ইতিহাস, দশম শ্রেণী

19 শতকে বাংলার নারী শিক্ষা বিস্তারে রাধাকান্তদেবের ভূমিকা

Admin

No Comments

দশম শ্রেণীর (মাধ্যমিক) ছাত্র-ছাত্রীদের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন ১৯ শতকে বাংলার নারী শিক্ষা বিস্তারে রাধাকান্ত দেবের ভূমিকা আলোচনা কর। ছাত্র-ছাত্রীদের সুবিধার্থে প্রশ্নটি আলোচনা করা হলো

রাধাকান্ত দেব (10th Mar,1784 – 19th Apr1867) ছিলেন উত্তর কলকাতার শোভাবাজার রাজবাড়ীর প্রতিষ্ঠাতা নবকৃষ্ণদেবের দত্তক পুত্র গোপীমোহন দেবের পুত্র। তার সম্পূর্ণ নাম ছিল রাজা রাধাকান্ত দেব বাহাদুর. তিনি পড়াশোনা শুরু করেছিলেন গৃহ শিক্ষক কৃষ্ণমোহন বসুর কাছে. তিনি ছিলেন ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির মুন্সি.ওয়ারেন হেস্টিংসও লর্ড ওয়েলেসলির অধীনে নিষ্ঠার সাথে কাজ করার জন্য ‘মহারাজা’ উপাধি লাভ করেছিলেন। তার রচিত সংস্কৃত অভিধান ‘শব্দকল্পদ্রুম’ গ্রন্থটির জন্য আন্তর্জাতিক খ্যাতি লাভ করেছিল. তিনি গৌড়মোহন বিদ্যালঙ্কার কে দিয়ে ‘স্ত্রীশিক্ষা বিধায়ক’ গ্রন্থটি রচনা করছিলেন.

Table of Contents

বাংলার নারী শিক্ষার বিস্তারে রাধাকান্ত দেবের ভূমিকা

ভূমিকা:

রাজা রাধাকান্ত দেব ছিলেন উনিশ শতকের বাংলার একজন বিশিষ্ট পন্ডিত ও হিন্দু সমাজের রক্ষণশীল নেতা. তিনি একদিকে ছিলেন হিন্দু সমাজের রক্ষণশীলতার প্রতীক, অপরদিকে ছিলেন পাশ্চাত্য শিক্ষা বিস্তারের সমর্থক. আসলে তিনি চেয়েছিলেন ”প্রাচ্যবাদী শিক্ষার কাঠামোর মধ্যে পাশ্চাত্য শিক্ষার বিকাশ”। এছাড়া তিনি ছিলেন নারী শিক্ষার অন্যতম সমর্থক এবং প্রচারক।

নারী শিক্ষার প্রসারে সাহায্য:

রাধাকান্ত দেব ইংরেজি শিক্ষার প্রসারের জন্য চেষ্টা চালিয়েছিলেন। তিনি নিজ পরিবারের মহিলাদের শিক্ষাদানের জন্য ইংরেজি শিক্ষিকা নিযুক্ত করেছিলেন। তিনি চেয়েছিলেন বাংলার প্রতিটি ঘরের মেয়েরা পড়াশোনা করে শিক্ষিত হয়ে উঠুক।

মিশনারিদের সাহায্য:

ব্যাপ্টিস্ট মিশনারিদের উদ্যোগে ১৮১৯ খ্রিস্টাব্দে ‘ক্যালকাটা ফিমেল জুভেনাইল সোসাইটি’ স্থাপিত হলে, রাধাকান্ত দেব সমর্থন ও সহযোগিতা করেছিলেন। এই স্কুলের ছাত্রীদের নিয়মিত পড়ানো এবং পরীক্ষা দেওয়ার জন্য রাধাকান্তদের নিজের বাড়িতে ব্যবস্থা করেছিলেন। এছাড়া মেয়েদের লেখাপড়ায় উৎসাহ দেয়ার জন্য তিনি প্রতিবছর পুরস্কার প্রদানের ব্যবস্থাও করেছিলেন.

