ইতিহাস, দশম শ্রেণী

19 শতকে বাংলায় পাশ্চাত্য শিক্ষা বিস্তারে রামমোহন রায়ের ভূমিকা

Admin

No Comments

দশম শ্রেণীর দ্বিতীয় অধ্যায় (সংস্কারঃ বৈশিষ্ট্য ও পর্যালোচনা) থেকে 19 শতকে বাংলায় পাশ্চাত্য শিক্ষা বিস্তারে রামমোহন রায়ের ভূমিকা আলোচনা করা হলো।

রাজা রামমোহন রায় (১৭৭২ – ১৮৩৩ খ্রিস্টাব্দ) ছিলেন ভারতের ‘প্রমিথিউস’ এবং ‘নবজাগরণের অগ্রদূত’। তিনি আরবি, ফারসি, সংস্কৃত , উর্দু , ল্যাটিন, গ্রীক ,জার্মান , হিব্রু , ইংরেজি প্রভৃতি প্রায় 12 টি ভাষায় ব্যুৎপত্তি লাভ করেছিলেন। তিনি পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রসারে নানা উদ্যোগ নিয়েছিলেন। মুঘল সম্রাট দ্বিতীয় আকবর তাকে ‘রাজা’ উপাধি দিয়েছিলেন। অনেক ইতিহাসবিদ তাকে ভারতীয় ‘রেনেসাঁর জনক’ বলে মনে করেন।

Table of Contents

19 শতকে বাংলায় পাশ্চাত্য শিক্ষা বিস্তারে রামমোহন রায়ের ভূমিকা

ভূমিকাঃ

রাজা রামমোহন রায় ছিলেন পাশ্চাত্য শিক্ষার অনুরাগী। তিনি অনুভব করেছিলেন পাশ্চাত্যের যুক্তিবাদী শিক্ষা ছাড়া এদেশের মানুষের মুক্তির উপায় নেই। এজন্য এ দেশে পাশ্চাত্য শিক্ষা প্রসারে তিনি ইংরেজ সরকারের পক্ষে রায় দিয়েছিলেন।

ইংরেজি ভাষা শিক্ষায় গুরুত্ব আরোপঃ

রাজা রামমোহন রায় প্রথম উপলব্ধি করেছিলেন, ইংরেজি ভাষা না জানলে পাশ্চাত্য জ্ঞান-বিজ্ঞান ভারতীয়দের কাছে উন্মুক্ত হবে না। কারণ পাশ্চাত্যের জ্ঞান-বিজ্ঞান, দর্শন- সবকিছুই ইংরেজি ভাষায় রচিত। তাই তিনি ইংরেজি ভাষা শিক্ষার উদ্দেশ্যে পাশ্চাত্য শিক্ষা বিস্তারের উদ্যোগ নেন। এই উদ্দেশ্যে তিনি ১৮১৫ খ্রিস্টাব্দে কলকাতায় ‘আংলো হিন্দু স্কুল’ নামে একটি ইংরেজি বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন।

প্রশাসনিক উদ্যোগ গ্রহণঃ

১৮১৩ খ্রিস্টাব্দে সনদ আইনে ইংরেজ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ভারতীয়দের শিক্ষার জন্য বার্ষিক এক লক্ষ টাকা ব্যয়ের সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু এই টাকা প্রাচ্য না পাশ্চাত্য কোন খাতে ব্যয় করা হবে তা নিয়ে বিতর্ক দেখা দেয়। রামমোহন রায় পাশ্চাত্য শিক্ষার পক্ষে মত দেন এবং তিনি ১৮২৩ খ্রিস্টাব্দে লর্ড আমহার্স্ট কে দেওয়া পত্রে জানান যে , এই অর্থ পাশ্চাত্য বিজ্ঞান ও ইংরেজি শিক্ষার প্রসারের জন্য ব্যয় করা হোক

