ইতিহাস, দশম শ্রেণী

বারদৌলি সত্যাগ্রহের প্রতি জাতীয় কংগ্রেসের মনোভাব

Admin

No Comments

বারদৌলি সত্যাগ্রহ অনুষ্ঠিত হয়েছিল গুজরাটে। ১৯২৮ খ্রিস্টাব্দে ফেব্রুয়ারি মাসে সংগঠিত এই সত্যাগ্রহ আন্দোলন ছিল ভূমি রাজস্ব বৃদ্ধির প্রতিবাদে ভূস্বামী, ধনী কৃষক শ্রেণী এবং ভূমিহীন দরিদ্র কৃষক শ্রেণীর মিলিত আন্দোলন।

বারদৌলি, তালুকের সংখ্যাগরিষ্ঠ কৃষক ছিল নিম্ন বর্ণের ‘কলিপরাজ‘ সম্প্রদায়ভুক্ত। সীমাহীন দারিদ্র, সামাজিক অবজ্ঞা তাদের জীবনকে দুর্বিষহ করে তুলেছিল। ১৯২৫ সালে ভয়ঙ্কর বন্যায় বারদৌলির কৃষকদের ফসল নষ্ট হয়ে যায়। পরের বছর ১৯২৬ সালে সরকার ৩০ শতাংশ বৃদ্ধি করে পরে, আরো ২২ শতাংশ ভূমিকর বৃদ্ধি করলে কৃষকদের পক্ষে তা দেওয়া অসম্ভব হয়ে যায়।

এই সময় তুলোর দাম যথেষ্ট কমে যায় । ফলস্বরূপ কৃষকদের অবস্থা শোচনীয় হয়ে পড়ে। ১৯২৮ খ্রিস্টাব্দের ফেব্রুয়ারি মাসে বল্লভভাই প্যাটেল বারদৌলির কৃষকদের ঐক্যবদ্ধ করে সত্যাগ্রহ আন্দোলন শুরু করেন।

Table of Contents

বারদৌলি সত্যাগ্রহের প্রতি জাতীয় কংগ্রেসের মনোভাব কিরূপ ছিল? (M.P-2020)

ভূমিকাঃ

বারদৌলি সত্যাগ্রহ (১৯২৮) ছিল ব্রিটিশ সরকারের অন্যায় রাজস্ব বৃদ্ধি এবং কৃষকদের উপর আরোপিত অতিরিক্ত করের বিরুদ্ধে একটি সফল অহিংস আন্দোলন। এটি গুজরাটের বারদৌলি তালুকায় সর্দার বল্লভভাই প্যাটেলের নেতৃত্বে পরিচালিত হয়। এই আন্দোলন কেবল স্থানীয় নয়, বরং ভারতীয় স্বাধীনতা সংগ্রামে একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় হয়ে ওঠে।

জনসচেতনায় ভূমিকাঃ

১৯২৫ খ্রিস্টাব্দে তুলোর দাম বৃদ্ধি ও রাজস্ব ৩০ শতাংশ বৃদ্ধির প্রতিবাদে গুজরাটের সুরাট জেলার বারদৌলি তালুকে সত্যাগ্রহ আন্দোলন শুরু হয়েছিল। বারদৌলি তালুকে কংগ্রেস নেতারা সত্যাগ্রহের আদর্শ প্রচার করে জনগণকে সচেতন করে তুলতে থাকেন।

বল্লভভাই প্যাটেলের উদ্যোগঃ

বারদৌলি সত্যাগ্রহ আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়ার উদ্দেশ্যে ১৯২৮ খ্রিস্টাব্দের ফেব্রুয়ারি মাসে গান্ধীবাদী যুবক বল্লভভাই প্যাটেল বারদৌলিতে আসেন। তার নেতৃত্বে বারদৌলির কৃষকরা খাজনা প্রদান বন্ধ করার শপথ নেয়। প্যাটেল বারদৌলি অঞ্চলকে ১৩ টি অংশে বিভক্ত করে বিভিন্ন অংশের আন্দোলন পরিচালনার দায়িত্ব পৃথক পৃথক নেতাদের হাতে তুলে দেন। ছাত্র, যুবক সহ ১৫০০ স্বেচ্ছাসেবক আন্দোলনকে এগিয়ে নিয়ে যায়।

বারদৌলি সত্যাগ্রহ
সরদার বল্লভভাই প্যাটেল

নারী প্রগতিতেঃ

বারদৌলি সত্যাগ্রহে নারীদের সক্রিয় অংশগ্রহণ জাতীয় কংগ্রেসের দৃষ্টি আকর্ষণ করে মিঠুবেন প্যাটেল,মনিবেন প্যাটেল,সারদা মেহতা প্রমুখ নারী বারদৌলি সত্যাগ্রহ আন্দোলনে যোগ দিয়ে খ্যাতি অর্জন করেন। বারদৌলির কৃষক রমণীরাই বল্লভভাই প্যাটেলকে ‘সর্দার’ উপাধি দেন।

গান্ধীজীর ভূমিকাঃ

গান্ধীজি ১৯২৮ খ্রিস্টাব্দের ২ আগস্ট বারদৌলিতে আসেন। বল্লভ ভাইপ্যাটেলকে পুলিশ গ্রেফতার করলে তিনি এই আন্দোলনের নেতৃত্ব ভার গ্রহণ করেন। সরকার আন্দোলনকে স্তব্ধ করার জন্য যে তদন্ত কমিশন গঠন করে তার সুপারিশ গান্ধীজীর সমর্থনে কৃষকরা মেনে নিয়েছিল। এই সুপারিশে খাজনার হার কমিয়ে ৬.০৩ শতাংশ করা হয়।

