বায়ুমন্ডলের উষ্ণতার তারতম্য সর্বত্র জায়গায় সমান নয়। কোথাও উষ্ণতা বেশি, কোথাও উষ্ণতা কম,আবার কোথাও এক দিনে উষ্ণতা ও শীতলতা উভয়ই অনুভূত হয়।
বায়ুমন্ডলের উষ্ণতার তারতম্যের কারণঃ
সাধারণত বায়ুমন্ডলের উষ্ণতার তারতম্য নানা প্রাকৃতিক ও ভৌগোলিক কারণে হয়ে থাকে। সেই কারণগুলো বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হলো।
অক্ষাংশঃ
সূর্য থেকে আসা কিরণ পৃথিবীর উপর সর্বত্র সমান কোণে পড়ে না। কোথাও লম্বভাবে আবার কোথাও তির্যকভাবে পড়ে। যেমন-নিরক্ষীয় অঞ্চলে সূর্যরশ্মি লম্বভাবে পড়ায় উষ্ণতা বেশি হয় এবং মেরু অঞ্চলে সূর্যরশ্মি তীর্যকভাবে পড়ায় উষ্ণতা কম হয়।
উচ্চতাঃ
ভূপৃষ্ঠ থেকে উচ্চতা বৃদ্ধির সাথে সাথে বায়ুর ঘনত্ব ও চাপের সঙ্গে উষ্ণতাও কমতে থাকে। সমুদ্রতল থেকে প্রতি ১৬৫ মিটার উচ্চতায় তাপমাত্রা গড়ে ১°C করে কমে। তাই পাহাড়ি এলাকায় আবহাওয়া ঠান্ডা থাকে। যেমন-নিরক্ষীয় অঞ্চলে অবস্থিত হওয়ার সত্বেও আফ্রিকার কিলিমাঞ্জারো পর্বতে চূড়ার উচ্চতা বেশি হওয়ার জন্য বরফাবৃত থাকে।
ভূমির ঢালঃ
কোন উচ্চভূমির যেদিকের ঢাল সূর্যের দিকে মুখ করে থাকে সেই দিকের ঢালের উষ্ণতা বেশি হয়। আবার সূর্যের বিপরীত দিকে থাকা ঢালটির উষ্ণতা কম হয়। যেমন-হিমালয় দক্ষিণ দিকের ঢাল উত্তর দিকের তুলনায় বেশি উষ্ণ।
স্থলভাগ ও জলভাগ এর বন্টনঃ
জল ও স্থলভাগ তাপ গ্রহণ ও ত্যাগে ভিন্ন আচরণ করে। স্থলভাগ দ্রুত গরম হয়ে যায় এবং দ্রুত ঠান্ডা হয়। কিন্তু জল ধীরে গরম ও ধীরে ঠান্ডা হয়। ফলে উপকূলীয় এলাকার তাপমাত্রা তুলনামূলকভাবে স্থিতিশীল থাকে।
বায়ু প্রবাহঃ
উষ্ণ ও শীতল বায়ু প্রবাহ বিভিন্ন অঞ্চলের তাপমাত্রায় পরিবর্তন ঘটায়। যেমন—উত্তর থেকে আগত শীতল বায়ু তাপমাত্রা হ্রাস করে এবং দক্ষিণ থেকে আগত উষ্ণ বায়ু তাপমাত্রা বৃদ্ধি করে।
সমুদ্র স্রোতঃ
বায়ুমন্ডলে উষ্ণতার তারতম্যে সমুদ্রস্রোতের ভূমিকা অন্যতম। যেমন-উষ্ণ গাল্ফ স্ট্রিম স্রোত ইউরোপের পশ্চিম উপকূলে তাপমাত্রা বাড়িয়ে দেয়, আবার শীতল ক্যানারি স্রোত আফ্রিকার উত্তর-পশ্চিম উপকূলে তাপমাত্রা কমিয়ে দেয়।
এছাড়া স্বাভাবিক উদ্ভিদের অবস্থান, মেঘাচ্ছন্নতা, ঋতু পরিবর্তন, নগরায়ন ও মানুষের ক্রিয়াকলাপ প্রভৃতি বায়ুমন্ডলের উষ্ণতার তারতম্য ঘটায়।
হিমবাহের ক্ষয় কার্যের ফলে সৃষ্ট ভূমিরূপ গুলি চিত্রসহ আলোচনা কর। সম্পূর্ণ উত্তর দেখতে Click করুন এখানে।
তথ্যসূত্রঃ
এই ব্লগের কাজ করতে Wikipedia এর সাহায্য নেওয়া হয়েছে।
বায়ুমণ্ডলের উষ্ণতার তারতম্য থেকে গুরুত্বপূর্ণ সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন উত্তরঃ
প্রশ্ন: বায়ুমণ্ডলের উষ্ণতার তারতম্য বলতে কী বোঝায় ?
