলে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার প্রথম মাল্টিডিসিপ্লিনারি ও সেকুলার ওয়েস্টার্ন স্টাইল বিশ্ববিদ্যালয়। এদেশে উচ্চ শিক্ষার বিকাশে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা আছে।
পাঠ্যক্রমঃ
কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রাথমিক পর্বে ৪টি বিভাগ খোলা হয়, যথা-কলা, বিজ্ঞান, চিকিৎসা ও প্রযুক্তিবিদ্যা । প্রথমদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান কাজ ছিল পরীক্ষা গ্রহণ, পাঠ্যপুস্তক নির্বাচন এবং সফল শিক্ষার্থীদের ডিগ্রী প্রদান। করে গবেষণামূলক কাজকর্মে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বার উন্মুক্ত হয়েছিল।
উচ্চ শিক্ষার প্রসারঃ
এই বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা সূচনা লগ্নে প্রবেশিক শিক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল ২৪৪ জন। ১৯০২ খ্রিস্টাব্দে এই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ৭০০০ জন। এই তথ্য পরিসংখ্যান থেকেই বোঝা যায়, এদেশে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের নেতৃত্বে ধীরে ধীরে উচ্চ শিক্ষার প্রসার ঘটেছিল।
ভারতের প্রথম স্নাতকঃ
১৮৯৮ খ্রিস্টাব্দে বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় এবং যদুনাথ বসু এই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রথম স্নাতক হয়েছিলেন। মেয়েদের মধ্যে কাদম্বিনী গাঙ্গুলী এবং চন্দ্রমুখী বসু এই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক হয়েছিলেন ১৮৮২ খ্রিস্টাব্দে।এই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম মুসলিম স্নাতক দেলোওয়ার হোসেন আহমেদ।
শিক্ষা পদ্ধতি, কার্যক্রম এবং ভাষা চর্চাঃ
১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দে ভারত স্বাধীনতার লাভ এর আগে পর্যন্ত শিক্ষা পদ্ধতি ও কার্যক্রম নিয়ে বহুবিধ পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও গবেষণা চলেছিল। এই প্রয়াসে অপপ্রতভাবে জড়িত ছিল কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়। তাই ভারতের ভাষা চর্চা ও গঠন পাঠন এই বিশ্ববিদ্যালয়ের মাধ্যমে শুরু হয়েছিল।
চরম উৎকর্ষতাঃ
স্যার আশুতোষ মুখোপাধ্যায় ১৯০৬ খ্রিস্টাব্দে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর পদে যোগ দিলে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার উৎকর্ষতা চরম শিখরে পৌছায়। তার আমলে কলা ও বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে উন্নত গবেষণার কাজ সারা বিশ্বের স্বীকৃতি অর্জন করেছিল। তার আমল ছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসের সুবর্ণ যুগ।
স্বনামধন্য নোবেল জয়ীঃ
এই বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে যুক্ত ছিলেন স্বনামধন্য চারজন নোবেল জয়ী পন্ডিত। যথা-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, সি ভি রমন, স্যার রোনাল্ড রস এবং অমর্ত্য সেন। এই কৃতিত্বের গৌরব অনেক বিশ্ববিদ্যালয়েরই নেই।
কৃতি ছাত্রঃ
কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বনামধন্য কৃতি ছাত্রদের দীর্ঘ তালিকায় প্রমাণ করে উচ্চশিক্ষা প্রসারে এই বিশ্ববিদ্যালয় এক বিরাট ভূমিকা পালন করেছিল। এখানকার কয়েকজন উল্লেখযোগ্য কৃতি ছাত্র ছিলেন-জগদীশচন্দ্র বসু, প্রফুল্লচন্দ্র রায়, সত্যেন্দ্রনাথ বসু, মেঘনাথ সাহা, সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণণ, রমেশ চন্দ্র মজুমদার, অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর, সুনীতি কুমার চট্টোপাধ্যায়, স্বামী বিবেকানন্দ, সুভাষচন্দ্র বসু প্রমুখ।
উপসংহারঃ
উনিশ শতকে বাংলার আধুনিক প্রগতিশীল উচ্চশিক্ষার বিস্তারে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূমিকা কে অস্বীকার করা যায় না। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের বহু কৃতি ছাত্র বাংলার নবজাগরণকে সমৃদ্ধ করেছেন। এটি ইংরেজ শাসিত ভারতের সর্ববৃহৎ এবং প্রথম বিশ্ববিদ্যালয়। এছাড়া দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম ধর্মনিরপেক্ষ বিশ্ববিদ্যাল।
নারী ইতিহাসের উপর টীকা উত্তরটি দেখতে Click করুন এখানে ।
তথ্যসূত্র:
এই ব্লগের কাজ করতে Wikipedia এর সাহায্য নেওয়া হয়েছে।
কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কে কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য:
প্রশ্ন:কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয় কবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল?
উত্তর: ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের ২৪শে জানুয়ারি কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়।
প্রশ্ন: কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম আচার্য ও উপাচার্য কে ছিলেন?
উত্তর: প্রথম আচার্য ছিলেন লর্ড ক্যানিং এবং প্রথম উপাচার্য ছিলেন জেমস উইলিয়াম কোলভিল।
প্রশ্ন: কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্য কী ছিল?
উত্তর:পাশ্চাত্যের ধাঁচে আধুনিক উচ্চতর শিক্ষার প্রসার ঘটানোই ছিল এর মূল উদ্দেশ্য।
প্রশ্ন:কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম কতটি বিভাগ ছিল?
উত্তর: প্রাথমিক পর্বে চারটি বিভাগ ছিল: কলা, বিজ্ঞান, চিকিৎসা এবং প্রযুক্তিবিদ্যা।
প্রশ্ন: ভারতের প্রথম স্নাতক কে ছিলেন?
উত্তর: বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় এবং যদুনাথ বসু কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রথম স্নাতক হন।
প্রশ্ন:কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম মহিলা স্নাতক কে ছিলেন?
উত্তর: কাদম্বিনী গাঙ্গুলী এবং চন্দ্রমুখী বসু প্রথম মহিলা স্নাতক ছিলেন।
প্রশ্ন: কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম মুসলিম স্নাতক কে ছিলেন?
উত্তর: দেলোওয়ার হোসেন আহমেদ ছিলেন প্রথম মুসলিম স্নাতক।
প্রশ্ন: কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বনামধন্য চারজন নোবেল বিজয়ী কারা?
উত্তর: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, সি ভি রমন, স্যার রোনাল্ড রস, এবং অমর্ত্য সেন।
প্রশ্ন: স্যার আশুতোষ মুখোপাধ্যায়ের অবদান কী ছিল?
উত্তর: তার সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণার মান চরম উৎকর্ষতা অর্জন করে, যা “সুবর্ণ যুগ” নামে পরিচিত।
প্রশ্ন: কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু উল্লেখযোগ্য কৃতি ছাত্র কারা ছিলেন?
উত্তর: জগদীশচন্দ্র বসু, প্রফুল্লচন্দ্র রায়, সত্যেন্দ্রনাথ বসু, সুভাষচন্দ্র বসু প্রমুখ।