ইতিহাস, দশম শ্রেণী

সশস্ত্র বিপ্লবী আন্দোলনে নারীদের ভূমিকা

Admin

No Comments

ব্রিটিশ বিরোধী সশস্ত্র বিপ্লবী আন্দোলনে নারীরা শুধু পুরুষ বিপ্লবীদের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়েই লড়েননি, বরং অনেক ক্ষেত্রে নেতৃত্বও দিয়েছেন।

সশস্ত্র বিপ্লবী আন্দোলনে নারীরা প্রথমদিকে পরোক্ষভাবে অংশগ্রহণ করেছিল। এই অংশগ্রহণ ছিল মূলত উচ্চবিত্ত শিক্ষিত শ্রেণীর নারীদের মধ্যে। এরা মূলত বিপ্লবীদের আশ্রয় দিয়ে, অস্ত্র সরবরাহ করে, গোপন স্থানে সংবাদ পৌঁছে দিয়ে, পুলিশকে বিভ্রান্ত করে, বিপ্লবীদের পালাতে সাহায্য করে,টাকা-পয়সা গয়না ইত্যাদি দিয়ে পরোক্ষভাবে বৈপ্লবিক আন্দোলনের সাহায্য করেন।

বিশ শতকের দ্বিতীয় দশক থেকে বাংলার শিক্ষিত-অশিক্ষিত, উচ্চ-মধ্য-নিম্নবিত্ত শ্রেণীর সমস্ত নারী সশস্ত্র বিপ্লবী আন্দোলনে অংশগ্রহণ করে। ব্রিটিশ সরকারের পুলিশি অত্যাচার, নির্বাসন, গ্রেপ্তার, নির্যাতন চালাতে থাকলেও নারীদের আন্দোলন থেমে থাকেনি।

Table of Contents

সশস্ত্র বিপ্লবী আন্দোলনে নারীদের ভূমিকা বিশ্লেষণ কর।

ভূমিকাঃ

ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে শুধু পুরুষরাই নয়, নারীরাও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। বিশেষ করে সশস্ত্র বিপ্লবী আন্দোলনে নারীদের অবদান অনস্বীকার্য। তারা গোপন সংগঠনে কাজ করেছেন, অস্ত্র পরিবহন করেছেন এবং অনেকেই সরাসরি যুদ্ধেও অংশগ্রহণ করেছেন।

লীলা নাগ(রায়)ঃ

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় থেকে বৈপ্লবিক কাজকর্মে নারীদের অংশগ্রহণের জন্য বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা হয়। এই সংগঠনগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল ১৯২৩ খ্রিস্টাব্দে ঢাকায় লীলা নাগ কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত ‘দিপালী সংঘ’। এই সংঘে নারী শক্তির জাগরণে শরীর চর্চা ও অস্ত্র প্রশিক্ষণ দেয়া হতো। ১৯৩১ খ্রিস্টাব্দে থেকে মাসিক পত্রিকায় ‘জয়শ্রী’ তে দিপালী সংঘের আদর্শ ও কার্যাবলী নিয়মিতভাবে প্রকাশিত হতো। ১৯২৬ খ্রিস্টাব্দে তিনি ভারতের প্রথম ছাত্রী সংগঠন ‘দিপালী ছাত্রী সংঘ’ গড়ে তোলেন। এছাড়া তিনি বিপ্লবী অনিল রায়ের সংস্পর্শে এসে শ্রী সংঘ এ যোগদান করেন।

প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদারঃ

১৮৩০ খ্রিস্টাব্দের ১৮ই এপ্রিল মাস্টারদা সূর্যসেনের নেতৃত্বে ‘চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুণ্ঠন’ এর ঘটনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার। তিনি টেলিগ্রাফ ও টেলিফোন অফিস ধ্বংস, পুলিশ লাইন দখল, জালালাবাদ পাহাড়ের যুদ্ধ(১৮৩০) ইত্যাদিতে অংশ নেন। প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদারের নেতৃত্বে একদল বিপ্লবী ১৮৩২ খ্রিস্টাব্দির ২৪ শে সেপ্টেম্বর চট্টগ্রামের পাহাড় তুলির ইউরোপীয় ক্লাব আক্রমণ করেন। এখানে একজন ইউরোপীয় উচ্চপদস্থ অফিসার কে হত্যা ও কয়েকজনকে আহত করেন। শেষ পর্যন্ত পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হওয়ার আগে প্রীতিলতা পটাশিয়াম সায়ানাইড খেয়ে আত্মহত্যা করেন।

কল্পনা দত্তঃ

কল্পনা দত্ত সূর্য সেন প্রতিষ্ঠিত ‘ইন্ডিয়ান রিপাবলিকান আর্মির’ সদস্য ছিলেন। তিনি চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুণ্ঠনের সময় প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার এর সঙ্গী ছিলেন। কল্পনা দত্ত কলকাতা থেকে বিস্ফোরক এনে গান-কটন তৈরি করে বিস্ফোরণ ঘটিয়ে জেলবন্দী বিপ্লবীদের পালাতে সাহায্য করেন। তিনি পুলিশের হাতে ধরা পড়ে জেলবন্দি হন।

সশস্ত্র বিপ্লবী আন্দোলনে নারী
সশস্ত্র বিপ্লবী আন্দোলনে নারী

বীণা দাসঃ

বীণা দাস ‘কলকাতা ছাত্রীর সংঘে’র সদস্য ছিলেন। তিনি ১৮৩২ খ্রিস্টাব্দের ৬ ফেব্রুয়ারি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন অনুষ্ঠানে বাংলার গভর্নর স্ট্যানলি জ্যাকসনের ওপর গুলি চালান। যদিও তিনি সফল হননি, পুলিশের হাতে ধরা পড়ে দীর্ঘমেয়াদী কারাদণ্ড হয়।