উপসংহারঃ

বারদৌলি সত্যাগ্রহ জাতীয় কংগ্রেসের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক এবং আদর্শগত বিজয় ছিল। ব্রিটিশ সরকার চাপে পড়ে ম্যাক্সওয়েল তদন্ত কমিটি গঠন করে এবং রাজস্বের হার কমিয়ে ৬.০৩ শতাংশ করে। এর ফলে বারদৌলি কৃষক সমস্যা জাতীয় স্তরে উন্নীত হয়। এছাড়া এই আন্দোলনের সমর্থনে বোম্বে আইনসভার সদস্য কে.এম. মুন্সি এবং লালজি নারানজি পদত্যাগ করেন।

বাংলায় ছাপাখানার ব্যবসায়িক উদ্যোগ সমূহের সংক্ষিপ্ত বিবরণ: সম্পূর্ণ উত্তরটি দেখতে Click করুন এখানে।

তথ্যসূত্রঃ

এই ব্লগের কাজ করতে Wikiedia এর সাহায্য নেয়া হয়েছে।

বারদৌলি সত্যাগ্রহের প্রতি জাতীয় কংগ্রেসের মনোভাব থেকে কিছু গুরুত্বপূর্ণ সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তরঃ

প্রশ্ন: বারদৌলি সত্যাগ্রহ কী?

উত্তর: বারদৌলি সত্যাগ্রহ ছিল ১৯২৮ সালে গুজরাটের সুরাট জেলার বারদৌলি তালুকায় ব্রিটিশ সরকারের অন্যায় রাজস্ব বৃদ্ধির বিরুদ্ধে কৃষকদের পরিচালিত একটি অহিংস আন্দোলন।

প্রশ্ন: বারদৌলি সত্যাগ্রহের নেতৃত্ব কে দিয়েছিলেন?

উত্তর: সর্দার বল্লভভাই প্যাটেল এই আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন।

প্রশ্ন: বারদৌলি সত্যাগ্রহ কেন শুরু হয়েছিল?

উত্তর: ১৯২৫ এবং ১৯২৬ সালে বন্যা ও ফসলহানির কারণে কৃষকরা চরম আর্থিক সংকটে পড়েন। এর মধ্যেই ব্রিটিশ সরকার ভূমি কর ৩০ শতাংশ বাড়িয়ে দেয়, যা আন্দোলনের মূল কারণ।

প্রশ্ন: এই আন্দোলনে গান্ধীজীর ভূমিকা কী ছিল?

উত্তর: গান্ধীজি আন্দোলন চলাকালীন ১৯২৮ সালের আগস্টে বারদৌলি যান। বল্লভভাই প্যাটেল গ্রেফতার হলে তিনি নেতৃত্ব গ্রহণ করেন এবং সরকারের গঠিত তদন্ত কমিশনের সুপারিশে খাজনা কমানোর প্রক্রিয়াকে সমর্থন করেন।

প্রশ্ন: বারদৌলি সত্যাগ্রহে নারীদের ভূমিকা কী ছিল?

উত্তর: নারীরা সক্রিয়ভাবে এই আন্দোলনে অংশ নেন। মিঠুবেন প্যাটেল, মনিবেন প্যাটেল, এবং সারদা মেহতা উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করেন। বারদৌলির কৃষক রমণীরা বল্লভভাই প্যাটেলকে “সর্দার” উপাধি প্রদান করেন।

প্রশ্ন: বারদৌলি সত্যাগ্রহের ফলে কী অর্জিত হয়েছিল?

উত্তর: আন্দোলনের ফলে ব্রিটিশ সরকার রাজস্ব বৃদ্ধি প্রত্যাহার করে এবং ৬.০৩ শতাংশে হ্রাস করে। এটি জাতীয় কংগ্রেসের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বিজয় ছিল।

প্রশ্ন: ম্যাক্সওয়েল তদন্ত কমিটির ভূমিকা কী ছিল?

উত্তর: ব্রিটিশ সরকার কৃষকদের সমস্যাগুলি সমাধানের জন্য ম্যাক্সওয়েল তদন্ত কমিটি গঠন করে। এর সুপারিশ অনুসারে রাজস্ব হার কমানো হয়।

প্রশ্ন: ‘উজালিপরাজ’ কি?

উত্তর: গুজরাটের বারদৌলি তালুকের উচ্চ বর্ণের কৃষকরা ‘উজালিপরাজ’ নামে পরিচিত।

প্রশ্ন: ‘কলিপরাজ’ নামে কারা পরিচিত?

উত্তর: গুজরাটের বারদৌলি তালুকের নিম্ন বর্ণের কৃষকেরা ‘কলিপরাজ’ নামে পরিচিত

প্রশ্ন: বারদৌলি সত্যাগ্রহে সর্দার বল্লভভাই প্যাটেলের ভূমিকা কীভাবে প্রভাব ফেলেছিল?

উত্তর: প্যাটেলের নেতৃত্ব কৃষকদের ঐক্যবদ্ধ করে আন্দোলনকে সফল করে তোলে। তার সুসংগঠিত পরিকল্পনা আন্দোলনের মূল ভিত্তি ছিল।

আরো পড়ুনঃ

Sharing Is Caring:

Leave a Comment