গ্রন্থ রচনায় পৃষ্ঠপোষকতা:

তৎকালীন সময়ে রক্ষণশীল গোষ্ঠীর মানসিকতা ছিল নারী শিক্ষা বিস্তারের মূল বাধা। তাই রাধাকান্ত দেবের উৎসাহ ও সহযোগিতায় ‘স্কুল বুক সোসাইটি’র প্রধান পন্ডিত গৌর মোহন বিদ্যালঙ্কার ১৮২২ খ্রিস্টাব্দে লিখেছিলেন ‘স্ত্রী শিক্ষা বিধায়ক’ নামে একটি পুস্তিকা, সেখানে আলোচিত হয়েছিল স্ত্রীলোকেদের লেখাপড়া শেখা অসাস্ত্রীয় নয় এবং অতিতেও নারীরা সুশিক্ষিত হতেন প্রভৃতি বিষয়ে।

নারী বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায় উৎসাহ:

রাধাকান্ত দেবের অনুপ্রেরণায় ‘লেডিস অ্যাসোসিয়েশন’ (১৮২৫ খ্রিস্টাব্দ), ‘ক্যালকাটা ফিমেল স্কুল’ (১৮২৮ খ্রিস্টাব্দ), ‘উত্তরপাড়া বালিকা বিদ্যালয়’ (১৮৪৫ খ্রিস্টাব্দ) ও বারাসাতে ‘কালীকৃষ্ণ বালিকা বিদ্যালয়’ (১৮৪৭ খ্রিস্টাব্দ) গড়ে উঠেছিল।

বাংলার নারী শিক্ষা
কালীকৃষ্ণ বালিকা বিদ্যালয়

হিন্দু মেট্রোপলিটন কলেজ প্রতিষ্ঠা:

১৮৫৩ খ্রিস্টাব্দের ২রা মে রাজেন্দ্র লাল দত্ত, মতিলাল শীল, দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর প্রমুখের সহায়তায় রাধাকান্ত দেব কলকাতায় ‘হিন্দু মেট্রোপলিটন কলেজ’ প্রতিষ্ঠা করেন। রাধাকান্ত দেব এই কলেজের পরিচালন সমিতির সভাপতি নিযুক্ত হয়েছিলেন। কলেজের নিয়মবিধি রচনায় তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন। এই কলেজটি ছিল ভারতের প্রথম জাতীয় কলেজ।

উপসংহার:

ধর্মীয় রক্ষণশীলতা থাকার সত্বেও নারী শিক্ষা ও সমাজ সংস্কারের ক্ষেত্রে রাধাকান্ত দেবের কৃতিত্বকে কখনোই ছোট করে দেখা উচিত নয়। আসলে তিনি চেয়েছিলেন হিন্দু ধর্মের সনাতন ঐতিহ্য কে অটুট রেখে এদেশের শিক্ষা সংস্কৃতির উন্নয়ন তথা প্রসার ঘটাতে।

2025 মাধ্যমিক ভূগোল সাজেশন টি দেখতে click করুন এখানে

তথ্যসূত্র:

এই ব্লগের কাজ করতে উইকিপিডিয়ার সাহায্য নিয়েছি।

রাধাকান্ত দেব ও নারী শিক্ষা সম্পর্কে কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য:

প্রশ্ন: রাধাকান্ত দেব কে ছিলেন?

উত্তর: রাধাকান্ত দেব (১৭৮৪-১৮৬৭) ছিলেন উনিশ শতকের বাংলার একজন বিশিষ্ট পন্ডিত ও সমাজ সংস্কারক। তিনি হিন্দু সমাজের রক্ষণশীল অংশের নেতা এবং ‘শব্দকল্পদ্রুম’ নামক সংস্কৃত অভিধানের রচয়িতা হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেন।

প্রশ্ন: রাধাকান্ত দেব কীভাবে নারী শিক্ষা বিস্তারে ভূমিকা রেখেছিলেন?

উত্তর: রাধাকান্ত দেব তার পরিবার ও সমাজে নারী শিক্ষার প্রসারের উদ্যোগ নেন। তিনি তার পরিবারের নারীদের জন্য ইংরেজি শিক্ষিকা নিয়োগ করেন এবং মেয়েদের শিক্ষিত করার জন্য প্রচেষ্টা চালান।

প্রশ্ন: রাধাকান্ত দেব কোন কোন নারী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠায় অবদান রাখেন?