বেদান্ত কলেজ প্রতিষ্ঠাঃ

শিক্ষার্থীদের মন থেকে নানা কুসংস্কার ও মূর্তি পূজা দূর করে পাশ্চাত্য সমাজবিজ্ঞান ও পদার্থবিদ্যা শিক্ষাদানের উদ্দেশ্যে রামমোহন রায় ১৮২৬ খ্রিস্টাব্দে বেদান্ত কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন।

পাশ্চাত্য শিক্ষার পক্ষে প্রচারঃ

১৮২৩ খ্রিস্টাব্দে গভর্নর জেনারেল লর্ড আমহার্স্ট কলকাতায় সংস্কৃত কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন। রামমোহন রায় তার এই নীতির তীব্র বিরোধিতা করেন। তিনি পাশ্চাত্য শিক্ষা(পাশ্চাত্য গণিত, দর্শন, রসায়ন প্রভৃতি) বিস্তারের জন্য সরকারি অর্থ ব্যয় করার অনুরোধ করেন। লর্ড আমহার্স্ট রামমোহনের কথা না মানলেও সংস্কৃত কলেজে ইংরেজি শিক্ষার ব্যবস্থা করেন।

রামমোহন রায়

শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নির্মাণ উদ্যোগে সহায়তাঃ

রামমোহন রায় হিন্দু কলেজ প্রতিষ্ঠায় ডেভিড হেয়ার কে নানাভাবে সহায়তা করেন। হেয়ারের বিভিন্ন বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠা, কলকাতা স্কুল বুক সোসাইটি এবং কলকাতা স্কুল সোসাইটির কর্মকাণ্ডে কোন না কোনভাবেই তিনি যুক্ত ছিলেন। তিনি স্কুল বুক সোসাইটির একজন সক্রিয় সদস্যও ছিলেন।

শিক্ষা বিস্তারে মিশনারীদের সাহায্যঃ

রাজা রামমোহন রায় ভারতে পাশ্চাত্য শিক্ষার বিস্তারের জন্য খ্রিস্টান মিশনারীদের বিভিন্নভাবে সাহায্য ও উৎসাহিত করেছিলেন। ১৮৩০ খ্রিস্টাব্দে আলেকজান্ডার ডাফ কলকাতায় জেনারেল অ্যাসেম্বলিজ ইনস্টিটিউশন প্রতিষ্ঠায় উদ্যোগী হলে, তার প্রধান সহযোগী ছিলেন রামমোহন রায়।

স্ত্রী শিক্ষায় উদ্যোগ গ্রহণঃ

রামমোহন রায় স্ত্রী শিক্ষার প্রসারে উদ্যোগ নিয়েছিলেন। এজন্য তিনি ১৮২২ খ্রিস্টাব্দে ‘স্ত্রী শিক্ষা বিষয়ক’ পুস্তিকা প্রকাশ করে প্রাচীন ভারতে নারী শিক্ষার ঐতিহ্যকে জনসমক্ষে তুলে ধরেন। নারী শিক্ষার প্রসারে প্রতিষ্ঠান তৈরিতে তিনি জনমত গঠন করেছিলেন।

উপসংহার ঃ

পাশ্চাত্য শিক্ষা বিস্তারে রাজা রামমোহন রায়ের ভূমিকা ছিল অনস্বীকার্য। তার দক্ষতা, শক্তিশালী দূরদৃষ্টি, পৃষ্ঠপোষকতার জন্য সমকালীন ভারতের প্রতিকূল পরিস্থিতির মধ্যেও পাশ্চাত্য শিক্ষার কার্যক্রম গুলি এগিয়ে নিয়ে যেতে পেরেছিলেন। এজন্য তাকে ‘নবভারতের অগ্রদূত’ বলে অভিহিত করা হয়।

মাধ্যমিক ইতিহাসের প্রথম অধ্যায়ের গুরুত্বপূর্ণ দুই নম্বরের প্রশ্ন উত্তরগুলি দেখতে এখানে ক্লিক করুন

তথ্যসূত্র

এই ব্লগের কাজ করতে উইকিপিডিয়ার সাহায্য নেয়া হয়েছে।

রামমোহন রায় ও পাশ্চাত্য শিক্ষা সম্পর্কে কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্যঃ

প্রশ্ন: কাকে, কেন ‘ভারতের প্রথম আধুনিক মানুষ’ বলা হয় ?

