ইতিহাস, দশম শ্রেণী

নারী ইতিহাসের উপর টীকা লেখ (M.P 2017)

Admin

No Comments

দশম শ্রেণীর (মাধ্যমিক) ছাত্র-ছাত্রীদের ইতিহাসের প্রথম অধ্যায় ‘ইতিহাসের ধারণা’ থেকে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন নারী ইতিহাসের উপর টীকা লেখ।

যে ইতিহাস চর্চায় সমাজ ও সভ্যতার বিভিন্ন ক্ষেত্রে নারীদের অংশগ্রহণ নিয়ে আলোচনা করা হয়, তাদের অবদানের দিকগুলি আলোচনা করা হয় এবং নারীদের অধিকার প্রতিষ্ঠা ও প্রকৃত মূল্যায়ন নিয়ে চর্চা করা হয়- তাকেই সাধারণভাবে নারী ইতিহাস বলে।

Table of Contents

টীকা: নারী ইতিহাস – মান ৪

ভূমিকাঃ

নারী ইতিহাস হল ইতিহাসের সেই শাখা যা নারীদের জীবনের অভিজ্ঞতা, ভূমিকা, এবং অবদানকে কেন্দ্র করে আলোচনা করে। এটি শুধু নারীদের অবস্থানই বিশ্লেষণ করে না, বরং বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক, অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে তাদের ভূমিকা কিভাবে বিকশিত হয়েছে তা বিশদে তুলে ধরে।

নারী ইতিহাস চর্চার সূত্রপাতঃ

১৯৬০ এর দশকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রথম নারী ইতিহাস চর্চার সূত্রপাত ঘটে। পরে ধীরে ধীরে পশ্চিম ইউরোপের দেশ গুলিতে ছড়িয়ে পড়ে। ক্রমে ভারত সহ পৃথিবীর অন্যান্য দেশগুলিতে ইতিহাসের এই ধারা ছড়িয়ে পড়তে থাকে। বর্তমান ভারতে এই ধারা একটি স্বতন্ত্র শাখা হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করেছে।

ভারতে নারীর ইতিহাস চর্চাঃ

ভারতে ১৯৮০ দশক থেকেই কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় এবং যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় নারী ইতিহাস নিয়ে গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছে। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় নারী ইতিহাস চর্চার জন্য ১৯৮৮ খ্রিস্টাব্দে প্রতিষ্ঠা করা হয় স্কুল অফ উইমেন্স স্টাডিজ বা মানবী বিদ্যাচর্য কেন্দ্র। বর্তমানে মানববিদ্যা বা ফেমিনিজমের চর্চা করার জন্য অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে মানবী বিদ্যার চর্চা কেন্দ্র স্থাপিত হয়েছ।

নারী ইতিহাস চর্চার উদ্দেশ্য/ বৈশিষ্ট্যঃ

  • নারীর ঐতিহাসিক অবদানগুলিকে তুলে ধরা এবং মূল্য দেওয়া।
  • নারীর অবমূল্যায়নকারী বিষয়গুলির সমালোচনা করা।
  • নারী সম্পর্কে আর্থসামাজিক ও নৈতিক বোধ জাগ্রত করা।
  • ইতিহাস চর্চায় পুরুষতান্ত্রিক ধারার সংশোধন করা এবং পুরুষতন্ত্র কিভাবে নারীর বিকাশের পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায় তা আলোচনা করা।
  • নারি কেন্দ্রিক বিষয়গুলিকে ইতিহাস চর্চার আওতায় নিয়ে আসা।

নারী ইতিহাস চর্চার গুরুত্বঃ

  1. নারীরা চর্চার ফলে প্রচলিত পুরুষতান্ত্রিক ইতিহাস ধরার বদল ঘটেছে।
  2. এখন ইতিহাসে আমরা সমাজ, রাজনীত, শিক্ষা, স্বাধীনতা আন্দোলন প্রভৃতি ক্ষেত্রে পুরুষদের পাশাপাশি নারীদের ভূমিকা গুলি জানতে পারি।
  3. ইতিহাসের আলোচিত ও উপেক্ষিত নারীদের নানা ঐতিহাসিক অবদানের দিকগুলো এই ইতিহাস চর্চায় উঠে আসছে।