শান্তি ও সুনীতিঃ

কুমিল্লার দুই ছাত্রী সুনীতি চৌধুরী ও শান্তি দাস১৯৩১ খ্রিস্টাব্দের ১৪ই ডিসেম্বর কুমিল্লার অত্যাচারী ম্যাজিস্ট্রেট স্টিভেন্স কে গুলি করে হত্যা করেন। আবার ১৯৩৪ খ্রিস্টাব্দে উজ্জলা মজুমদার দার্জিলিং এর লেবং-এ এবাংলার গভর্নর অ্যান্ডারসনকে হত্যার চেষ্টা করলে ধরা পড়েন ও জেলবন্দি হন।

ঝাঁসি ব্রিগেডের বীরত্বঃ

নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর ‘আজাদ হিন্দ ফৌজ’-এ নারীদের জন্য পৃথক ‘ঝাঁসির রানি’ ব্রিগেড গঠন করা হয় ।ক্যাপ্টেন লক্ষ্মী সেহগাল এই বাহিনীর প্রধান ছিলেন। তারা ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে বার্মা ও ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে লড়াই করে। ক্যাপ্টেন লক্ষ্মী স্বামীনাথন ব্রিটিশ সেনাবাহিনীর হাতে গ্রেফতার হন। এই বাহিনীতে প্রায় ১,৫০০ জন নারী অংশগ্রহণ করেছিল।

উপসংহারঃ

সশস্ত্র বিপ্লবী আন্দোলনে নারীদের ভূমিকা ছিল সাহসিকতাপূর্ণ ও অনন্য। বিপ্লবী সংগ্রামে নারীরা প্রমাণ করেছেন যে, তাঁরা শুধু ঘরকন্নার জন্য নন, দেশমাতৃকার স্বাধীনতার জন্যও লড়াই করতে পারেন। তাঁদের এই আত্মত্যাগ ভারতবর্ষের ইতিহাসে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে।

বাংলায় কারিগরি শিক্ষার বিকাশের সংক্ষিপ্ত বিবরণ দাও। সম্পূর্ণ উত্তরটি দেখতে Click এখানে।

তথ্যসূত্রঃ

এই ব্লগের কাজ করতে brainly.in এর সাহায্য নেওয়া হয়েছে।

বিপ্লবী আন্দোলনে নারীদের ভূমিকা থেকে কিছু গুরুত্বপূর্ণ সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন উত্তরঃ

প্রশ্ন: ভারত-জার্মান বিপ্লবী ষড়যন্ত্রে কে জড়িত ছিলেন?

উত্তর: ভারত জার্মান বিপ্লবী ষড়যন্ত্রে জড়িত ছিলেন- ননীবালা দেবী।

প্রশ্ন: ‘শৃঙ্খল ঝংকার’ গ্রন্থটির রচয়িতা কে?

উত্তর: সুভাষচন্দ্র বসুর শিক্ষাগুরু বেণীমাধব দাসের কন্যা বীণা দাস ছিলেন ‘শৃঙ্খল ঝংকার’ গ্রন্থটির রচয়িতা।

প্রশ্ন: ‘ভারতীয় বিপ্লববাদের জননী’ নামে কে পরিচিত?

উত্তর: ‘ভারতীয় বিপ্লববাদের জননী’ নামে পরিচিত ভিকাজি রুস্তম কামা। যিনি মাদাম কামা নামে সর্বাধিক বেশি পরিচিত।

প্রশ্ন: ‘শ্রী সংঘ’ কে প্রতিষ্ঠা করেন?

উত্তর: অনিল রায় ও নিরা নাগ ‘শ্রী সংঘ’ প্রতিষ্ঠা করেন।

প্রশ্ন: ‘ফুলতার’ কার ছদ্মনাম ছিল?

উত্তর: প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদারের ছদ্মনাম ছিল। তিনি ছিলেন ভারতীয় বিপ্লবী আন্দোলনের প্রথম নারী শহীদ।

প্রশ্ন: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কাকে ‘বাংলার অগ্নিকন্যা’ বলেছেন?

উত্তর: । কল্পনা দত্তকে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ‘বাংলার অগ্নিকন্যা’ বলেছেন ।

প্রশ্ন: ডিনামাইট ষড়যন্ত্র মামলায় কে অভিযুক্ত ছিলেন?

উত্তর: ডিনামাইট ষড়যন্ত্র মামলায় অভিযুক্ত ছিলেন-কল্পনা দত্ত।

প্রশ্ন: কল্পনা দত্তের লেখা একটি উল্লেখযোগ্য গ্রন্থের নাম লেখ?

উত্তর: কল্পনা দত্তের লেখা একটি উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ হল-‘চট্টগ্রাম অভ্যুত্থান’।

প্রশ্ন: মহিলা সত্যাগ্রহ কমিটি কোন প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগে গড়ে উঠেছিল?

উত্তর: দিপালী সংঘের নেতৃত্বে মহিলা সত্যাগ্রহ কমিটি গড়ে উঠেছিল।

প্রশ্ন: বিংশ শতকের একটি নারীর কল্যাণমূলক প্রতিষ্ঠানের নাম লেখ।

উত্তর: বিংশ শতকের একটি নারী কল্যাণমূলক প্রতিষ্ঠান হল-দিপালী সংঘ।

আরো পড়ুনঃ

Sharing Is Caring:

Leave a Comment