১৮৩৫ খ্রিস্টাব্দের ২৮ শে জানুয়ারি লর্ড উইলিয়াম বেন্টিঙ্কের (১৮২৮ – ১৮৩৫ খ্রিস্টাব্দে) উদ্যোগে ‘কলকাতা মেডিকেল কলেজ, প্রতিষ্ঠিত হয়। এটি ছিল এশিয়ার মধ্যে দ্বিতীয় ইউরোপীয় মেডিসিন প্রশিক্ষণ কেন্দ্র।
এশিয়ার মধ্যে প্রথম মেডিসিন প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ছিল ইকোল-ডি–মেডিসিন-পন্ডিচেরি। কলকাতা মেডিকেল কলেজে প্রথম অধ্যক্ষ ছিলেন ডাঃ এম.যে. ব্রামলে। ৪৯ জন ছাত্র নিয়ে এই প্রতিষ্ঠানের পথচলা শুরু হয়েছিল। তবে প্রথমে এই কলেজে কোন মুসলমান ছাত্র ছিল না।এই কলেজের প্রথম ব্যাচের ছাত্রদের মধ্যে ছিলেন- রাজকৃষ্ণদে,উমাচরণ শেঠ , নবীনচন্দ্র মিত্র, দ্বারকানাথ গুপ্ত প্রমুখ।প্রথম বাঙালি নারী হিসেবে কাদম্বিনী গাঙ্গুলী ১৮৮৩ খ্রিস্টাব্দের ২৯ শে জুন মেডিকেল কলেজে ভর্তি হয়েছিলেন।
চিকিৎসা বিদ্যার ক্ষেত্রে কলকাতা মেডিকেল কলেজের ভূমিকা
ভূমিকাঃ
উনিশ শতকের প্রথম দিকে ভারতে প্রাচীন দেশীয় চিকিৎসা ব্যবস্থার প্রচলন ছিল। ১৮৩৫ খ্রিস্টাব্দে তৎকালীন ভারতের বড়লাট লর্ড উইলিয়াম বেন্টিং কলকাতা মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠা করলে ভারতে আধুনিক চিকিৎসা বিদ্যার পথ চলা শুরু হয়েছিল। এই কলেজের ভূমিদান করেছিলেন মতিলাল শিল।
উদ্দেশ্যঃ
কলকাতা মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠার প্রাথমিক উদ্দেশ্য ছিল ভারতীয়দের মধ্যে ইংরেজি ভাষার মাধ্যমে ইউরোপীয় চিকিৎসা শাস্ত্রের শিক্ষা দান ও রোগ নিরাময় করা।
সরকারি উদ্যোগঃ
কলকাতা মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠার পর থেকে সরকার দেশীয় চিকিৎসাশাস্ত্রে শিক্ষাদানের জন্য অর্থ ব্যয় বন্ধ করে দেয়। ফলে প্রাচীন দেশীয় চিকিৎসা শাস্ত্রের পরিবর্তে পাশ্চাত্যের আধুনিক চিকিৎসা বিদ্যা এদেশের দ্রুতপ্রসার লাভ করতে থাকে।
ইউরোপীয় চিকিৎসা বিদ্যাঃ
১৮৩৫ খ্রিস্টাব্দে কলকাতা মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠার পর থেকে এদেশে দেশীয় চিকিৎসা ব্যবস্থার পরিবর্তে আধুনিক ইউরোপীয় উন্নত চিকিৎসা বিদ্যার শিক্ষাদান শুরু হয়। এটি ছিল এশিয়ার মধ্যে দ্বিতীয় মেডিসিন প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, আর এশিয়ার মধ্যে প্রথম ছিল ইকোল-ডি–মেডিসিন-পন্ডিচেরি।
ছাত্রদের অবদানঃ
রাজকৃষ্ণদে,উমাচরণ শেঠ ,নবীনচন্দ্র মিত্র, দ্বারকানাথ গুপ্ত প্রমুখ প্রথম ব্যাচে কলকাতা মেডিকেল কলেজ থেকে ডাক্তারি পাস করেন। এরপর তারা ঢাকা, চট্টগ্রাম, মুর্শিদাবাদ, পাটনা প্রভৃতি স্থানের হাসপাতালে ডাক্তার হিসেবে নিযুক্ত হন এবং আধুনিক চিকিৎসা বিদ্যার প্রসার ঘটান। ১৮৫৬ খ্রিস্টাব্দে রহিম খান প্রথম মুসলিম ছাত্র হিসেবে এখান থেকে ডাক্তারি পাস করেছিলেন।
কুসংস্কার বিরোধী ভূমিকাঃ
সামাজিক কুসংস্কার লঙ্ঘন করে ১৮৩৬ খ্রিস্টাব্দে কলকাতা মেডিকেল কলেজে প্রথম ভারতীয় হিসেবে শব ব্যবচ্ছেদ করেছিলেন মধুসূদন গুপ্ত। এটি ছিল ভারতীয় রক্ষণশীল গোষ্ঠীর বিপরীতে একটি যুগান্তকারী ঘটনা, যার নবযুগের সূচনা করেছিল।
নতুন চিকিৎসকের উদ্ভবঃ
