নদীর ক্ষয়কার্য পার্বত্য প্রবাহ বা উচ্চ প্রবাহে লক্ষ্য করা যায়। এই অঞ্চলে ভূমির ঢাল বেশি হওয়ায় নদীর জল প্রবাহের বেগ দ্রুত হয়।
যে সকল প্রাকৃতিক শক্তি ূভূমিরূপ পরিবর্তনে অংশ নেয় নদী সেগুলির মধ্যে অন্যতম। পৃথিবীর মোট ভূ-ভাগের ৭০% অঞ্চলে নদীর কাজ দেখা যায়।
নদীর ক্ষয়কার্যের ফলে সৃষ্ট তিনটি ভূমিরূপ চিত্রসহ বর্ণনা কর
নদীর ক্ষয়কার্যের প্রভাব নদীর গতিপথে বিভিন্ন ভূ-আকৃতির সৃষ্টি করে। এখানে গিরিখাত (Canyon), জলপ্রপাত (Waterfall), মন্থকূপ (Whirlpool), এবং প্রপাত কূপ (Plunge Pool)-এর উপর ভিত্তি করে বিস্তারিত বর্ণনা প্রদান করা হলো।
১.গিরিখাত ও ক্যানিয়নঃ
আদ্র অঞ্চলে অত্যন্ত গভীর ও সংকীর্ণ ইংরেজি ‘V’ আকৃতির নদী উপত্যকাকে গিরিখাত বলে। আবার শুষ্ক অঞ্চলে এই নদী উপত্যকা যখন গভীর ইংরেজি ‘I’ আকৃতির মত হয়। তখন তাকে ক্যানিয়ন বলে।
উৎপত্তিঃ–
পার্বত্য অঞ্চলে নদীতে জলপ্রবাহের বেগ বেশি হওয়ায় কোমল শিলাস্তরে অঞ্চলে নিম্নক্ষয় এর পাশাপাশি পার্শ্বক্ষয় করলে ইংরেজি ‘V’ আকৃতির মত গিরিখাত সৃষ্টি হয়। আবার কঠিন শিলাস্তর অঞ্চলে নিম্নক্ষয় বেশি হয়,ফলে নদী উপত্যকা গভীর ও খাড়া ঢালযুক্ত ইংরেজি ‘I’ আকৃতির মত ক্যানিয়ন সৃষ্টি করে।
উদাহরণঃ– ভারতের গান্ধীকুটির গিরিখাত, যুক্তরাষ্ট্রের গ্র্যান্ড ক্যানিয়ন (Grand Canyon), যা কলোরাডো নদীর মাধ্যমে গঠিত।
২.জলপ্রপাতঃ
কোন উঁচু অংশ থেকে খাড়া ঢাল বরাবর নিচে পতিত জলপ্রবাহকে জলপ্রপাত বলে।
উৎপত্তিঃ
নদীর গতিপথে পর্যায়ক্রমে কঠিন ও কোমল শিলা অবস্থান করলে বৈষম্যমূলক ক্ষয় কাজের ফলে খাড়া ঢালের সৃষ্টি হয় ওই খাড়া ঢালে জলপ্রপাতের উৎপত্তি ঘটে।
এছাড়া চুতির ফলে শ্রেষ্ঠ খাড়া ঢাল বরাবর জলপ্রপাতের উৎপত্তি ঘটে।
উদাহরণঃ-আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের নায়াগ্রা জলপ্রপাত এবং ভারতের ধুয়াধর জলপ্রপাত উল্লেখযোগ্য।
৩.মন্থকূপঃ
নদী বাহিত পাথর খন্ড অবঘর্ষ প্রক্রিয়ায় নদীর তলদেশে যে গর্তের সৃষ্টি করে তাকে মন্থকূপ বলে।
উৎপত্তিঃ
উচ্চ গতিতে নদীর জল প্রবাহের বেগ অধিক হওয়ায় নদীতে প্রবাহিত পাথর খন্ডের সাথে নদীর তলদেশের আঘাতের ফলে গোলাকার ও মসৃণ গর্তবিশিষ্ট মন্থকূপ সৃষ্টি হয়।
