ইতিহাস, দশম শ্রেণী

ভারতসভার(1876 খ্রী:)কার্যাবলী আলোচনা কর।

Admin

No Comments

উনিশ শতকের দ্বিতীয়ার্ধে জাতীয় কংগ্রেস প্রতিষ্ঠার পূর্বে ভারতে যে সমস্ত রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছিল তার মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী সংগঠন ছিল ‘ভারতসভা’ বা ‘ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন‘।

১৮৭৬ খ্রিস্টাব্দের ২৬ শে জুলাই কলকাতার এলবার্ট হলে(বর্তমান কলেজ স্ট্রিটের কফি হাউস) ভারতের সংগঠিত রাজনৈতিক আন্দোলনের জনক সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ‘ভারত সভা’ বা ‘ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন’। নানা কর্মকাণ্ডের মধ্য দিয়ে সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় হয়ে উঠেছিলেন ভারত সভার প্রাণপুরুষ, তিনি রাষ্ট্রগুরু নামে পরিচিত। তিনি ‘বাংলার মুকুটহীন রাজা‘ হয়ে উঠেছিলেন । তার বিখ্যাত গ্রন্থটি হল-‘এ নেশন ইন মেকিং’। এই গ্রন্থ থেকে ভারত সভা সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য পাওয়া যা। এই সংগঠন প্রতিষ্ঠায় সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়ের সহযোগীরা হলেন আনন্দ মোহন বসু, শিবনাথ শাস্ত্রী, তারকনাথ গঙ্গোপাধ্যায় প্রমুখ।

Table of Contents

ভারতসভার কার্যাবলীঃ

ভূমিকাঃ

ভারত সভা (Indian Association) প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ১৮৭৬ সালে ২৬ শে জুলাই কলকাতার এলবার্ট হলে। সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় চেয়েছিলেন ইতালির ঐক্য আন্দোলনের পুরোধা ম্যাৎসিনির ‘ইয়াং ইতালি‘র মতো একটি রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে। তাই আনন্দ মোহন বসু, শিবনাথ শাস্ত্রী, তারকনাথ গঙ্গোপাধ্যায় প্রমুখের সহযোগিতায় এই প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছিলেন।এটি ছিল ব্রিটিশ ভারতে প্রথম জাতীয় স্তরের রাজনৈতিক সংগঠনগুলোর অন্যতম। ভারত সভার মূল লক্ষ্য ছিল ব্রিটিশ সরকারের শাসন নীতির সমালোচনা, ভারতীয়দের অধিকার রক্ষা এবং জাতীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠা।

কৃষক সমস্যার সমাধানঃ

ভারত সভার সদস্যরা জমিদারদের অত্যাচার থেকে কৃষকদের রক্ষা করার জন্য বাংলার নানাস্থানে বেশ কিছু রায়ত সভা বা কৃষক সভা প্রতিষ্ঠা করেছিল। এই সভা ১৮৫৯ খ্রিস্টাব্দে ‘Rent Act’ ও পাবনা কৃষক বিদ্রোহকে কেন্দ্র করে কৃষকদের পক্ষে আন্দোলনে নেমেছিল। ১৮৮৪ খ্রিস্টাব্দের প্রজাস্বত্ব আইনের খসড়ার বিরুদ্ধে ভারত সভা প্রতিবাদ জানিয়েছিল।

সিভিল সার্ভিসের জন্য আন্দোলনঃ

ভারতীয়রা যাতে উচ্চরাজ পদে নিযুক্ত হতে না পারে, সে জন্য ১৮৭৬ খ্রিস্টাব্দের ২৪ শে ফেব্রুয়ারি লর্ড লিটন সিভিল সার্ভিসের ভারতীয় শিক্ষার্থীদের বয়স ২১ থেকে কমিয়ে ১৯ করেছিল। এর প্রতিবাদে ভারত সভা তীব্র আন্দোলন শুরু করেছিল। এমনকি এই আইন সংশোধনের জন্য সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় ব্রিটিশ পার্লামেন্টে বিখ্যাত বাগ্মী লাল মোহন ঘোষ কে পাঠিয়েছিলেন। শেষ পর্যন্ত ব্রিটিশ সরকার ভারতীদের এই দাবি অনেকাংশে মেনে নিয়ে ‘স্ট্যাটুটারি সিভিল সার্ভিস’ প্রবর্তন করেছিল।

