ডা.মহেন্দ্রলাল সরকার (১৮৩৩-১৯০৪ খ্রিষ্টাব্দ) ছিলেন একজন বিশিষ্ট চিকিৎসক, সমাজ সংস্কারক এবং সর্বোপরি একজন দূরদর্শী ভারতীয়। তিনি বাংলায় বিজ্ঞান চর্চার বিকাশে অসামান্য ভূমিকা রেখেছিলেন।
মহেন্দ্রলাল সরকার ১৮৩৩ খ্রিস্টাব্দের ২ নভেম্বর কলকাতার কাছে বেঙ্গল প্রেসিডেন্সির অন্তর্গত হাওড়া জেলার পাইকপাড়া(মুন্সিরহাট) গ্রামে এক সদগোপ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন।
বাংলায় বিজ্ঞান চর্চার বিকাশে ডা.মহেন্দ্রলাল সরকারের কি রূপ অবদান ছিল?
ভূমিকাঃ
ডা. মহেন্দ্রলাল সরকার ছিলেন একজন প্রথিতযশা ভারতীয় চিকিৎসক এবং বিজ্ঞানী, যিনি বাংলায় বিজ্ঞান চর্চার বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। তিনি শুধু চিকিৎসাশাস্ত্রের উন্নতি ঘটাননি, বরং বিভিন্ন ক্ষেত্রে বৈজ্ঞানিক গবেষণা এবং শিক্ষা প্রসারে অমূল্য অবদান রেখেছেন। তাঁর অবদানকে বিভিন্ন দিক থেকে বিশ্লেষণ করা যেতে পারে।
হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা প্রচলনঃ
১৮৬৩ খ্রিস্টাব্দে মহেন্দ্রলাল সরকার এম.ডি ডিগ্রী লাভ করে এলোপ্যাথি চর্চা শুরু করেন। পরে রাজেন্দ্রলাল দত্ত, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের প্রেরণায় তিনি হোমিওপ্যাথি ইতিহাসে বিশ্বের অন্যতম সেরা হোমিওপ্যাথি বিশেষজ্ঞ হিসেবে চিকিৎসায় মনোনিবেশ করেন এবং চিকিৎসা বিজ্ঞানকে সুপ্রতিষ্ঠিত করেন। চিকিৎসা বিজ্ঞানে নিজের মতামত প্রকাশের জন্য ১৮৬৭ খ্রিস্টাব্দে তিনি প্রকাশ করেন ‘Calcutta Journal of Medicin‘ পত্রিকা।
IACS-এর প্রতিষ্ঠাঃ
ডা. মহেন্দ্রলাল সরকার ১৮৭৬ সালে কলকাতায় “ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন ফর দ্য কাল্টিভেশন অব সায়েন্স” বা “ভারতবর্ষীয় বিজ্ঞান সভা” প্রতিষ্ঠা করেন। এটি ছিল বাংলা ও ভারতের প্রথম বৈজ্ঞানিক গবেষণাগার, যেখানে পদার্থবিজ্ঞান ও রসায়ন বিজ্ঞানের গবেষণা ও আলোচনা চালানো হতো। এটি ভারতের বিজ্ঞানী ও গবেষকদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ প্ল্যাটফর্ম হিসেবে কাজ করে।
গবেষণাপত্র প্রকাশঃ
মহেন্দ্রলাল সরকার প্রতিষ্ঠিত IACS থেকে তার নিজস্ব পত্রিকা প্রকাশ করে। এই বিজ্ঞান সংস্থার বিজ্ঞানীদের গবেষণাপত্র প্রকাশের জন্য প্রকাশিত হয় ‘ইন্ডিয়ান জার্নাল অফ ফিজিক্স‘ নামে একটি পত্রিকা।

বিজ্ঞান গবেষণা ও আবিষ্কারঃ
IACS-যে সমস্ত গবেষক কাজ করেছেন তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন জগদীশচন্দ্র বসু,, চন্দ্রশেখর ভেক্টর রমন, মেঘনাথ সাহা, কে এস কৃষ্ণান প্রমুখ। এই প্রতিষ্ঠানে গবেষণা করেই বিজ্ঞানী চন্দ্রশেখর ভেক্টর রমন ‘রমন এফেক্ট’ আবিষ্কার করে ১৯৩০ সালে পদার্থবিদ্যায় নোবেল পুরস্কার লাভ করেন।
নারী শিক্ষায় উৎসাহদানঃ
তিনি নারীদের মধ্যে যুক্তি ও বৈজ্ঞানিক সচেতনতা বৃদ্ধিতে উদ্যোগী হন। তার পরামর্শে ব্রিটিশ সরকার বিবাহ বিধি (Marriage Act III,1872) প্রণয়নে মেয়েদের বিবাহের বয়স কমপক্ষে ১৬ বছর করার সিদ্ধান্ত নেয়।
উপসংহারঃ
সামগ্রিকভাবে, ডা. মহেন্দ্রলাল সরকারের অবদান ছিল এক বিশাল শক্তি, যা ভারতীয় বিজ্ঞানী সমাজকে সমৃদ্ধ করেছে এবং বিজ্ঞান চর্চার জন্য একটি শক্তিশালী ভিত্তি তৈরি করেছে। তাঁর প্রচেষ্টায় বাংলায় বৈজ্ঞানিক চর্চার প্রথম দিকের প্রবর্তন ঘটেছিল, যা পরবর্তীকালে আরও অনেক বিজ্ঞানীর কাজকে প্রভাবিত করেছিল।
‘গোরা’ উপন্যাসে রবীন্দ্রনাথের জাতীয়তাবাদী ভাবধারার পরিচয়: সম্পূর্ণ উত্তরটি দেখতে Click করুন এখানে।
তথ্যসূত্রঃ
এই ব্লগের কাজ করতে Wikipedia এর সাহায্য নেয়া হয়েছে।
বিজ্ঞান চর্চা ও মহেন্দ্রলাল সরকার থেকে কিছু গুরুত্বপূর্ণ সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন-উত্তরঃ
প্রশ্ন: ডা. মহেন্দ্রলাল সরকার কে ছিলেন?
