মহারানী ভিক্টোরিয়ার ঘোষণাপত্র ১৮৫৮ সালের ১লা নভেম্বর প্রকাশিত হয়। এই ঘোষণা পত্রের মাধ্যমে ভারতের শাসনভার রানী নিজের হাতে তুলে নেন।
এটি ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির শাসনের অবসান ঘটিয়ে ভারতের শাসনভার ব্রিটিশ মুকুটের হাতে তুলে দেয়। এই ঘোষণাপত্রের মাধ্যমে রাণী ভিক্টোরিয়া ভারতবাসীদের উদ্দেশ্যে কিছু প্রতিশ্রুতি দেন।
মহারানী ভিক্টোরিয়ার ঘোষণাপত্র – টীকা লেখ।
ভূমিকাঃ
১৮৫৭ সালের মহাবিদ্রোহ ভারতে ব্রিটিশ শাসনের ভিত কাঁপিয়ে দিয়েছিল। এর ফলে ব্রিটিশ পার্লামেন্ট ১৮৫৮ খ্রিস্টাব্দে ভারত শাসন আইন পাস করে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির শাসনের অবসান ঘটান। এবং মহারানী ভিক্টোরিয়া ভারতের শাসনের ভার নিজের হাতে তুলে নেন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ১৮৫৮ সালের ১ নভেম্বর মহারানী ভিক্টোরিয়া এক গুরুত্বপূর্ণ ঘোষণাপত্র প্রকাশ করেন।
ঘোষণাপত্রের মূল উদ্দেশ্যঃ
এই ঘোষণাপত্রের মূল উদ্দেশ্য গুলি ছিল-
- ভারতীয়দের আশ্বস্ত করা এবং ব্রিটিশ শাসনের প্রতি তাদের আনুগত্য নিশ্চিত করা।
- ভারতীয়দের সমর্থনে ব্রিটিশ শাসনকে শক্ত ভিতের উপর প্রতিষ্ঠা করা।
- ভারতে ব্রিটিশ সরকারের সরাসরি শাসন প্রতিষ্ঠা করা।
- ব্রিটিশ সরকারের নতুন নীতি ও আদর্শের সঙ্গে ভারতীয়দের সংযোগ ঘটানো।
ঘোষণাপত্রের সুপারিশ সমূহঃ
১৮৫৮ সালের ১ নভেম্বর ইংল্যান্ডের মহারানী ভিক্টোরিয়ার প্রতিনিধি লর্ড ক্যানিং এলাহবাদের রাজ দরবার থেকে সুপারিশ পত্রটি পাঠ করেন। এই সুপারিশ পত্রে বলা হয়।-
- ভারতবাসীর ধর্মীয় ও সামাজিক ক্ষেত্রে ব্রিটিশ সরকার কোন হস্তক্ষেপ করবে না
- স্বত্ববিলোপ নীতি প্রত্যাহার করা হবে।
- দেশীয় রাজ্যগুলির অভ্যন্তরীণ বিষয়ে ব্রিটিশ সরকার কোন হস্তক্ষেপ করবে না।
- দেশীয় রাজ্যগুলির রাজন্যবর্গ দত্তক পুত্র গ্রহণ করতে পারবে।
- ইতিপূর্বে দেশীয় রাজ্যগুলির সাথে সরকারের যে সমস্ত চুক্তি হয়েছে তা বহাল থাকবে।
- জাতি বর্ণ নির্বিশেষে সকল ভারতীয় সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে সমান সুযোগ পাবে।
- ব্রিটিশ সরকার এখন থেকে এদেশে সাম্রাজ্য বিস্তার নীতি ত্যাগ করবে। ইত্যাদি।
গুরুত্ব ও প্রভাবঃ
মহারানী ভিক্টোরিয়ার ঘোষণাপত্রের গুরুত্ব ইতিহাস এক গভীর তাৎপর্য বহন করে-
- এই ঘোষণাপত্রের মাধ্যমে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির ১০০ বছরের শাসনের অবসান ঘটে এবং ভারত সরাসরি ব্রিটিশ সরকারের অধীনে আসে।
- ব্রিটিশ সরকার “বিভাজন ও শাসন” নীতির সূচনা করে।
- ভারতীয় রাজন্যবর্গ ও উচ্চশ্রেণির মানুষ ব্রিটিশ শাসনের প্রতি আনুগত্য দেখাতে শুরু করে। এটি ছিল ব্রিটিশ রাজতন্ত্রের অধীনে ভারত শাসনের সূচনা।
- এই বিদ্রোহের পর ভারতে মুঘল সাম্রাজ্যের অস্তিত্ব সম্পূর্ণরূপে বিলুপ্ত হয়। মুঘল সম্রাট দ্বিতীয় বাহাদুর শাহকে রেঙ্গুনে নির্বাচন দেওয়া হয়।
