ইতিহাস, দশম শ্রেণী

শ্রীরামপুর মিশন প্রেস কীভাবে একটি অগ্রনী মুদ্রণ প্রতিষ্ঠানে পরিণত হল?

Admin

No Comments

উনিশ শতকের গোড়ার দিকে ব্রিটিশ ভারতে স্থাপিত একটি ছাপাখানা শ্রীরামপুর মিশন প্রেস। শ্রীরামপুর মিশন ১৮০০ সালের ১০ জানুয়ারি পশ্চিমবঙ্গের শ্রীরামপুরে স্থাপিত হয়।

ওই বছরই মার্চ মাসে উইলিয়াম কেরি শ্রীরামপুর মিশন প্রেস নামে ছাপাখানাটি খোলেন। পঞ্চানন কর্মকারের সহযোগিতায় এই মাসেই প্রথম বাংলা গদ্যগ্রন্থ মথী রচিত মঙ্গল সমাচার মিশন প্রেস থেকে ছাপা হয়। এই প্রেস থেকে উইলিয়াম কেরি অনূদিত বাইবেল বাংলা ছাড়াও হিন্দি, অসমিয়া, ওড়িয়া, মারাঠি প্রভৃতি বিভিন্ন ভারতীয় ভাষায়প্রকাশিত হয় ।

শ্রীরামপুর মিশন প্রেস মাত্র কয়েক দশকের মধ্যেই বাংলা মুদ্রণ শিল্পে বিপ্লব ঘটিয়েছিল। ১৮০০ সালে প্রতিষ্ঠিত এই প্রেসটি মাত্র কয়েক বছরেই অসংখ্য গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থ প্রকাশ করেছিল। এর মধ্যে রয়েছে রামায়ণ, মহাভারত, সমাচার দর্পণ এবং দিগদর্শন পত্রিকা।শুধু বাংলা নয়, এই প্রেসটি ৪৫টি ভাষায় প্রায় ২,১২,০০০ টি বই ছাপিয়েছিল, যা তৎকালীন বিশ্বে একটি বিরাট অর্জন ছিল। ক্যালকাটা স্কুল-বুক সোসাইটির জন্যও এই প্রেসটি বই প্রকাশ করেছিল।

শ্রীরামপুর মিশন প্রেস বাংলা সাহিত্যের বিকাশেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল। এই প্রেসটি বাংলা গদ্যের উন্নতি সাধনেও সাহায্য করেছিল।কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত, প্রচুর আর্থিক দায়ের কারণে ১৮৩৭ সালে এই প্রেসটি বন্ধ হয়ে যায়। যদিও অল্প সময়ের জন্যই এই প্রেসটি চালু ছিল, তবুও বাংলা মুদ্রণ শিল্পে এর অবদান অমূল্য। শ্রীরামপুর মিশন প্রেস বাংলা মুদ্রণের ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে।

Table of Contents

শ্রীরামপুর মিশন প্রেস কীভাবে একটি অগ্রনী মুদ্রণ প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়ঃ

ভূমিকাঃ

শ্রীরামপুর মিশন প্রেস ছিল ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির আমলে বাংলায় প্রতিষ্ঠিত একটি গুরুত্বপূর্ণ মুদ্রণ সংস্থা। এটি ১৮০০ সালে ধর্মপ্রচারক উইলিয়াম কেরি, উইলিয়াম ওয়ার্ড এবং জোশুয়া মার্শম্যানের উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত হয়। এই প্রেসটি কেবলমাত্র ধর্মপ্রচারের উদ্দেশ্যেই নয়, বরং বাংলা ভাষায় শিক্ষা ও সংস্কৃতির প্রসারের ক্ষেত্রেও নবযুগের করেছিল।

বাংলা ভাষায় মুদ্রণের সূচনা

শ্রীরামপুর মিশন প্রেস বাংলা ভাষায় প্রথম মুদ্রণ কার্যক্রম চালু করেছিল। ১৮০১ সালে এখানে প্রথম বাংলা গ্রন্থ আ ক্রিশ্চিয়ান ক্যাটেকিজ মুদ্রিত হয়েছিল। এরপর থেকে এটি বাংলা বই প্রকাশের অন্যতম প্রধান কেন্দ্র হয়ে ওঠেছিল।

