একা আন্দোলন সংঘটিত হয়েছিল অসহযোগ আন্দোলন চলাকালে মাদারি পাসির নেতৃত্ব ১৯২১-২২ খ্রি: উত্তরপ্রদেশের হরদই, বারাবাঁকি, সীতাপুর প্রভৃতি জেলায়।
এই আন্দোলনের মূল কারণ ছিল-কৃষকদের নির্ধারিত পরের উপর অতিরিক্ত আরো ৫০ শতাংশ কর আরোপ, কর আদায়ের জন্য কৃষকদের উপর ঠিকাদাদের চরম অত্যাচার, প্রভুর জমি ও খামারে কৃষককে বিনা বেতনে বেকার শ্রম দিতে বাধ্য করা, উৎপন্ন শস্যের বদলে নগদ অর্থে কর প্রদান ইত্যাদি। এই আন্দোলনে মাদারি পাসির নেতৃত্বে খুবই শক্তিশালী হয়ে উঠেছিল। আরো এক নেতা ছিলেন বাবা গরিব দাস যিনি স্বরাজের দাবি করেছিলেন। আন্দোলন চলাকালে যে কোন অবস্থায় কৃষকরা ঐক্যবদ্ধ থাকার শপথ নিয়েছিল। তাই এই আন্দোলনের নাম হয় ‘একা’ বা ‘একতা’ বা ‘ঐক্য’ আন্দোলন।
এই আন্দোলনে কৃষকরা শপথ নেয় যে- নির্দিষ্ট সময়ে নির্ধারিত খাজনা ছাড়া অতিরিক্ত খাজনা দেবে না, জমি থেকে উচ্ছেদ করা হলেও তারা জমি ছেড়ে যাবে না, রশিদ ছাড়া খাজনা দেবে না, জমিদারের জমিতে বেগার খাটবে না, সর্বক্ষেত্রে কৃষকরা ঐক্যবদ্ধ থাকবে ইত্যাদি।
একা আন্দোলনের একটি সমালোচনামূলক বিবরণ দাও।
ভূমিকাঃ
১৯২০-২২ খ্রিস্টাব্দে গান্ধীজীর নেতৃত্বে সংঘটিত হয় অহিংস অসহযোগ আন্দোলন। এই আন্দোলনের ছায়ায় (বর্তমান উত্তর প্রদেশ)উত্তর-পশ্চিম অযোধ্যায় অউন্নত সম্প্রদায়ের চরমপন্থী নেতা মাদারী পাসির নেতৃত্বে একা আন্দোলন সংঘটিত হয়। এটি ছিল মূলত অত্যাচারী জমিদার ও ঠিকাদারদের বিরুদ্ধে সংগঠিত একটি আঞ্চলিক কৃষক আন্দোলন। তবুও এই আন্দোলনের প্রকৃতি ও প্রভাব নানা দিক থেকে সমালোচিত হয়েছে।
আন্দোলনের বিচ্ছিন্নতা ও জাতীয় নেতৃত্বের অসমর্থনঃ
সূচনা পর্বে একা আন্দোলন কংগ্রেসী নেতৃত্ববৃন্দের সমর্থন লাভ করে এবং অসহযোগ আন্দোলনের অন্তর্ভুক্ত হয়। পরে আন্দোলনে হিংসাত্মক হয়ে উঠলে কংগ্রেসী নেতৃত্ববৃন্দ আন্দোলন ছেড়ে বেরিয়ে যায়। এতে আন্দোলনটি জাতীয় আন্দোলন থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে এবং কৌশলগত দিক থেকে দুর্বল হয়ে যায়।
আন্দোলনের শ্রেণীগত সীমাবদ্ধতাঃ
নিম্নবর্গীয় দলিত ও কৃষক শ্রেণি একা আন্দোলনে অংশগ্রহণ করলেও, সমাজের উচ্চবিত্ত বা শহুরে মধ্যবিত্ত শ্রেণির অংশগ্রহণ সীমিত ছিল। এতে আন্দোলনের গণভিত্তি দুর্বল থাকে এবং তা সামগ্রিক জাতীয় চেতনা গঠনে ব্যর্থ হয়।
বৈপ্লবিক কর্মকাণ্ডঃ
একা আন্দোলনক্রমে সশস্ত্র রূপ পরিগ্রহ করে। জমিদার ও তালুকদারদের ঘরবাড়ি ও খামার আক্রান্ত হয়। কুমায়ুন অঞ্চলে হাজার হাজার মাইল অরণ্যে অগ্নি সংযোগ করা হয়। মাদারি পাসি তার অনুগামীদের স্থানীয় জেলা শাসককে হত্যা করতে ইন্ধন দেন। যা গান্ধীজীর অহিংস আন্দোলনের বিপরীত ছিল।
পরিকল্পনার অভাব ও দমন
আন্দোলনটি তাৎক্ষণিক ক্ষোভ থেকে সৃষ্টি হয়। যার জন্য দীর্ঘমেয়াদি কোনো পরিকল্পনা বা সংগঠিত রূপ ছিল না। ফলে ব্রিটিশ প্রশাসন সহজেই কঠোরভাবে এই আন্দোলন দমন করতে সক্ষম হয়। মাদারি পাশিসহ অনেক নেতাকে গ্রেপ্তার করা হয় এবং কৃষকদের উপর কঠোর দমননীতি চালানো হয়।
উপসংহারঃ
সার্বিকভাবে বলা যায়, একা আন্দোলন একটি স্বল্পস্থায়ী, আঞ্চলিক, কৃষকভিত্তিক প্রতিরোধ আন্দোলন। যা ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসন এবং স্থানীয় জমিদার-মহাজনদের অন্যায়ের বিরুদ্ধে এক আত্মিক প্রতিবাদ। এর হিংসাত্মক রূপ, জাতীয় নেতৃত্বের অভাব এবং সংগঠনের দুর্বলতা আন্দোলনটিকে একটি সীমিত আঞ্চলিক বিদ্রোহে পরিণত করে। তাই একে একটি সাহসী কিন্তু সীমাবদ্ধ প্রচেষ্টা বলেই চিহ্নিত করা যায়।
বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলনে শ্রমিক শ্রেণীর ভূমিকা কি ছিল ? সম্পূর্ণ উত্তর দেখতে Click করুণ এখানে ।
তথ্যসূত্রঃ
এই ব্লগের কাজ করতে Wikipedia এর সাহায্য নেওয়া হয়েছে।
একা আন্দোলন থেকে কিছু গুরুত্বপূর্ণ সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন-উত্তরঃ
প্রশ্ন: একা আন্দোলন কবে ও কোথায় সংঘটিত হয় ?