উপসংহারঃ
মহারানী ভিক্টোরিয়ার ঘোষণাপত্র ছিল ব্রিটিশ সরকারের কৌশলী রাজনৈতিক পদক্ষেপ। যা ভারতীয়দের মনে শান্তি আনার ও ব্রিটিশ শাসনের প্রতি আনুগত্য বাড়ানোর জন্য তৈরি করা হয়। ব্রিটিশ প্রশাসনের মনোভাব সবসময় ঘোষণার সাথে মিল ছিল না। তাই ঐতিহাসিক বিপান চন্দ্র এই ঘোষণাপত্রকে ‘রাজনৈতিক ধাপ্পাবাজি বলেছে’।
বঙ্গভাষা প্রকাশিকা সভাকে প্রথম রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান বলা হয় কেন ? সম্পূর্ণ উত্তর দেখতে Click করুন এখানে।
তথ্যসূত্রঃ
এই ব্লগের কাজ করতে Wikipedia এর সাহায্য নেওয়া হয়েছে।
মহারানী ভিক্টোরিয়ার ঘোষণাপত্র থেকে কিছু গুরুত্বপূর্ণ সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন উত্তরঃ
প্রশ্ন: মহারানী ভিক্টোরিয়ার ঘোষণাপত্র কবে প্রকাশিত হয়েছিল ?
উত্তর: ১৮৫৮ সালের ১লা নভেম্বর মহারানী ভিক্টোরিয়ার ঘোষণাপত্র প্রকাশিত হয়।
প্রশ্ন: এই ঘোষণাপত্রের মূল উদ্দেশ্য কী ছিল ?
উত্তর: ভারতীয়দের আশ্বস্ত করা, ব্রিটিশ শাসনের প্রতি আনুগত্য গড়ে তোলা, এবং সরাসরি ব্রিটিশ শাসনের সূচনা করা এই ঘোষণাপত্রের মূল উদ্দেশ্য ছিল।
প্রশ্ন: এই ঘোষণার ফলে কোন প্রতিষ্ঠানের শাসনের অবসান ঘটে ?
উত্তর: ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির শাসনের অবসান ঘটে এবং ব্রিটিশ মুকুট ভারতের শাসনভার গ্রহণ করে।
প্রশ্ন: কে এই ঘোষণাপত্র পাঠ করেন এবং কোথা থেকে ?
উত্তর: লর্ড ক্যানিং এলাহাবাদের রাজ দরবার থেকে এই ঘোষণাপত্র পাঠ করেন।
প্রশ্ন: ধর্মীয় স্বাধীনতা বিষয়ে ঘোষণাপত্রে কী বলা হয়েছিল ?
উত্তর: ব্রিটিশ সরকার ভারতীয়দের ধর্মীয় ও সামাজিক রীতিনীতিতে হস্তক্ষেপ করবে না বলে প্রতিশ্রুতি দেয়।
প্রশ্ন: স্বত্ববিলোপ নীতি নিয়ে কী সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় ?
উত্তর: নীতি প্রত্যাহার করা হয় এবং দেশীয় রাজন্যবর্গকে দত্তক পুত্র গ্রহণের অধিকার দেওয়া হয়।
প্রশ্ন: ঘোষণাপত্রে চাকরির ক্ষেত্রে ভারতীয়দের কী প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয় ?
উত্তর: জাতি ও বর্ণ নির্বিশেষে সকল ভারতীয়কে সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে সমান সুযোগ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়।
প্রশ্ন: ঘোষণাপত্রের ফলে ভারতের শাসনব্যবস্থায় কী পরিবর্তন আসে?
উত্তর: ভারত সরাসরি ব্রিটিশ সরকারের অধীনে আসে এবং ব্রিটিশ রাজতন্ত্রের অধীনে শাসন শুরু হয়।
প্রশ্ন: এই ঘোষণাপত্রের পর কোন ঐতিহাসিক সাম্রাজ্যের অবসান ঘটে ?
উত্তর: মুঘল সাম্রাজ্যের সম্পূর্ণ অবসান ঘটে; সম্রাট বাহাদুর শাহ জাফরকে নির্বাসনে পাঠানো হয়।
প্রশ্ন: ইতিহাসবিদ বিপান চন্দ্র ঘোষণাপত্র সম্পর্কে কী মন্তব্য করেছেন ?
উত্তর: তিনি এই ঘোষণাপত্রকে “রাজনৈতিক ধাপ্পাবাজি” বলে অভিহিত করেছেন, কারণ ব্রিটিশরা অনেক প্রতিশ্রুতি দিলেও বাস্তবে তা পূরণ করেনি।