উত্তর: ডা. মহেন্দ্রলাল সরকার একজন বিশিষ্ট ভারতীয় চিকিৎসক, সমাজ সংস্কারক এবং বিজ্ঞানী ছিলেন। তিনি বাংলায় বিজ্ঞান চর্চার বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন।
প্রশ্ন: তিনি কোন প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করেছিলেন?
উত্তর: তিনি ১৮৭৬ সালে কলকাতায় “ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন ফর দ্য কাল্টিভেশন অব সায়েন্স” বা “ভারতবর্ষীয় বিজ্ঞান সভা” প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।
প্রশ্ন: IACS কি?
উত্তর: IACS হল “ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন ফর দ্য কাল্টিভেশন অব সায়েন্স” এর সংক্ষিপ্ত রূপ। এটি ভারতের প্রথম বৈজ্ঞানিক গবেষণাগার।
প্রশ্ন: ডা. মহেন্দ্রলাল সরকার হোমিওপ্যাথি চিকিৎসায় কীভাবে অবদান রেখেছেন?
উত্তর: ডা. মহেন্দ্রলাল সরকার হোমিওপ্যাথি চিকিৎসার প্রসারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। তিনি চিকিৎসার আধুনিক পদ্ধতি হিসেবে হোমিওপ্যাথিকে প্রতিষ্ঠিত করেন এবং ১৮৬৭ সালে ‘Calcutta Journal of Medicine’ পত্রিকা প্রকাশ করেন।
প্রশ্ন: ডা. মহেন্দ্রলাল সরকারের প্রতিষ্ঠিত পত্রিকার নাম কী ছিল?
উত্তর: তিনি ‘Calcutta Journal of Medicine’ নামে একটি চিকিৎসা পত্রিকা প্রকাশ করেন এবং IACS থেকে ‘Indian Journal of Physics’ নামে বিজ্ঞানীদের গবেষণাপত্র প্রকাশিত হত।
প্রশ্ন: ডা. মহেন্দ্রলাল সরকারের গবেষণায় কোন গুরুত্বপূর্ণ বিজ্ঞানী কাজ করেছেন?
উত্তর: IACS-এ জগদীশচন্দ্র বসু, চন্দ্রশেখর ভেক্টর রমন, মেঘনাথ সাহা, ও কে এস কৃষ্ণান প্রমুখ বিজ্ঞানীরা কাজ করেছেন। চন্দ্রশেখর রমন IACS-এ গবেষণা করে ‘রমন এফেক্ট’ আবিষ্কার করেন এবং ১৯৩০ সালে পদার্থবিদ্যায় নোবেল পুরস্কার পান।
প্রশ্ন: ডা. মহেন্দ্রলাল সরকার নারীদের শিক্ষা প্রসারে কী কাজ করেছিলেন?
উত্তর: তিনি নারীদের মধ্যে যুক্তি ও বৈজ্ঞানিক সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। তাঁর পরামর্শে ব্রিটিশ সরকার ১৮৭২ সালে ‘Marriage Act III’ প্রণয়ন করে, যা মেয়েদের বিবাহের বয়স কমপক্ষে ১৬ বছর নির্ধারণ করে।
প্রশ্ন: IACS-এ কোন বিজ্ঞানীরা কাজ করেছেন?
উত্তর: জগদীশচন্দ্র বসু, চন্দ্রশেখর ভেক্টর রমন, মেঘনাদ সাহা, কে এস কৃষ্ণান প্রমুখ বিজ্ঞানীরা IACS-এ কাজ করেছেন।
প্রশ্ন: ডা. সরকার কোন চিকিৎসা পদ্ধতিতে বিশ্বাসী ছিলেন?
উত্তর: তিনি প্রথমে এলোপ্যাথি চর্চা করলেও পরে হোমিওপ্যাথি চিকিৎসায় মনোনিবেশ করেছিলেন এবং তিনি হোমিওপ্যাথি ইতিহাসে বিশ্বের অন্যতম সেরা বিশেষজ্ঞ হিসেবে পরিচিত।
প্রশ্ন: ডা. মহেন্দ্রলাল সরকারের সমাজ সংস্কারক হিসেবে কী ভূমিকা ছিল?
উত্তর: তিনি সমাজ সংস্কারক হিসেবে নারীদের জন্য শিক্ষা, বিবাহ আইন ও বৈজ্ঞানিক সচেতনতা বৃদ্ধিতে কাজ করেন। তার প্রচেষ্টায় নারীদের জন্য বৈজ্ঞানিক এবং শিক্ষা ক্ষেত্রের সুযোগ বৃদ্ধি পায় এবং তিনি ব্রিটিশ সরকারের বিবাহ আইন সংশোধনে সহায়ক ভূমিকা পালন করেন।





