ইতিহাস, দশম শ্রেণী

1857 সালের মহাবিদ্রোহের প্রকৃতি ও চরিত্র আলোচনা কর।

Admin

No Comments

১৮৫৭ সালের মহাবিদ্রোহের প্রকৃতি ও চরিত্র নিয়ে ঐতিহাসিকদের মধ্যে বিতর্ক আছে। অনেকের মতে এটি ছিল সিপাহী বিদ্রোহ। অনেকে আবার একে জাতীয় বিদ্রোহ বলে অভিহিত করেছেন।

ইংরেজি ইজ ইন্ডিয়া কোম্পানি ১৭৫৭ খ্রিস্টাব্দে পলাশীর যুদ্ধে জয় লাভ করে ভারতে তাদের আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করে। এর একশ বছরের মধ্যেই ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে বিভিন্ন কারণে ভারতবাসী ক্ষোভ জমা হয়। যার পরিণতি ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের সিপাহী বিদ্রোহ বা মহাবিদ্রোহ।

Table of Contents

১৮৫৭ সালের মহাবিদ্রোহের প্রকৃতি ও চরিত্রঃ

ভূমিকাঃ

১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের মহাবিদ্রোহ ভারতের ইতিহাসে সিপাহী বিদ্রোহ নামে পরিচিত। কিন্তু এই বিদ্রোহে সিপাহীরা ছাড়াও কৃষক, সাধারণ মানুষ, জমিদার, অভিজাত ও রাজা রানীর অংশগ্রহণ করেছিল। তাই এই বিদ্রোহকে কেউ কেউ সিপাহী বিদ্রোহ, কেউ সামন্ততান্ত্রিক বিদ্রোহ, আবার কেউ জাতীয় সংগ্রাম বলে অভিহিত করেছেন। সুতরাং, ভারতের ইতিহাসে মহাবিদ্রোহের প্রকৃতি বা চরিত্র নির্ণয় একটি বিতর্কিত বিষয়।

সিপাহী বিদ্রোহঃ

ইংরেজি ঐতিহাসিক চার্লস রেইকস, রবার্টস, জনকে, জন সিলি এবং ভারতীয়দের মধ্যে কিশোরী চাঁদ মিত্র, দুর্গাদাস বন্দ্যোপাধ্যায়, দাদাভাই নওরোজি, রাজনারায়ণ বসু প্রমুখ ১৮৫৭ সালের বিদ্রোহকে নিছক সিপাহী বিদ্রোহ বলে উল্লেখ করেছেন। তাদের বক্তব্য-১৮৫৭ সালের বিদ্রোহের মূল চালিকাশক্তি ছিল সিপাহীরা, ভারতের সমাজতন্ত্রের রাজা এবং শিক্ষিত মধ্যবিত্ত শ্রেণী এই বিদ্রোহে যোগদান করেনি। তাই কিশোরী চঁান মিত্র বলেছেন, ” এই বিদ্রোহ ছিল একান্তভাবেই সিপাহীদের অভ্যুত্থান”।

জাতীয় বিদ্রোহঃ

ঐতিহাসিক হোমস, ডাফ, ম্যালেসন, জে. বি.নর্টন, কার্ল মার্ক্স এই বিদ্রোহকে জাতীয় বিদ্রোহ বলে অভিহিত করেছেন। এদের মতে, ভারতের প্রায় সমগ্র অঞ্চলের জনগণ স্বতঃস্ফূর্তভাবে আন্দোলনে যোগদান করেছিল। বিদ্রোহীরা মুঘল সম্রাট দ্বিতীয় বাহাদুর শাহকে ‘ভারতের সম্রাট‘ বলে ঘোষণা করে বিদেশি শাসনের অবসান ঘটাতে চেয়েছিল। কার্ল মার্ক্স নিউ ইয়র্ক ডেইলি ট্রাইবুন পত্রিকায় লেখেন-” অনেকেই যাকে সেনা বিদ্রোহ বলে মনে করছেন সেই আসলে জাতীয় বিদ্রোহ”।

প্রথম স্বাধীনতা সংগ্রামঃ

দেশপ্রেমিক বিপ্লবী বিনায়ক দামোদর সাভারকার তার-‘The Indian War of Independence’ গ্রন্থে সিপাহী বিদ্রোহকে ‘ভারতের প্রথম স্বাধীনতা সংগ্রাম‘ বলে উল্লেখ করেছেন। তার এই মতবাদকে অধ্যাপক হীরেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়, অধ্যাপক সুশোভন সরকার, পি. সি. জোশী, অশোক মেহতা প্রমুখ। এদের মতে, এই বিদ্রোহের কোন সুস্পষ্ট পরিকল্পনা ও উদ্দেশ্য না থাকলেও ইংরেজিবিরোধী এত ব্যাপক আন্দোলন ভারতে আর হয়নি।পি. সি. জোশী তার-‘1857 in Our History’ নামক প্রবন্ধে মহাবিদ্রোহকে ভারতের প্রথম স্বাধীনতা যুদ্ধ বলে মত প্রকাশ করেছেন।

মহাবিদ্রোহের প্রকৃতি
মহাবিদ্রোহের কেন্দ্র ও রাজ্যসমূহ

গণবিদ্রোহঃ

ড.শশীভূষণ চৌধুরী,জে.বি.নর্টন,ম্যালেসন,বল,জনকে বলেছেন এই বিদ্রোহ যেমন সমস্ত শ্রেণীর মানুষ যোগদান করেছিল তেমনি ভারতের সমস্ত অঞ্চল জুড়ে ছড়িয়ে পড়েছিল। তাই একে গণবিদ্রোহ বলা চলে।জে.বি.নর্টন তার ‘ টপিকস ফর ইন্ডিয়ান স্টেটসম্যান গ্রন্থে লিখেন-‘ এই বিদ্রোহ যচনা সিপাহী বিদ্রোহ ছিল তার চেয়ে বেশি ছিল গণবিদ্রোহ’।