উত্তর: রাজা রামমোহন রায় কে ‘ভারতের প্রথম আধুনিক মানুষ’ বলা হয়। কারণ তিনি প্রথম ভারতীয়, যিনি সমাজ ও ধর্ম সংস্কার এবং প্রাচ্য-পাশ্চাত্যের সমন্বয়ে ব্রতী হয়েছিল। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাকে এই আখ্যা দিয়েছিলেন।

প্রশ্ন: রামমোহনকে ‘আধুনিক ভারতের স্রষ্টা’ কে বলেছেন ?

উত্তর: ইংরেজ ঐতিহাসিক স্পিয়ার।

প্রশ্ন: সতীদাহ প্রথা কি ?

উত্তর: ভারতীয় হিন্দু সমাজে আদি-মধ্যযুগে একটি নারকীয় কুসংস্কার প্রচলিত ছিল। এই প্রথা অনুসারে মৃত স্বামীর জ্বলন্ত চিতায় সদ্য বিধবা স্ত্রীকে পুড়িয়ে মারা হতো। এই নিষ্ঠুর প্রথাকে সতীদাহ প্রথা বলা হয়।

প্রশ্ন: কে, কবে, কোন আইন দ্বারা সতীদাহ প্রথা নিষিদ্ধ করেন ?

উত্তর: রামমোহন রায়ের প্রচেষ্টার ফলে ভারতের তৎকালীন গভর্নর জেনারেল লর্ড উইলিয়াম বেন্টিং ১৮২৯ খ্রিস্টাব্দে ‘সপ্তদশ রেগুলেশন’ দ্বারা এদেশে সতীদাহ প্রথা নিষিদ্ধ করেন

প্রশ্ন: রাজা রামমোহন রায় কবে, কি উদ্দেশ্যে বেদান্ত কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন ?

উত্তর: ১৮২৫ খ্রিস্টাব্দে রাজা রামমোহন ‘বৈদান্তিক এক ঈশ্বরবাদ’ শিক্ষাদানের জন্য বেদান্ত কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন।

প্রশ্ন: রামমোহনের মৃত্যু কিভাবে হয় ?

উত্তর: লন্ডনের ব্রিস্টল শহরে ১৮৩৩ খ্রিস্টাব্দে মেনিনজাইটিস রোগে মৃত্যু হয়।

প্রশ্ন: রামমোহন রায় কোন কলেজের প্রতিষ্ঠার বিরোধিতা করেছিলেন এবং কেন?

উত্তর: রামমোহন রায় ১৮২৩ খ্রিস্টাব্দে লর্ড আমহার্স্ট কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত সংস্কৃত কলেজের বিরোধিতা করেছিলেন, কারণ তিনি মনে করতেন যে সরকারি অর্থ প্রাচ্য শিক্ষার চেয়ে পাশ্চাত্য বিজ্ঞান ও গণিতের শিক্ষায় ব্যয় করা উচিত।

প্রশ্ন: রামমোহন কেন ইংরেজি ভাষা শিক্ষায় গুরুত্ব দিয়েছিলেন?

উত্তর: রামমোহন মনে করতেন, ইংরেজি ভাষা না জানলে ভারতীয়দের কাছে পাশ্চাত্যের জ্ঞান-বিজ্ঞান উন্মুক্ত হবে না। কারণ, সেই সময়ে অধিকাংশ পাশ্চাত্য জ্ঞান-বিজ্ঞান, দর্শন, এবং অন্যান্য বিষয় ইংরেজি ভাষায় লেখা হত। তাই তিনি ইংরেজি শিক্ষার প্রসারে উদ্যোগ নিয়েছিলেন।

প্রশ্ন: পাশ্চাত্য শিক্ষার পক্ষে রামমোহনের কোন উদ্যোগটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ?

