ইতিহাস, দশম শ্রেণী

‘গোরা’ উপন্যাসে রবীন্দ্রনাথের জাতীয়তাবাদী ভাবধারার পরিচয়।

Admin

No Comments

গোরা‘ উপন্যাসটি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা। এটি ১৮৮০-এর দশকে ব্রিটিশ রাজত্বকালের সময়কার কলকাতার পটভূমিতে লেখা।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘গোরা’ (১৯১০) উপন্যাসটি তাঁর অন্যতম শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি। এই উপন্যাসে তিনি ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে ভারতীয় জাতীয়তাবাদ এবং সামাজিক ও ধর্মীয় সংস্কারের প্রয়োজনীয়তাকে তুলে ধরেছেন। ‘গোরা’ মূলত রবীন্দ্রনাথের জাতীয়তাবাদী আদর্শের একটি শৈল্পিক উপস্থাপনা।

গোরা উপন্যাস দুই প্রেমিক জুটির দুটি সমান্তরাল প্রেমের গল্প নিয়ে গঠিত: গোরা এবং সুচরিতা, বিনয় এবং ললিতা। এতে উনিশ শতকের শেষদিকে ভারতে প্রচলিত সামাজিক ও রাজনৈতিক সমস্যার পটভূমিতে তাদের আবেগপূর্ণ ক্রমবিকাশ দেখানো হয়েছে।

Table of Contents

‘গোরা’ উপন্যাসে রবীন্দ্রনাথের জাতীয়তাবাদী ভাবধারার পরিচয় দাও।

ভূমিকাঃ

‘গোরা’ উপন্যাসটি রবীন্দ্রনাথের চিন্তাভাবনা, সমাজ সচেতনতা এবং জাতীয়তাবাদী দৃষ্টিভঙ্গির প্রতিফলন। এখানে তিনি ভারতীয় সমাজের ঐক্য এবং জাতীয় চেতনার উপর জোর দিয়েছেন।

প্রকৃত ভারতের রূপঃ

গোরা উপন্যাসে, গোড়ার চোখে দেশের অগণিত দরিদ্র মানুষের দুঃখ কষ্ট ধরা পড়েছে। । অশিক্ষিত মানুষের প্রতি এদেশীয় ইংরেজি জানা তথাকথিত শিক্ষিত ও ভদ্রবেশী মানুষের অবজ্ঞা ও বিদ্রূপ তাকে গভীরভাবে আহত করেছে।

গোরার উদ্যোগঃ

গোরার উপলব্ধিতে, শহরের শিক্ষিত মানুষের চেয়ে পল্লীগ্রামের মানুষ অনেক সহজ সরল। তবে যথাযথ শিক্ষার প্রসার না ঘটায় এদের মধ্যে অনেকেই কুসংস্কার আচ্ছন্ন হয়ে থাকে। এরা প্রয়োজনে মানুষকে বিপদে সহায়তা বা ভরসা দেয় না। বরং সামাজিক আচার বিচারের কথা বলে মানুষে মানুষে বিভাজন তৈরি করে। গোরা এরূপ সমাজের ওপর তীব্র আঘাত হেনে তাকে উজ্জীবিত করতে চেয়েছে।

ধর্মীয় পরিচয় এর গুরুত্বহীনতাঃ

ব্রাহ্ম ধর্মের অনুরাগী গোড়া ভারত বর্ষ ও ভারতীয়দের প্রতি ব্রিটিশদের ঘৃণা ও বিদ্বেষ লক্ষ্য করে উগ্র হিন্দুত্ববাদী আদর্শের প্রতি আকৃষ্ট হয়। কিন্তু পরে তার দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন ঘটে এবং সে উপলব্ধি করে যে, ধর্মীয় পরিচয় সবচেয়ে বড় পরিচয় বা একমাত্র পরিচয় নয়।

'গোরা' উপন্যাস
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

নারীর ভূমিকাঃ

‘গোরা’ উপন্যাসে নারী চরিত্র যেমন আনন্দময়ী, ললিতা এবং সুচরিতা শুধু গৃহবন্দি নয়, বরং তারা সমাজ সংস্কার এবং জাতীয়তাবাদের ক্ষেত্রেও ভূমিকা রেখেছে।

ঐতিহ্যের প্রতি শ্রদ্ধাঃ

রবীন্দ্রনাথের ‘গোরা’ বর্ণবৈষমের তীব্র নিন্দা করে। ব্রিটিশ বিরোধিতা ও স্বদেশ প্রেমের আদর্শ প্রচার করে। এছাড়া সুপ্রাচীন ভারতীয় ঐতিহ্যে মুগ্ধ হয়। সে সংকল্পবদ্ধ হয় যে, স্বদেশের প্রতি দেশবাসীর শ্রদ্ধা ফিরিয়ে আনাই হলো আসল কাজ।

দেশাত্মবোধের প্রচারঃ

গোরা উপন্যাসে রবীন্দ্রনাথ বোঝাতে চেয়েছিলেন, ধর্মীয় সংকীর্ণতা জাতীয়তা বোধের পরিপন্থী। এর দ্বারা মানব গোষ্ঠী বা জাতির কোন মঙ্গলসাধন হয় না। তাই রবীন্দ্রনাথ গোড়ার মাধ্যমে বলেছিলেন ” আমি আজ ভারতবর্ষীয়। আমার মধ্যে হিন্দু মুসলমান খ্রিস্টান কোন সমাজের কোন বিরোধ নেই। আজ এই ভারতবর্ষের সকলের জাত আমার জাত। সকলের অন্ন আমার অন্ন।” গোরা তার জীবন শুরু করেছিলেন হিন্দুত্ব দিয়ে, শেষ করলেন বিশ্ব মানবতয়।