পাঠ্যপুস্তকের মুদ্রণ

শ্রীরামপুর মিশন প্রেসের উল্লেখযোগ্য অবদান হলো পাঠ্য বই প্রকাশ। এই প্রেস থেকে ছাত্র-ছাত্রীদের উপযোগী অসংখ্য বই ছাপানো হতো। ১৮১৭ খ্রিস্টাব্দে ডেভিড হেয়ারের উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত ‘ক্যালকাটা স্কুল বুক সোসাইটি‘ সাধারণ ছাত্রদের মধ্যে স্বল্প মূল্যে বা বিনামূল্যে পাঠ্য বই বিতরণ করতো। এই সমস্ত বই শ্রীরামপুর মিশন প্রেস থেকে ছাপানো হতো। এছাড়া কলকাতা ফোর্ট উইলিয়াম কলেজের প্রয়োজনীয় বিভিন্ন পাঠ্যপুস্তকও ছাপা হতো।

ধর্ম পুস্তক মুদ্রণ

উইলিয়াম কেরি এবং তাঁর সহকর্মীরা বাংলা, সংস্কৃত, অসমীয়া, ওড়িয়া, মারাঠি এবং অন্যান্য ভারতীয় ভাষায় বাইবেলর অনুবাদ ও মুদ্রণ করেছিলেন। এছাড়া রামায়ণ, মহাভারত ও অন্যান্য ধর্মগ্রন্থেরও অনুবাদ প্রকাশ করেছিলেন। এই কর্মকাণ্ড শুধু ধর্মপ্রচার নয়, ভাষাশিক্ষা ও সাহিত্যের বিকাশেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল।

শ্রীরামপুর মিশন প্রেস
শ্রীরামপুর ত্রয়ী

সংবাদপত্র মুদ্রণ

১৮১৮ সালে শ্রীরামপুর মিশন প্রেস থেকে সমাচার দর্পণ প্রকাশিত হয়, যা বাংলা ভাষার প্রথম মুদ্রিত সংবাদপত্র। দিকদর্শন নামে মাসিক বাংলা পত্রিকাটি এই মিশন প্রেস থেকে প্রকাশিত হতো। যা বাংলা ভাষার সাংবাদিকতার সূচনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল।

বহুভাষিক গ্রন্থ মুদ্রণ

এই মিশন প্রেসটি ৪০টিরও বেশি ভাষায় গ্রন্থ মুদ্রণ করেছিল,যা এটিকে আন্তর্জাতিক খ্যাতি এনে দিয়েছিল। ভাষার বৈচিত্র্য ও দক্ষ মুদ্রণ প্রযুক্তি ব্যবহারের কারণে এটি একটি অগ্রণী মুদ্রণ প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছিল।

উপসংহার

শ্রীরামপুর মিশন প্রেস প্রযুক্তি,ভাষা ও শিক্ষার ক্ষেত্রে এক যুগান্তকারী ভূমিকা পালন করেছিল। এর উদ্যোগে বাংলা ভাষায় বই মুদ্রণের সূচনা হয়, যা সাধারণ মানুষের মধ্যে শিক্ষার প্রসার ঘটিয়েছিল। বহুভাষিক বই প্রকাশের কারণে এটি ভারতবর্ষে একটি অগ্রণী মুদ্রণ প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়।

1857-এর বিদ্রোহকে কি সামন্ত শ্রেণীর বিদ্রোহ বলা যায়?: প্রশ্নের উত্তরটি দেখতে Click করুন এখানে

তথ্যসূত্র:

এই ব্লগের কাজ করতে Wikipedia এর সাহায্য নেওয়া হয়েছে।

আধুনিক ভারত ও বিশ্বের ইতিহাস (১৯১৪-১৯৬৪), জীবন মুখোপাধ্যায় – শ্রীধর পাবলিশার্স ।

শ্রীরামপুর মিশন প্রেস থেকে কিছু গুরুত্বপূর্ণ সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন- উত্তর

প্রশ্ন: শ্রীরামপুর মিশনপ্রেস কে স্থাপন করেন?

উত্তর: শ্রীরামপুর মিশনপ্রেস ১৮০০ সালের ১০ জানুয়ারি পশ্চিমবঙ্গের শ্রীরামপুরে প্রতিষ্ঠিত হয়। এটি উইলিয়াম কেরি, উইলিয়াম ওয়ার্ড এবং জোশুয়া মার্শম্যানের উদ্যোগে স্থাপিত হয়।

প্রশ্ন: শ্রীরামপুর মিশনপ্রেস থেকে মুদ্রিত প্রথম গ্রন্থটির নাম কি?