উত্তর: ১৮১৫ খ্রিস্টাব্দে কলকাতায় ‘আংলো হিন্দু স্কুল’ প্রতিষ্ঠা ছিল রামমোহনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগ, যেখানে তিনি ইংরেজি ভাষা এবং পাশ্চাত্য শিক্ষা বিস্তারের জন্য প্রচেষ্টা চালান।

প্রশ্ন: স্ত্রী শিক্ষার ক্ষেত্রে রামমোহনের কী অবদান ছিল?

উত্তর: রামমোহন স্ত্রী শিক্ষার প্রসারে উদ্যোগ নেন এবং ১৮২২ খ্রিস্টাব্দে ‘স্ত্রী শিক্ষা বিষয়ক’ পুস্তিকা প্রকাশ করেন, যেখানে তিনি প্রাচীন ভারতে নারী শিক্ষার ঐতিহ্য তুলে ধরেন।

  • মাধ্যমিক ভূগোল সাজেশন- 2026
    মাধ্যমিক ভূগোল সাজেশনটি ২০২৬ সালের মাধ্যমিক ছাত্র-ছাত্রীদের কথা মাথায় রেখে তৈরি করা হয়েছে।বিগত বছরগুলিতে যে ধরনের প্রশ্ন এসেছে তার ওপর ভিত্তি করে। এই সাজেশনটি …

    Read More

  • মাধ্যমিক ইতিহাস সাজেশন-2026
    মাধ্যমিক ইতিহাস সাজেশনটি ২০২৬ সালের মাধ্যমিক ছাত্র-ছাত্রীদের কথা মাথায় রেখে তৈরি করা হয়েছে।বিগত বছরগুলিতে যে ধরনের প্রশ্ন এসেছে তার ওপর ভিত্তি করে। এই সাজেশনটি …

    Read More

  • সশস্ত্র বিপ্লবী আন্দোলনে বেঙ্গল ভলেন্টিয়ার্স দলের ভূমিকা
    বেঙ্গল ভলেন্টিয়ার্স দল বরিশালের তরুণ হেমচন্দ্র ঘোষের উদ্যোগে ১৯১২ খ্রিস্টাব্দে গঠিত হয়।এই দলের অন্যতম সদস্য ও সংগঠক ছিলেন সত্য গুপ্ত। ১৯০২ খ্রিস্টাব্দে ঢাকায় পুলিনবিহারী …

    Read More

  • বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলনে ছাত্র সমাজের ভূমিকা বিশ্লেষণ কর
    বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলনে ছাত্র সমাজের চরম উৎসাহ ও দেশমাতার প্রতি ঐকান্তিক ভক্তি দেশবাসীকে স্বাধীনতা সংগ্রামে অনুপ্রাণিত করেছিল। ১৯০৫ খ্রিস্টাব্দের ১৯ শে জুলাই লর্ড কার্জন …

    Read More

  • কংগ্রেস সমাজতন্ত্রী দল কেন প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল
    ১৯৩৪ খ্রিস্টাব্দে কংগ্রেস সমাজতন্ত্রী দল প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল জাতীয় কংগ্রেসের মধ্যে থেকেই সমাজতান্ত্রিক আদর্শ প্রচার ও বাস্তবায়নের লক্ষ্যে। তারা সমাজে সাম্য, ন্যায় পক্ষপাতী ছিল। ভারতের …

    Read More

  • একা আন্দোলনের একটি সমালোচনামূলক বিবরণ দাও
    একা আন্দোলন সংঘটিত হয়েছিল অসহযোগ আন্দোলন চলাকালে মাদারি পাসির নেতৃত্ব ১৯২১-২২ খ্রি: উত্তরপ্রদেশের হরদই, বারাবাঁকি, সীতাপুর প্রভৃতি জেলায়। এই আন্দোলনের মূল কারণ ছিল-কৃষকদের নির্ধারিত …

    Read More

Sharing Is Caring:

Leave a Comment