উপসংহারঃ

‘গোরা’ উপন্যাসে রবীন্দ্রনাথ কেবল একটি গল্পই লেখেননি; বরং ভারতীয় জাতীয়তাবাদের একটি সুষ্পষ্ট দর্শন তুলে ধরেছেন। তিনি দেখিয়েছেন যে প্রকৃত জাতীয়তাবাদ হলো সমস্ত বিভেদ ভুলে, সাম্প্রদায়িক ঐক্যের ভিত্তিতে একটি সমৃদ্ধ ও শান্তিপূর্ণ ভারতের স্বপ্ন দেখা। ‘গোরা’ তাই শুধু সাহিত্য নয়, জাতীয়তাবাদের একটি শক্তিশালী দৃষ্টান্ত।

1831 খ্রিস্টাব্দের বারাসাত বিদ্রোহের প্রকৃতি বিশ্লেষণ কর।: প্রশ্নের উত্তরটি দেখতে Click করুন এখান।

তথ্যসূত্রঃ

এই ব্লগের কাজ করতে Wikipedia, Quora এর সাহায্য নেওয়া হয়েছে।

‘গোরা’উপন্যাস থেকে কিছু গুরুত্বপূর্ণ সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তরঃ

প্রশ্ন: ‘গোরা’ উপন্যাসটি কে লিখেছেন?

উত্তর: ‘গোরা’ উপন্যাসটি লিখেছেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। এটি তাঁর অন্যতম শ্রেষ্ঠ উপন্যাস এবং ১৯১০ সালে প্রকাশিত হয়।

প্রশ্ন: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শ্রেষ্ঠ উপন্যাস কোনটি?

উত্তর: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বারটি উপন্যাসের মধ্যে দীর্ঘতম এবং শ্রেষ্ঠ উপন্যাস হলো ‘গোরা’।

প্রশ্ন: ‘গোরা’ উপন্যাসটি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কাকে উৎসর্গ করেছিলেন?

উত্তর: ‘গোরা’ উপন্যাসটি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর পুত্র রথীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে উৎসর্গ করেছিলেন।

প্রশ্ন: কোন প্রেক্ষাপটে রবীন্দ্রনাথ ‘গোরা’ উপন্যাস রচনা করেছিলেন?

উত্তর: বঙ্গভঙ্গের প্রেক্ষাপটে(১৯০৫ খ্রিস্টাব্দ) রবীন্দ্রনাথ ‘গোরা’ উপন্যাসটি রচনা করেছিলেন।

প্রশ্ন: ‘গোরা’ উপন্যাসের প্রধান চরিত্র কোনটি?

উত্তর: ‘গোরা’ উপন্যাসের প্রধান চরিত্র গৌরমোহন বা সংক্ষেপে গোরা।

প্রশ্ন: ‘গোরা’ উপন্যাসটি প্রথম কোন পত্রিকায় প্রকাশিত হয়?

উত্তর: এটি প্রথম প্রবাসী পত্রিকায় ১৯০৭ থেকে ১৯০৯ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত প্রকাশিত হয়।

প্রশ্ন: গোরা উপন্যাসের কয়েকটি চরিত্রের নাম লেখ?

উত্তর: এই উপন্যাসের উল্লেখযোগ্য চরিত্রগুলি হল-গোরা, আনন্দময়ী, কৃষ্ণদয়াল, বিনয়, সুচরিতা প্রমুখ।

প্রশ্ন: গোরার প্রকৃত পরিচয় কি?

উত্তর: গোরা অর্থাৎ গৌরমোহন আদতে একজন আইরিস দম্পতির পুত্র, 1897 খ্রিস্টাব্দে সিপাহী বিদ্রোহের সময় আইরিস দম্পতি অসহায় ভাবে মারা গেলে অসহায় অনাথ গোরাকে বুকে তুলে নিয়েছিল নিষ্ঠাবান ব্রাহ্মণ গৃহিণী আনন্দময়ী।

প্রশ্ন: গোরা উপন্যাসের প্রধান বিষয়বস্তু কী?

উত্তর: গোরা উপন্যাসের প্রধান বিষয়বস্তু হলো ভারতীয় জাতীয়তাবাদ, ব্রিটিশ বিরোধিতা, সামাজিক ও ধর্মীয় সংস্কার, এবং মানুষের মধ্যে সাম্প্রদায়িক ঐক্য প্রতিষ্ঠা।

প্রশ্ন: গোরা চরিত্রটি কেমন?

উত্তর: গোরা একজন উগ্র হিন্দুত্ববাদী যুবক, কিন্তু পরে তার দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন হয়। তিনি উপলব্ধি করেন যে, জাতীয় ঐক্যের জন্য ধর্মীয় পরিচয় নয়, বরং সামগ্রিক মানবতাবোধ প্রয়োজন।

আরো পড়ুনঃ

Sharing Is Caring:

Leave a Comment