উত্তর: একা আন্দোলন ১৯২১-১৯২২ খ্রিস্টাব্দে উত্তরপ্রদেশের হরদই, বারাবাঁকি, সীতাপুর প্রভৃতি জেলায় সংঘটিত হয়।
প্রশ্ন: ঐক্য আন্দোলনের প্রধান নেতা কে ছিলেন ?
উত্তর: ঐক্য আন্দোলনের প্রধান নেতা ছিলেন মাদারি পাসি। এছাড়াও বাবা গরিব দাস নামে আরেকজন নেতা স্বরাজের দাবি তোলেন।
প্রশ্ন: একতা আন্দোলনের মূল কারণ কী ছিল ?
উত্তর: অতিরিক্ত কর আরোপ, বেগার শ্রমে বাধ্য করা, শস্যের বদলে নগদ কর আদায়, ও ঠিকাদারদের অত্যাচার — এইসব ছিল একা আন্দোলনের মূল কারণ।
প্রশ্ন: ঐক্য আন্দোলনের নাম ‘একা’ বা ‘একতা’ বা ‘ঐক্য’ কেন রাখা হয় ?
উত্তর: কারণ কৃষকরা এই আন্দোলনে শপথ নেয় যে তারা যেকোনো অবস্থায় ঐক্যবদ্ধ থাকবে এবং একে অপরকে সহায়তা করবে। এই ঐক্য থেকেই নামকরণ।
প্রশ্ন: কংগ্রেস শুরুতে একা আন্দোলনের সমর্থন করলেও পরে কেন তা প্রত্যাহার করে ?
উত্তর: আন্দোলনটি হিংসাত্মক হয়ে ওঠায় কংগ্রেস ও গান্ধীজি তা সমর্থন করা বন্ধ করে দেন, কারণ এটি অহিংস নীতির পরিপন্থী ছিল।
প্রশ্ন: ঐক্য আন্দোলনে কৃষকদের প্রধান দাবিগুলো কী ছিল?
উত্তর: নির্ধারিত সময়ে নির্ধারিত খাজনা ছাড়া অতিরিক্ত কর না দেওয়া, জমি থেকে উচ্ছেদ হলেও জমি না ছাড়া, রসিদ ছাড়া খাজনা না দেওয়া, বেগার না খাটা প্রভৃতি।
প্রশ্ন: একতা আন্দোলনের একটি গুরুত্বপূর্ণ নেতিবাচক দিক কী ছিল ?
উত্তর: আন্দোলনটি হিংসার পথে গিয়ে পড়ে—ঘরবাড়ি জ্বালানো, হত্যার পরিকল্পনা ইত্যাদি ঘটে, যা অহিংস আন্দোলনের নীতির বিরোধী।
প্রশ্ন: একা আন্দোলনে কোন শ্রেণির মানুষ বেশি অংশগ্রহণ করেছিল ?
উত্তর: প্রধানত নিম্নবর্গীয় দলিত ও কৃষক শ্রেণির মানুষ অংশগ্রহণ করেছিল। উচ্চবিত্ত ও শহুরে শ্রেণির অংশগ্রহণ তুলনামূলকভাবে কম ছিল।
প্রশ্ন: একতা আন্দোলনের সংগঠনের কোন বড় দুর্বলতা ছিল ?
উত্তর: এর কোনো দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা বা সংগঠিত কাঠামো ছিল না, যার ফলে ব্রিটিশ প্রশাসন সহজেই এটি দমন করতে সক্ষম হয়।
প্রশ্ন: একা আন্দোলনের ঐতিহাসিক মূল্যায়ন কীভাবে করা যায় ?
উত্তর: এটি ছিল একটি সাহসী আঞ্চলিক কৃষক বিদ্রোহ, যা ব্রিটিশ শাসন ও জমিদার শোষণের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানালেও হিংসা, বিচ্ছিন্নতা ও দুর্বল নেতৃত্বের কারণে সীমিত প্রভাব ফেলেছিল।