কলকাতা মেডিকেল কলেজ থেকে চিকিৎসা বিদ্যায় ডিগ্রি লাভ করে প্রতি বছর বহু যুবক-যুবতী দেশের বিভিন্ন প্রান্তের চিকিৎসা কেন্দ্রগুলিতে চিকিৎসক হিসেবে নিযুক্ত হন।
মহিলা ডাক্তারঃ
কাদম্বিনী গাঙ্গুলী ছিলেন কলকাতা মেডিকেল কলেজ থেকে পাস হওয়া প্রথম বাঙালি মহিলা চিকিৎসক। এছাড়া বিধুমুখী বসু সহ অন্যান্য বাঙালি মেয়েরা চিকিৎসা বিদ্যার ক্ষেত্রে এগিয়ে এসেছিলেন।
উপসংহারঃ
আধুনিক উন্নত চিকিৎসা বিদ্যার প্রসারে কলকাতা মেডিকেল কলেজ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে চলেছে। সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে ছাত্র-ছাত্রী সংখ্যাও বেড়ে চলেছে । ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের পর LMS,MB,MD ডিগ্রিধারী ডাক্তারের সংখ্যাও বেড়ে চলেছে। এই কলেজ উন্নত চিকিৎসা পরিষেবায় নতুন যুগের জন্ম দিয়েছে।
দশম শ্রেণীর প্রথম অধ্যায় থেকে গুরুত্বপূর্ণ এক নম্বরের প্রশ্ন উত্তর গুলো দেখতে Click করুন এখানে ।
তথ্যসূত্র
এই ব্লগের কাজ করতে Wikipedia -এর সাহায্য নিয়েছি।
কলকাতা মেডিকেল কলেজ সম্পর্কে কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য:
প্রশ্ন: কলকাতা মেডিকেল কলেজ কবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল?
উত্তর: ১৮৩৫ খ্রিস্টাব্দের ২৮ জানুয়ারি লর্ড উইলিয়াম বেন্টিঙ্কের উদ্যোগে কলকাতা মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয়।
প্রশ্ন: কোলকাতা মেডিকেল কলেজের প্রথম অধ্যক্ষ কে ছিলেন?
উত্তর: ডাঃ এম.যে. ব্রামলে কোলকাতা মেডিকেল কলেজের প্রথম অধ্যক্ষ ছিলেন।
প্রশ্ন: কোলকাতা মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠার মূল উদ্দেশ্য কী ছিল?
উত্তর: ইউরোপীয় চিকিৎসা শাস্ত্রের শিক্ষা দান এবং রোগ নিরাময়ই ছিল এর প্রাথমিক উদ্দেশ্য।
প্রশ্ন: কোলকাতা মেডিকেল কলেজে প্রথম ব্যাচের ছাত্রদের মধ্যে কারা ছিলেন?
উত্তর: রাজকৃষ্ণ দে, উমাচরণ শেঠ, নবীনচন্দ্র মিত্র এবং দ্বারকানাথ গুপ্ত প্রমুখ প্রথম ব্যাচের ছাত্র ছিলেন।
প্রশ্ন: কোলকাতা মেডিকেল কলেজে প্রথম মুসলমান ছাত্র কে ছিলেন?
উত্তর: রহিম খান ১৮৫৬ খ্রিস্টাব্দে প্রথম মুসলমান ছাত্র হিসেবে কোলকাতা মেডিকেল কলেজ থেকে ডাক্তারি পাস করেন।
প্রশ্ন: কোলকাতা মেডিকেল কলেজে প্রথম ভারতীয় হিসেবে শব ব্যবচ্ছেদ করেন কে?
উত্তর: ১৮৩৬ খ্রিস্টাব্দে মধুসূদন গুপ্ত প্রথম ভারতীয় হিসেবে শব ব্যবচ্ছেদ করেন।
প্রশ্ন: এশিয়ার প্রথম মেডিসিন প্রশিক্ষণ কেন্দ্র কোনটি?
উত্তর: এশিয়ার প্রথম মেডিসিন প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ছিল ইকোল-ডি-মেডিসিন-পন্ডিচেরি।
প্রশ্ন: কোলকাতা মেডিকেল কলেজে প্রথম মহিলা ডাক্তার কে ছিলেন?
উত্তর: কাদম্বিনী গাঙ্গুলী ১৮৮৩ খ্রিস্টাব্দে কোলকাতা মেডিকেল কলেজে ভর্তি হয়ে প্রথম বাঙালি মহিলা ডাক্তার হন।
প্রশ্ন: MBBS এর পূর্ণরূপ কি?
উত্তর: Bachelor of Medicine and Bachelor of Surgery.
প্রশ্ন: মাদ্রাজ মেডিকেল কলেজ কবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল?
উত্তর: কোলকাতা মেডিকেল কলেজের অনুকরণে ১৮৩৫ খ্রিস্টাব্দে ২রা ফেব্রুয়ারি মাদ্রাজ মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।