উত্তর: বায়ুমণ্ডলের উষ্ণতার তারতম্য বলতে পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলে বায়ুর তাপমাত্রার পার্থক্যকে বোঝায়। এটি বিভিন্ন প্রাকৃতিক ও ভৌগোলিক কারণে হয়ে থাকে, যেমন- অক্ষাংশ, উচ্চতা, ভূমির গঠন ইত্যাদি।
প্রশ্ন: অক্ষাংশ কিভাবে উষ্ণতার তারতম্যে প্রভাব ফেলে ?
উত্তর: অক্ষাংশ অনুসারে সূর্যের কিরণ পৃথিবীতে ভিন্ন কোণে পড়ে। নিরক্ষীয় অঞ্চলে সূর্যের কিরণ সরাসরি পড়ে বলে সেখানকার উষ্ণতা বেশি, আর মেরু অঞ্চলে তির্যকভাবে পড়ায় উষ্ণতা কম হয়।
প্রশ্ন: উচ্চতার সঙ্গে উষ্ণতার সম্পর্ক কী ?
উত্তর: উচ্চতা যত বাড়ে, তাপমাত্রা তত কমে। প্রতি ১৬৫ মিটার উচ্চতায় তাপমাত্রা প্রায় ১°C করে হ্রাস পায়। তাই পাহাড়ি অঞ্চলে সাধারণত ঠান্ডা অনুভূত হয়।
প্রশ্ন: ভূমির ঢাল কিভাবে তাপমাত্রার পার্থক্য ঘটায় ?
উত্তর: সূর্যের দিকে মুখ করে থাকা ঢাল বেশি তাপ পায়, ফলে সেদিকে উষ্ণতা বেশি হয়। বিপরীত দিকে থাকা ঢাল তুলনামূলকভাবে কম উষ্ণ থাকে।
প্রশ্ন: স্থল ও জলভাগের তাপ শোষণ ক্ষমতায় পার্থক্য কোথায় ?
উত্তর: স্থলভাগ দ্রুত তাপ শোষণ ও ত্যাগ করে, কিন্তু জলভাগ ধীরে তাপ গ্রহণ ও ত্যাগ করে। ফলে উপকূলীয় এলাকায় উষ্ণতা তুলনামূলকভাবে স্থিতিশীল থাকে।
প্রশ্ন: বায়ুপ্রবাহ কীভাবে উষ্ণতার তারতম্য ঘটায় ?
উত্তর: শীতল বা উষ্ণ বায়ুপ্রবাহ বিভিন্ন অঞ্চলের তাপমাত্রা পরিবর্তন করে। যেমন—উত্তর থেকে আসা শীতল বায়ু তাপমাত্রা কমায়, আর দক্ষিণ থেকে আসা উষ্ণ বায়ু তাপমাত্রা বাড়ায়।
প্রশ্ন: সমুদ্র স্রোতের প্রভাব কী ?
উত্তর: উষ্ণ সমুদ্রস্রোত উপকূলীয় অঞ্চলে উষ্ণতা বাড়ায়, আর শীতল স্রোত তাপমাত্রা কমায়। যেমন—গাল্ফ স্ট্রিম ইউরোপের তাপমাত্রা বৃদ্ধি করে।
প্রশ্ন: উপকূলীয় এলাকায় তাপমাত্রা স্থিতিশীল কেন থাকে ?
উত্তর: কারণ সেখানে স্থল ও জলভাগের মিলিত প্রভাবে দিনে ও রাতে উষ্ণতার পার্থক্য কম হয় এবং জলধারণ ক্ষমতা বেশি হওয়ায় জল ধীরে গরম ও ঠান্ডা হয়।
প্রশ্ন: ঋতু পরিবর্তন কীভাবে উষ্ণতার পার্থক্য ঘটায় ?
উত্তর: ঋতু পরিবর্তনের ফলে সূর্যের অবস্থান পরিবর্তিত হয়, ফলে গ্রীষ্মে উষ্ণতা বেশি ও শীতে কম হয়। এই পরিবর্তন বিভিন্ন অঞ্চলে তাপমাত্রার তারতম্য ঘটায়।
প্রশ্ন: মানুষের ক্রিয়াকলাপ বায়ুমণ্ডলের উষ্ণতাকে কীভাবে প্রভাবিত করে ?
উত্তর: শিল্পায়ন, নগরায়ন, বনভূমি উজাড়, যানবাহনের ধোঁয়া ইত্যাদি মানবিক কার্যকলাপ বায়ুমণ্ডলে তাপমাত্রা বৃদ্ধি করে এবং উষ্ণতার তারতম্য আরও তীব্র করে তোলে।