উত্তর: শ্রীরামপুর মিশনপ্রেস থেকে প্রথম প্রকাশিত গ্রন্থ হলো “মঙ্গল সমাচার,” যা মথী রচিত একটি গদ্যগ্রন্থ। এটি পঞ্চানন কর্মকারের সহযোগিতায় প্রকাশিত হয়।

প্রশ্ন: শ্রীরামপুর মিশনপ্রেস ধর্মীয় বই মুদ্রণে কী অবদান রেখেছে?

উত্তর: শ্রীরামপুর মিশনপ্রেস থেকে উইলিয়াম কেরি অনূদিত বাইবেল বাংলা, হিন্দি, অসমীয়া, ওড়িয়া, মারাঠি এবং অন্যান্য ভারতীয় ভাষায় প্রকাশিত হয়। এছাড়া রামায়ণ ও মহাভারতের অনুবাদও প্রকাশিত হয়।

প্রশ্ন: শ্রীরামপুর মিশনপ্রেস বাংলা ভাষায় শিক্ষার ক্ষেত্রে কী ভূমিকা রেখেছে?

উত্তর: শ্রীরামপুর মিশনপ্রেস বাংলা ভাষায় প্রথম মুদ্রণ কার্যক্রম চালু করে। এটি ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য অসংখ্য পাঠ্যপুস্তক প্রকাশ করেছিল, যা বাংলায় শিক্ষার প্রসারে সহায়ক হয়।

প্রশ্ন: ‘সমাচার দর্পণ’ কী এবং এটি কবে প্রকাশিত হয়?

উত্তর: সমাচার দর্পণ বাংলা ভাষার প্রথম মুদ্রিত সংবাদপত্র। এটি ১৮১৮ সালে শ্রীরামপুর মিশনপ্রেস থেকে প্রকাশিত হয়।

প্রশ্ন: দিগদর্শন পত্রিকা কীভাবে গুরুত্বপূর্ণ?

উত্তর: দিগদর্শন পত্রিকা ছিল বাংলা ভাষার প্রথম মাসিক পত্রিকা। এটি বাংলা ভাষার সাংবাদিকতার সূচনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল এবং শিক্ষার প্রসারে অবদান রেখেছিল।

প্রশ্ন: শ্রীরামপুর মিশন প্রেস কতটি ভাষায় বই মুদ্রণ করেছিল?

উত্তর: শ্রীরামপুর মিশন প্রেস ৪০টিরও বেশি ভাষায় বই মুদ্রণ করেছিল। এর মধ্যে বাংলা, হিন্দি, ওড়িয়া, মারাঠি, এবং অসমীয়া উল্লেখযোগ্য।

প্রশ্ন: ক্যালকাটা স্কুল-বুক সোসাইটির সঙ্গে শ্রীরামপুর মিশনপ্রেসের সম্পর্ক কী?

উত্তর: শ্রীরামপুর মিশনপ্রেস ক্যালকাটা স্কুল-বুক সোসাইটির জন্য বিভিন্ন পাঠ্যপুস্তক প্রকাশ করত। এই সোসাইটি সাধারণ ছাত্রদের জন্য বই স্বল্পমূল্যে বা বিনামূল্যে বিতরণ করত।

প্রশ্ন: শ্রীরামপুর মিশনপ্রেস কেন বন্ধ হয়ে যায়?

উত্তর: প্রচুর আর্থিক দেনার দায়ে ১৮৩৭ খ্রিস্টাব্দে শ্রীরামপুর ব্যাপ্টিস্ট মিশনের এই ছাপাখানাটি বন্ধ হয়ে যায়।

প্রশ্ন: শ্রীরামপুর মিশনপ্রেস ভারতীয় মুদ্রণ শিল্পে কীভাবে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে?

উত্তর: শ্রীরামপুর মিশনপ্রেস বহুভাষিক বই মুদ্রণের মাধ্যমে ভারতের শিক্ষার প্রসারে এবং বাংলা ভাষায় সাংবাদিকতা ও সাহিত্যের বিকাশে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছিল।

আরো পড়ুন

Sharing Is Caring:

Leave a Comment