উত্তর: রাধাকান্ত দেবের অনুপ্রেরণায় ‘লেডিস অ্যাসোসিয়েশন’, ‘ক্যালকাটা ফিমেল স্কুল’, ‘উত্তরপাড়া বালিকা বিদ্যালয়’, ও ‘কালীকৃষ্ণ বালিকা বিদ্যালয়’ প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, যা নারী শিক্ষার প্রসারে সহায়ক ছিল।

প্রশ্ন: ‘ক্যালকাটা ফিমেল জুভেনাইল সোসাইটি’ কী?

উত্তর:এটি ১৮১৯ সালে প্রতিষ্ঠিত একটি নারী শিক্ষার সংস্থা, যার সহায়তায় রাধাকান্ত দেব নারী শিক্ষার বিস্তার ঘটিয়েছিলেন এবং এর ছাত্রছাত্রীদের নিয়মিত পড়ানো ও পরীক্ষার আয়োজন করতেন।

প্রশ্ন: রাধাকান্ত দেব কীভাবে নারী শিক্ষার জন্য গ্রন্থ রচনা পৃষ্ঠপোষকতা করেন?

উত্তর: তিনি ‘স্কুল বুক সোসাইটি’র পন্ডিত গৌর মোহন বিদ্যালঙ্কারকে দিয়ে ‘স্ত্রী শিক্ষা বিধায়ক’ নামে একটি গ্রন্থ রচনা করান, যেখানে নারীদের শিক্ষার গুরুত্ব ও বৈধতা নিয়ে আলোচনা করা হয়।

প্রশ্ন: রাধাকান্ত দেব নারী শিক্ষার প্রচারের জন্য কী ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছিলেন?

উত্তর: তিনি নারী শিক্ষার জন্য স্কুল ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করেন, ইংরেজি শিক্ষিকার নিয়োগ করেন এবং মেয়েদের লেখাপড়ায় উৎসাহিত করার জন্য পুরস্কার বিতরণের ব্যবস্থা করেন।

প্রশ্ন: রাধাকান্ত দেবের ধর্মীয় রক্ষণশীলতার সাথে নারী শিক্ষার প্রসারের সম্পর্ক কী?

উত্তর: যদিও রাধাকান্ত দেব ধর্মীয়ভাবে রক্ষণশীল ছিলেন, তিনি নারী শিক্ষার গুরুত্ব উপলব্ধি করেছিলেন এবং তার প্রচেষ্টায় নারী শিক্ষার প্রসার ঘটেছিল।

প্রশ্ন: ‘স্ত্রী শিক্ষা বিধায়ক’ কী?

উত্তর: এটি গৌর মোহন বিদ্যালঙ্কারের লেখা একটি পুস্তিকা, যার পৃষ্ঠপোষক ছিলেন রাধাকান্ত দেব। এই গ্রন্থে নারীদের শিক্ষার ঐতিহ্য ও বৈধতা নিয়ে আলোচনা করা হয়েছিল।

প্রশ্ন: রাধাকান্ত দেবের প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য শিক্ষার দৃষ্টিভঙ্গি কী ছিল?

উত্তর: রাধাকান্ত দেব প্রাচ্য শিক্ষা কাঠামোর মধ্যে পাশ্চাত্য শিক্ষার বিকাশে বিশ্বাসী ছিলেন। তিনি চেয়েছিলেন, হিন্দু ধর্মের ঐতিহ্য রক্ষা করে পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রসার ঘটানো।

প্রশ্ন: হিন্দু মেট্রোপলিটন কলেজ প্রতিষ্ঠায় রাধাকান্ত দেবের ভূমিকা কী ছিল?

উত্তর: রাধাকান্ত দেব ১৮৫৩ সালে ‘হিন্দু মেট্রোপলিটন কলেজ’ প্রতিষ্ঠা করেন এবং এই কলেজের পরিচালন সমিতির সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এটি ভারতের প্রথম জাতীয় কলেজ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়।

Sharing Is Caring:

Leave a Comment