ইতিহাস, দশম শ্রেণী

ছাপা বইয়ের সঙ্গে শিক্ষা বিস্তারের সম্পর্ক বিশ্লেষণ কর।

Admin

No Comments

রেভারেন্ট জেমস লং এর মতে, মুদ্রণ ও শিক্ষার সম্পর্ক অঙ্গাঙ্গী কিভাবে জড়িত। শিক্ষা বিস্তারের সঙ্গে মুদ্রিত পুস্তকের একটি ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ আছে।

বাংলায় আধুনিক ছাপাখানা প্রতিষ্ঠার পূর্বে শিক্ষাদান উচ্চবিত্তদের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল, কিন্তু ছাপাখানা প্রতিষ্ঠার পর প্রচুর ছাপা বই বাজারে আসে। ছাপা বই গুলির দাম সস্তা হওয়ায় সেগুলি সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে যায়-যা গণশিক্ষার প্রসারের পথ তৈরি করে।

Table of Contents

ছাপা বইয়ের সঙ্গে শিক্ষা বিস্তারের সম্পর্কঃ

ভূমিকাঃ

ষোড়শ শতকে ভারতে এবং অষ্টাদশ শতকে বাংলায় আধুনিক মুদ্রণ ব্যবস্থা চালু হলে সাধারণ মানুষের হাতে প্রচুর ছাপা বই আসতে থাকে। বাংলা ভাষায় প্রচুর বই ছাপা শুরু হলে সাধারণ শিক্ষার্থীরা নিজের মাতৃভাষায় শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ পায়। ফলে ছাপা বইয়ের সঙ্গে শিক্ষা বিস্তারের এক নিবিড় সম্পর্ক গড়ে ওঠে। ছাপা বইগুলি একদিকে যেমন শিক্ষার বিকাশ ঘটায়, অন্যদিকে বাঙালির ক্রমবর্ধমান শিক্ষার অগ্রগতি চাহিদা বৃদ্ধি করে।

শিক্ষার সহজলভ্যতাঃ

ছাপা বইয়ের মাধ্যমে জ্ঞানের সংরক্ষণ এবং তা সহজে বিতরণ করা সম্ভব হয়েছে। আগে বই হাতে লিখতে হতো, যা ছিল সময়সাপেক্ষ এবং ব্যয়বহুল। মুদ্রণযন্ত্রের সাহায্যে বই দ্রুত তৈরি করা সম্ভব হওয়ায়, বিভিন্ন শ্রেণির মানুষের কাছে বই সহজলভ্য হয়েছে। ফলে শিক্ষার প্রসার ঘটেছে।

পাঠ্যপুস্তকের উদ্ভব

উনিশ শতকে প্রতিষ্ঠিত বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিতে ছাপা বইয়ের মাধ্যমেই শিক্ষার জন্য নির্দিষ্ট পাঠ্যপুস্তক তৈরি সম্ভব হয়েছে। ফলে সহজে ও সুলভে শিক্ষার্থীদের উপযোগী পাঠ্যপুস্তক সরবরাহ হতে শুরু করে।এটি একটি নিয়মতান্ত্রিক শিক্ষা ব্যবস্থার ভিত্তি গড়ে তোলে।

গণশিক্ষার বিস্তার

শুধুমাত্র স্কুল কলেজের পাঠ্যপুস্তক নয় বিভিন্ন ধর্মগ্রন্থ, বাংলা ও ইংরেজিতে প্রকাশিত সংবাদপত্র ও সাময়িক পত্র এই সময় প্রকাশিত হতে থাকে। এর সূত্র ধরে বাংলায় গণশিক্ষার ব্যাপক বিস্তার ঘটে।

মুদ্রিত গ্রন্থ

জ্ঞান চর্চার প্রসার

ছাপা বই মানুষের জ্ঞানকে স্থানিক ও কালিক সীমারেখার বাইরে নিয়ে গেছে। বৈজ্ঞানিক, ঐতিহাসিক, সাহিত্যিক এবং অন্যান্য বিষয়ক বই জ্ঞানের একটি সমৃদ্ধ ভান্ডার তৈরি করেছে। এর ফলে শিক্ষার্থীরা বহুমুখী জ্ঞান অর্জনের সুযোগ পেয়েছে।

শিশু শিক্ষার বিস্তার

মুদ্রণ যন্ত্রে বই ছাপার ফলে পুস্তকে ছবি, মানচিত্র, নকশা ইত্যাদির ব্যবহার শুরু হয়। যার জন্য শিক্ষা গ্রহণে শিশু শিক্ষার্থীরা উৎসাহী হয়ে ওঠে। ফলে শিশু শিক্ষার বিস্তার ঘটে।

গবেষণা ও উচ্চশিক্ষায় সহযোগিতা

ছাপাবই গবেষণা এবং উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে অপরিহার্য ভূমিকা পালন করে। বিভিন্ন গবেষণাগ্রন্থ, জার্নাল এবং একাডেমিক বইয়ের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা তাদের জ্ঞানের গভীরতা বাড়ানোর সুযোগ পায়।