ভার্নাকুলার প্রেস অ্যাক্টের প্রতিবাদঃ

১৮৭৮ খ্রিস্টাব্দে লর্ড লিটন ‘ভার্নাকুলার প্রেস অ্যাক্ট‘ বা মাতৃভাষা সংবাদপত্র আইন প্রণয়ন করে দেশীয় ভাষায় প্রকাশিত সংবাদপত্র গুলির উপর নানা রকম বিধিনিষেধ আরোপ করে ভারতীয়দের বাক স্বাধীনতা হরণ করে। এর প্রতিবাদে সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় নেটিভ প্রেস অ্যাসোসিয়েশন প্রতিষ্ঠা করে। ফলে মাতৃভাষা সংবাদপত্র আইন বাতিল হয়।

ভারতসভা
সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়

অস্ত্র আইনের প্রতিবাদঃ

লর্ড লিটন ১৮৭৮ খ্রিস্টাব্দে ‘অস্ত্র আইন‘ প্রণয়ন করে। এই আইনে কোন ভারতীয় সরকারের অনুমতি ছাড়া আগ্নেয় অস্ত্র রাখতে পারতো না। কিন্তু ইউরোপীয়রা এই আইনের বাহিরে ছিল। ভারতীয়দের নিরস্ত্র করার এই বৈষম্য নীতির বিরুদ্ধে ভারত সভার জোরদার আন্দোলন গড়ে তুলেছিল। ফলে লর্ড রিপন এই আইন প্রত্যাহার করেছিলেন।

ইলবার্ট বিল আন্দোলনঃ

১৮৮৩ খ্রিস্টাব্দে লর্ড রিপন ইলবার্ট বিল প্রবর্তন করে বিচার ব্যবস্থায় বৈষম্য দূর করার চেষ্টা করলে, ইউরোপীয়রা এর তীব্র বিরোধিতা করে। এই সময় ভারত সভা এই বিলের স্বপক্ষে জোরালো আন্দোলন ও জনমত গঠন করে।

অন্যান্য আন্দোলন

এছাড়া ভারত সভা প্রতিনিধিত্বমূলক শাসন পরিষদ গঠন, স্বায়ত্তশাসন প্রবর্তন, মদ্যপার নিষিদ্ধ, স্বদেশী আন্দোলন গড়ে তোলার দাবিতে আন্দোলন চালিয়েছিল।

উপসংহারঃ

ভারত সভা একটি গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক সংগঠন, যা ভারতের প্রথম দিকের জাতীয় আন্দোলনের ভিত্তি তৈরি করেছিল। এটি ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে জাতীয় ঐক্য এবং রাজনৈতিক চেতনা জাগিয়ে তোলার মাধ্যমে ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রাথমিক স্তরে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

1857 সালের মহাবিদ্রোহের প্রকৃতি ও চরিত্র আলোচনা কর। প্রশ্নের উত্তরটি দেখতে Click করোনা এখানে।

ভারত সভার প্রতিষ্ঠা ও বিকাশে সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভূমিকা

আদর্শ ও সংগঠনের বিস্তারঃ

ভারত সভা কে একটি সর্বভারতীয় সংগঠন হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার দেশের সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে পরিভ্রমণ করে ভারত সভার মূল লক্ষ্য ও আদর্শ প্রচার করেন। তার অসাধারণ বাগ্মীতা ও আদর্শ মুগ্ধ হয়ে বাংলার গ্রাম অঞ্চলে ১২৪টি শাখা প্রতিষ্ঠিত হয়। এছাড়া বাংলার বাহিরে উত্তর প্রদেশ, বোম্বাই, মাদ্রাজ প্রভৃতি স্থানে আরো অনেক শাখা গড়ে ওঠে।