সামন্ত শ্রেণীর বিদ্রোহঃ

ড.রজনীপাম দত্ত,ড.সুরেন্দ্রনাথ সেন, মানবেন্দ্রনাথ রায়,ড.রমেশচন্দ্র মজুমদার ১৮৫৭ সালের মহাবিদ্রোহ কে রক্ষণশীল সামন্ততান্ত্রিক অভ্যুত্থান বলে উল্লেখ করেছেন। তাদের মতে, নানা সাহেব, তঁাতিয়া তোপ, লক্ষ্মীবাঈ প্রমুখ সামন্ত শ্রেণীর মানুষ এই বিদ্রোহকে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন।ড.রমেশচন্দ্র মজুমদার একে-‘সামন্ততন্ত্রের মৃত্যুকালীন আর্তনাদ‘ বলে অভিহিত করেছেন।

কৃষক বিদ্রোহঃ

অধ্যাপক শশীভূষণ চৌধুরী,তালমিজ খালদুনের মতে ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের বিদ্রোহ ছিল মূলত কৃষক বিদ্রোহ। তারা বলেছেন-ব্রিটিশ সরকারের জমি সংক্রান্ত নীতি এই বিদ্রোহকে ইন্ধন জুগিয়েছিল।

মুসলমান চক্রান্তঃ

ঐতিহাসিক এইচ. আর. কুরেসি, সৈয়দ মইনুল হক ১৮৯৭ খ্রিস্টাব্দের বিদ্রোহকে মুসলিম চক্রান্ত বলে অভিহিত করেছেন। তাদের মতে, এই বিদ্রোহে সিপাহীরা মুঘল সম্রাট দ্বিতীয় বাহাদুর শাহকে সম্রাট হিসেবে পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করতে চেয়েছিলেন।

উপসংহারঃ

সিপাহী বিদ্রোহের প্রকৃতি কি ছিল তা এক কথায় বলা বেশ কষ্টসাধ্য। এই বিদ্রোহের প্রকৃতি নিয়ে যে মত উঠে এসেছে তার প্রত্যেকটির সুন্নির্দিষ্ট যুক্তি আছে। আবার ওই মতবাদের পাল্টা যুক্তি আছে। তাই এই বিদ্রোহ যে কি ছিল তা সম্পূর্ণভাবে বলা দুসাধ্য।

ধর্ম সংস্কার আন্দোলন রূপে ব্রাহ্ম আন্দোলনের মূল্যায়ন: উত্তরটি দেখতে Click করুন এখানে।

তথ্যসূত্রঃ

এই ব্লগের কাজ করতে Wikipedia এর সাহায্য নেয়া হয়েছে।

১৮৫৭ সালের মহাবিদ্রোহ সম্পর্কে কিছু গুরুত্বপূর্ণ সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন উত্তরঃ

প্রশ্ন: মহাবিদ্রোহ প্রথম কোথায় শুরু হয়েছিল?

উত্তর: ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের ২৯শে মার্চ ব্যারাকপুরে সেনানিবাসে সিপাহী বিদ্রোহের সূত্রপাত করেন মঙ্গল পান্ডে।

প্রশ্ন: সিপাহী বিদ্রোহের প্রথম শহীদ কে?

উত্তর: সিপাহী বিদ্রোহের প্রথম শহীদ হলেন মঙ্গল পান্ডে।

প্রশ্ন: মহাবিদ্রোহের সময় গভর্নর জেনারেল কে ছিলেন?

উত্তর: মহাবিদ্রোহের সময় গভর্নর জেনারেল ছিলেন লর্ড ক্যানিং।

প্রশ্ন: মহাবিদ্রোহে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন কারা?

উত্তর :মহাবিদ্রোহের প্রধান নেতাদের মধ্যে ছিলেন নানা সাহেব, তাঁতিয়া টোপে, ঝাঁসির রানী লক্ষ্মীবাঈ, বিহারের কুঁয়ার সিংহ, এবং মুঘল সম্রাট দ্বিতীয় বাহাদুর শাহ।

প্রশ্ন: সিপাহী বিদ্রোহের প্রত্যক্ষ কারণ কি ছিল?

উত্তর: সিপাহী বিদ্রোহের প্রত্যক্ষ কারণ হলো এনফিল্ড রাইফেলের টোটার প্রচলন।

প্রশ্ন: মুঘল সম্রাট দ্বিতীয় বাহাদুর শাহকে কোথায় নির্বাসন দেয়া হয়েছিল?

উত্তর: দ্বিতীয় বাহাদুর শাহ কে রেঙ্গুনে নির্বাসন দেয়া হয়েছিল

প্রশ্ন: সিপাহী বিদ্রোহের প্রকৃত সূচনা হয় কবে?

উত্তর: সিপাহী বিদ্রোহের প্রকৃত সূচনা হয় ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের ১০ ই মে মিরাট সেনানিবাসে

প্রশ্ন: সিপাহীরা কবে দিল্লি দখল করে?

উত্তর:? ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দে ১১ই মে সিপাহীরা দিল্লি দখল করে।

প্রশ্ন: মহাবিদ্রোহ কি সফল হয়েছিল?

উত্তর: মহাবিদ্রোহ সামরিকভাবে ব্যর্থ হলেও এটি ভারতীয় স্বাধীনতা সংগ্রামের পথপ্রদর্শক হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।

প্রশ্ন: ‘ভাইসরয়’ শব্দের অর্থ কি?

উত্তর: রাজ প্রতিনিধি

আরো পড়ুনঃ

Sharing Is Caring:

Leave a Comment