উপসংহারঃ

ছাপা বই শিক্ষার বিস্তারে একটি যুগান্তকারী পরিবর্তন নিয়ে এসেছে। এটি জ্ঞান অর্জনের সীমানা প্রসারিত করেছে এবং সমাজের সকল স্তরে শিক্ষার আলো পৌঁছে দিতে সাহায্য করেছে। মুদ্রিত বই কেবলমাত্র শিক্ষা ব্যবস্থার একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ নয়, বরং মানব সভ্যতার উন্নয়নের একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম।

নীল বিদ্রোহে (1859-60খীঃ) সংবাদপত্রের ভূমিকা বিশ্লেষণ করো। সম্পূর্ণ উত্তরটি দেখতে Click করুন এখানে।

তথ্যসূত্রঃ

এই ব্লগের কাজ করতে Wikipedia এর সাহায্য নেয়া হয়েছে।

ছাপা বই ও শিক্ষা বিস্তার থেকে কিছু গুরুত্বপূর্ণ সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তরঃ

প্রশ্ন: ‘ক্যালকাটা স্কুল বুক সোসাইটি’ কি উদ্দেশ্যে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল?

উত্তর: ১৮১৭ খ্রিস্টাবে ‘ক্যালকাটা স্কুল বুক সোসাইটি’ প্রতিষ্ঠের উদ্দেশ্য ছিল-স্কুলের পাঠ্য বই ছাপিয়ে স্বল্প মূল্য বা বিনামূল্যে ছাত্রছাত্রীদের হাতে তুলে দেওয়া।

প্রশ্ন: ‘ক্যালকাটা স্কুল সোসাইটি’ প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্য কি ছিল?

উত্তর: ১৮১৮ খ্রিস্টাব্দে ক্যালকাটা স্কুল সোসাইটি প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্য ছিল- শহরের বিভিন্ন স্থানে নতুন নতুন স্কুল প্রতিষ্ঠা করা।

প্রশ্ন: ছাপাবই শিক্ষা বিস্তারে কি ভূমিকা নিয়েছিল?

উত্তর: ছাপাবইয়ের মাধ্যমে জ্ঞান সংরক্ষণ ও বিতরণ সহজ হয়েছিল। সস্তা বইয়ের কারণে সাধারণ মানুষের কাছে শিক্ষা সহজলভ্য হয়, যা গণশিক্ষার প্রসার ঘটায়।

প্রশ্ন: মুদ্রণযন্ত্রের আবিষ্কার শিক্ষায় কী প্রভাব ফেলেছে?

উত্তর: মুদ্রণযন্ত্রের মাধ্যমে দ্রুত এবং সুলভে বই তৈরি হওয়ায় জ্ঞান অর্জনের সুযোগ বৃদ্ধি পায়। এটি বিভিন্ন শ্রেণির মানুষের কাছে শিক্ষা পৌঁছে দেয়।

প্রশ্ন: পাঠ্যপুস্তকের উদ্ভব কীভাবে সম্ভব হয়েছিল?

উত্তর: মুদ্রণযন্ত্রের সাহায্যে নির্দিষ্ট পাঠ্যপুস্তক তৈরি করা সম্ভব হয়, যা নিয়মতান্ত্রিক শিক্ষা ব্যবস্থার ভিত্তি গড়ে তোলে।

প্রশ্ন: গণশিক্ষার প্রসারে ছাপাবইয়ের ভূমিকা কী?

উত্তর: ছাপাবই এবং সংবাদপত্র সাধারণ মানুষের মধ্যে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দেয়। এর মাধ্যমে তারা নিজ মাতৃভাষায় শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ পায়।

প্রশ্ন: শিশু শিক্ষার বিস্তারে ছাপাবইয়ের অবদান কী?

উত্তর: মুদ্রণযন্ত্রে ছবি, মানচিত্র ও নকশা সংযুক্ত করার ফলে শিশুদের মধ্যে শিক্ষার প্রতি আগ্রহ বৃদ্ধি পায়, যা শিশু শিক্ষার প্রসারে ভূমিকা রাখে।

প্রশ্ন: ছাপাবই গবেষণায় কীভাবে সহায়তা করে?

উত্তর: বিভিন্ন গবেষণাগ্রন্থ এবং একাডেমিক বই শিক্ষার্থীদের গভীরতর জ্ঞান অর্জনে সাহায্য করে এবং গবেষণার মানোন্নয়নে ভূমিকা রাখে।

প্রশ্ন: বাংলায় মুদ্রণ ব্যবস্থার সূচনা শিক্ষায় কী পরিবর্তন এনেছিল?

উত্তর: বাংলায় মুদ্রণ ব্যবস্থার ফলে মাতৃভাষায় প্রচুর বই প্রকাশিত হয়, যা সাধারণ মানুষের মধ্যে শিক্ষার প্রসার ঘটায়।

প্রশ্ন: ছাপাবই মানুষের জ্ঞানচর্চায় কীভাবে সহায়ক?

উত্তর: ছাপাবই মানুষের জ্ঞানকে স্থানিক ও কালিক সীমার বাইরে নিয়ে গেছে। বৈজ্ঞানিক, ঐতিহাসিক, সাহিত্যিক বিষয়ক বইয়ের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা বহুমুখী জ্ঞান অর্জনের সুযোগ পেয়েছে।

আরো পড়ুনঃ

Sharing Is Caring:

Leave a Comment