সর্ব ভারতীয় জাতীয় আন্দোলনঃ

সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় উপলব্ধি করেন, ভারতীয় কোন প্রতিষ্ঠান ছাড়া সরকারের বিরুদ্ধে কোন কার্যকরি প্রতিরোধ সম্ভব নয়। তাই ১৮৮৩ খ্রিস্টাব্দে ভারত সভার উদ্যোগে এবং সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় ও আনন্দমোহন বসুর চেষ্টায় কলকাতার অ্যালবার্ট হলে জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলের প্রায় শতাধিক প্রতিনিধিদের নিয়ে একটি সর্বভারতীয় জাতীয় সম্মেলনের আহবান করা হয় এই সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন রামতনু লাহিড়ী। এই সম্মেলনের আদর্শ ও গৃহীত প্রস্তাবের উপর ভিত্তি করেই পরবর্তীকালে ১৮৮৫ খ্রিস্টাব্দে ভারতের জাতীয় কংগ্রেস প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৮৮৬ খ্রিস্টাব্দে জাতীয় কংগ্রেসের দ্বিতীয় অধিবেশনে ভারত সভা জাতীয় কংগ্রেসের সাথে মিশে যায়।

বিদ্র: এর সাথে ভারত সবার কার্যাবলী যোগ করতে হবে।

তথ্যসূত্রঃ

এই ব্লগের কাজ করতে Wikipedia এর সাহায্য নেয়া হয়েছে।

ভারতসভা থেকে কিছু গুরুত্বপূর্ণ সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন-উত্তরঃ

প্রশ্ন: ভারত সভার প্রথম সভাপতি কে ছিলেন?

উত্তর: ভারত সভার প্রথম সভাপতি ছিলেন- রেফারেন্ট কৃষ্ণমোহন বন্দ্যোপাধ্যায়।

প্রশ্ন: ভারত সভার প্রথম সম্পাদক কে ছিলেন?

উত্তর: ভারত সভার প্রথম সম্পাদক ছিলেন-আনন্দমোহন বসু।

প্রশ্ন: ভারত সভার মুখপত্র ছিল কোন পত্রিকা?

উত্তর: ভারত সভার মুখপত্র ছিল-বেঙ্গলী পত্রিক।

প্রশ্ন: ভারত সভার মূল উদ্দেশ্য কি ছিল?

উত্তর: ভারত সভার মূল উদ্দেশ্য ছিল-দেশের শক্তিশালী জনমত গঠন করে, হিন্দু ও মুসলিমদের মধ্যে ঐক্যবোধ গঠন করা, জনসাধারণকে গণআন্দোলনে শামিল করা।

প্রশ্ন: সর্বভারতীয় জাতীয় সম্মেলনে সভাপতিত্ব কে করেন?

উত্তর: সর্বভারতীয় জাতীয় সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন-রামতনু লাহিড়ী।

প্রশ্ন: কফি হাউসের পূর্ব নাম কি ছিল?

উত্তর: কফি হাউসের পূর্ব নাম ছিল-অ্যালবার্ট হল।

প্রশ্ন: ‘এ নেশন ইন মেকিং’ গ্রন্থটি কার রচনা?

উত্তর: ‘এ নেশন ইন মেকিং’ বিখ্যাত গ্রন্থটি রচনা করেছিলেন সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়।

প্রশ্ন: ভারত সভার প্রাণপুরুষ কে ছিলেন?

উত্তর: ভারত সভার প্রাণপুরুষ ছিলেন সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়।

প্রশ্ন: ভারত সভা কোন বিলের বিরোধিতা করেনি?

উত্তর: ভারত সভা ইলবার্ট বিলের বিরোধিতা করেনি।

প্রশ্ন: ‘রাষ্ট্রগুরু’ নামে কে পরিচিত?

উত্তর: ‘রাষ্ট্রগুরু’ নামে সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় পরিচিত।

আরো পড়ুন

Sharing Is Caring:

Leave a Comment