উদাহরণঃ– ইউরোপের সল্টস্ট্রোমেন মন্থকূপ, জব্বলপুরের পূর্ব দিকে গৌর নদীর তলদেশে অনেক মন্থকূপ দেখা যায়।
৪.প্রপাত কূপঃ
জলপ্রপাতের তলদেশে জলধারার প্রভাব এবং ক্ষয়ের ফলে সৃষ্ট গভীর গর্ত বা কূপকে প্রপাত কূপ বলে।
উৎপত্তিঃ
জলপ্রপাতের নিচে দ্রুতগতিতে জল পড়ার ফলে জলপ্রপাতের পাদদেশে সৃষ্ট গোলাকার হাঁড়ির মতো গর্তকে প্রপাত কূপ বলে।
উদাহরণঃ– নায়াগ্রা জলপ্রপাতের তলদেশে বিশাল প্রপাত কূপ, ভারতের শিবসমুদ্র জলপ্রপাতের তলদেশে প্রপাত কূপ।
2025 মাধ্যমিক ভূগোল সাজেশন দেখতে Click করুন এখানে।
তথ্যসূত্রঃ
এই ব্লগের কাজ করতে Wikipedia সাহায্য নেওয়া হয়েছে।
নদীর উচ্চ গতি ও ক্ষয়কার্য থেকে কিছু গুরুত্বপূর্ণ সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন উত্তরঃ
প্রশ্ন: ভারতের উচ্চতম জলপ্রপাত কোনটি?
উত্তর: ভারতের উচ্চতম জলপ্রপাতটি হলো কুঞ্চিকল, ভাড়াহি নদীতে অবস্থিত।
প্রশ্ন: কর্তিত শৈলশিরা কাকে বলে?
উত্তর: পার্বত্য অঞ্চলে নদীর প্রবল স্রোতের আঘাতে ক্ষয়প্রাপ্ত পর্বতের শৈলশিরা গুলিকে কর্তিত শৈলশিরা বলে।
প্রশ্ন: ভারতের গ্রান্ড ক্যানিয়ন কোন নদীতে অবস্থিত?
উত্তর:ভারতের গ্রান্ড ক্যানিয়ন শিলাবত নদীতে অবস্থিত
প্রশ্ন: ূ মন্থকূপ কলোনি কি?
উত্তর: অসংখ্য মধ্যকূপ একসঙ্গে যুক্ত হলে তাকে মন্থকূপ কলোনি বলে।
প্রশ্ন: পৃথিবীর গভীরতম গিরিখাত কোনটি?
উত্তর: পৃথিবীর গভীরতম গিরিখাত কালীগণ্ডকি নদীর গিরিখাত।
প্রশ্ন: শিবসমুদ্র জলপ্রপাত কোন নদীতে সৃষ্টি হয়েছে?
উত্তর: শিবসমুদ্র জলপ্রপাত কাবেরী নদীতে সৃষ্টি হয়েছে।
প্রশ্ন: র্যাপিড কি
উত্তর: পার্বত্য প্রবাহে জলপ্রপাতের জল যখন উঁচু জায়গা থেকে ধাপে ধাপে নামে াকে র্যাপিড বলে।
প্রশ্ন: ক্যাসকেট কাকে বলে?
উত্তর: অনেক সময় নদী ক্ষুদ্র জলপ্রপাত সৃষ্টি করে প্রবাহিত হয় একে ক্যাসকেট বলে।
প্রশ্ন: ক্যাটারাক্ট কি?
উত্তর: অনেক উঁচু থেকে জলপ্রবাহ যখন উত্তাল গতিতে তাকে নেমে আসে তাকে ক্যাটারাক্ট বলে
প্রশ্ন: কোন জলপ্রপাতকে ভারতের নায়াগ্রা বলা হয় ?
উত্তর: চিত্রকুট জলপ্রপাতকে ভারতের নায়াগ্রা বলা হয়।