নদীর গতি যখন হ্রাস পায় এবং বহন করা পলি ও অন্যান্য বস্তুগুলো জমা করতে শুরু করে, তখন বিভিন্ন ভূ-আকৃতি গঠিত হয়। একে নদীর সঞ্চয় কার্য (Deposition Process) বলা হয়।
নদীর সঞ্চয় কার্যের ফলে সৃষ্ট ভূমিরূপ গুলির(চিত্রসহ) আলোচনাঃ
নদীর নিম্ন গতিতে সঞ্চয় বা অবক্ষেপনের প্রাধান্যই বেশি থাকে। এর ফলে নদীর নিম্ন গতিতে বিভিন্ন ভূমিরূপ গড়ে উঠতে দেখা যায়। নদীর নিম্ন গতিতে সঞ্চয় কার্যের ফলে গঠিত প্রধান ভূমিরূপ গুলি হল-
প্লাবনভূমি:
নদী নিম্ন গতিতে প্লাবনের ফলে নদী উপত্যকার দুই পাশে নুড়ি, পলি, বালি, কাদা, প্রভৃতি সঞ্চিত হয়ে যে উর্বর সমতলভূমি গঠন করে তাকে প্লাবনভূমি বলে।
উৎপত্তি: বর্ষাকালে নদীতে অতিরিক্ত জলের ফলে নদীর দুই কুল ছাপিয়ে যায় ও বন্যা সৃষ্টি করে। এর ফলে দুই তীরে পলি, বালি, কাদা সঞ্চিত হয়ে প্লাবনভূমির সৃষ্টি হয়।
উদাহরণ: বিহারের রাজমহল অঞ্চলে, গঙ্গার গতিপথের দুই পাশে প্লাবনভূমি দেখা যায়।
স্বাভাবিক বাঁধ:
ক্রমাগত বন্যার ফলে নদীর দুই তীরে পলি জমে যে উঁচু বাঁধের সৃষ্টি হয় তাকে স্বাভাবিক বাঁধ বা লোভী বলে।
উৎপত্তি: নিম্ন গতিতে প্রতিবছর বন্যার ফলে নদী বাহিত নূরী, কাকর, বালি, পলি বারবার সঞ্চিত হয়ে নদীর গতিপথের সমান্তরালে স্বাভাবিক সৃষ্টি হয়।
উদাহরণ: পশ্চিমবঙ্গের নদিয়া ও মুর্শিদাবাদে এরূপ অনেক স্বাভাবিক বাঁধ গড়ে উঠেছে।
অশ্বক্ষুরাকৃত হ্রদ:
মূল নদী থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে অবস্থিত ঘোড়ার খুরের মতো দেখতে হ্রদ কে বলা হয় অশ্বক্ষুরাকৃত হ্রদ।
উৎপত্তি: নদী আঁকাবাঁকা পথে প্রবাহিত হওয়ার সময় ক্ষয় কার্যের ফলে দুটি বাঁক খুব কাছাকাছি চলে আসে এবং একসময় দুটি বাঁক মিলে যায়। বাকি একটি অংশ দখল মূল নদী থেকে আলাদা হয়ে ঘোরার খুরের মত অশ্বক্ষুরাকৃত হ্রদ সৃষ্টি করে।
উদাহরণ: পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ জেলায় ভাগীরথী নদীর দুই পাশে অশ্বক্ষুরাকৃত হ্রদ দেখা যায়।
ব-দ্বীপঃ
নদীর ক্ষয়জাতো পদার্থ গুলি মোহনার নিকট সঞ্চিত হয়ে মাত্রাহীন ব-এর মতো যে উঁচু ভূমিভাগ সৃষ্টি করে তাকে ব দ্বীপ বলে।
উৎপত্তি: নদীর উচ্চ মধ্য নিম্নগতি থেকে বয়ে আনা নূরী,পলি,বালি, কাঁকর মোহনার নিকট হার কম হলে ক্রমাগত সঞ্চিত করে ব দ্বীপ সৃষ্টি করে।
উদাহরণ: সুন্দরবনের গাঙ্গেয় বদ্বীপ (বিশ্বের বৃহত্তম বদ্বীপ)।
নদীর ক্ষয় কার্যের ফলে গঠিত ভূমিরূপ গুলির চিত্রসহ বর্ণনা: সম্পূর্ণ উত্তরটি দেখতে Click করুন এখানে।
তথ্যসূত্রঃ
এ ব্লগের কাজ করতে Wikipedia এর সাহায্য নেয়া হয়েছে।
নদীর সঞ্চয় কার্য থেকে কিছু গুরুত্বপূর্ণ সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন উত্তরঃ
প্রশ্ন: পলল শঙ্কু কি ?
উত্তর: মধ্য গতিতে নদীর ঢাল হঠাৎ কমে গেলে পর্বতের পাদদেশে নূরী, কাঁক্র, বালি,পলি জমা হয়ে শঙ্কুর আকার ধারণ করলে তাকে পলল শঙ্কু বলে।
প্রশ্ন: পলল ব্যজনী কি ?
উত্তর: একাধিক পলল শঙ্কু একসাথে অবস্থান করলে তার উপর দিক দিয়ে নদী বয়ে যাওয়ার ফলে অর্ধকগুলো কৃতি ধারণ করে একে পলল ব্যজনী বলে।
প্রশ্ন: নদী দ্বীপ বা নদীচর কি ?
উত্তর: নিম্ন প্রবাহ নদী বাহিত নূরী, কাঁক্র, বালি,পলি নদীর বুকে সঞ্চিত হয়ে যে চর সৃষ্টি করে তাকে নদী চর বলে।
প্রশ্ন: পৃথিবীর বৃহত্তম নদী দ্বীপ কোনটি ?
উত্তর: আমাজন নদীতে সৃষ্ট ‘ইলোহা- দা- মারাজো’ পৃথিবীর বৃহত্তম নদী দ্বীপ হিসেবে পরিচিত।
প্রশ্ন: ভারতের বৃহত্তম নদী দ্বীপ কোনটি ?
উত্তর: ব্রহ্মপুত্র নদে গড়ে ওঠা ‘মাজুলী’ ভারতের বৃহত্তম নদী দ্বীপ।
প্রশ্ন: ধনুক আকৃতির বদ্বীপ দেখা যায় কোন কোন নদী ?
উত্তর: তে নীলনদ, গঙ্গা-ব্রহ্মপুত্র, হোয়াংহো, নাইযার,পো, মহানদী ইত্যাদি।
প্রশ্ন: পাখির পায়ের মতো ব দ্বীপ দেখা যায় কোন নদীতে ?
উত্তর: মিসিসিপি- মিসৌরি, ভারতের কাবেরী নদীতে।
প্রশ্ন: কোন নদীর মোহনায় বদ্বীপ সৃষ্টি হয়নি ?
উত্তর: দক্ষিণ আমেরিকার আমাজন, ভারতের পশ্চিম বাহিনী নদী নর্মদা ও তাপ্তি ইত্যাদি নদীতে ।
প্রশ্ন: মিয়েন্ডার কাকে বলে ?
উত্তর: নিম্ন গতিতে নদী আঁকাবাঁকা পথে এগিয়ে চলে। এই আঁকাবাঁকা নদীপথ কে মিয়েন্ডার বলা হয়।
প্রশ্ন: খাঁড়ি কি
উত্তর: ফানের আকৃতির নদী মোহনাকে খাঁড়ি বলে। পশ্চিমবঙ্গের সুন্দরবন অঞ্চলে অসংখ্য খাঁড়ি দেখা যায়।