উপসংহারঃ

আজকের দিনে নারীরা শিক্ষা, কর্মক্ষেত্র এবং সমাজের প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জন করেছেন। নারী ইতিহাস আমাদের শেখায় যে নারীরাও সমাজের গঠন এবং উন্নয়নের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। তাদের অবদান ছাড়া ইতিহাসের পূর্ণাঙ্গ ছবি পাওয়া সম্ভব নয়।

দশম শ্রেণীর প্রথম অধ্যায়: ‘ইতিহাসের ধারণা’ থেকে গুরুত্বপূর্ণ সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন উত্তরগুলি জানতে

ক্লিক করুন এখানে

উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ সমূহ:

গ্রন্থের নাম লেখক/ লেখিকা
‘উইনমেন ইন মডার্ন ইন্ডিয়া’নীরা দেশাই
‘ভারতের নারী মুক্তি আন্দোলন’হিরন্ময় বন্দ্যোপাধ্যায়
‘ওমেন ইন ইংলিশ সোশ্যাল হিস্ট্রি’বারবারাকান
‘হোয়াট ইজ প্যাট্রিয়ারকি’কমলা ভাসিন

তথ্যসূত্রঃ

এই ব্লকের বিভিন্ন কাজ আমি নারী ইতিহাসের উইকিপিডিয়া থেকে নিয়েছে।

‘ভারতের ইতিহাস ও পরিবেশ চর্চা’ – শচীন্দ্রনাথ মন্ডল (দশম শ্রেণী) ।

‘ ইতিহাস ও পরিবেশ চর্চা’ – সমর কুমার মল্লিক ও প্রশান্ত দত্ত (দশম শ্রেণী)।

কিছু উল্লেখযোগ্য তথ্য সমূহ:

Q.নারীদের সম্মানার্থে আন্তর্জাতিক নারী বর্ষ সূচিত হয় কোন বছর ?

Ans.১৯৭৫ খ্রিস্টাব্দে।

Q.প্রাচীন ও মধ্যযুগে রাজনৈতিক ক্ষমতায় থাকা কয়েকজন নারীর নাম লেখ।

Ans.নেফারতিতি, ক্লিওপেট্র, রাজিয়া, নুরজাহা, দুর্গাবতী প্রমুখ নারী।

Q. আন্তর্জাতিক নারী দশক বলা হয় কোন সময়কে ?

Ans. ১৯৭৫ থেকে ১৯৮৫ খ্রিস্টাব সময় কে।

Q. আন্তর্জাতিক নারী দিবস পালিত হয় কোন তারিখে ?

Ans.৮ ই মার্চ।

Q. ‘ইকোফেমিনিজম’ শব্দটি প্রথম ইতিহাস চর্চায় কে ব্যবহার করেন

Ans.1970 এর দশকে ফরাসি নারীবাদী ফাঁসোয়া ডোবান।

Q. কোথাকার নারীবাদীরা ‘ইকোফেমিনিজম’ এর পরিবর্তে ‘উওম্যানিজম’ শব্দটি ব্যবহারে বেশি আগ্রহী ?

Ans.ভারতীয় নারীবাদীরা।

Q. ‘প্রাচীন ভারতে নারী’ নামক পুস্তকটি রচনা করেন কে ?

Ans.১৯৫০ খ্রিস্টাব্দে ক্ষিতিমোহন সেন।

Q. ২০১৪ খ্রিস্টাব্দে শান্তি বিভাগে কে নোবেল পুরস্কার পান ?

Ans. পাকিস্তানি তরুণী মালালা ইউসুফজাই।

Q.নারী ইতিহাস কী ?

Ans.এই ইতিহাস হল ইতিহাসের সেই শাখা যা নারীদের জীবনের অভিজ্ঞতা, ভূমিকা এবং অবদানকে কেন্দ্র করে আলোচনা করে, এবং সমাজে তাদের অবস্থান বিশ্লেষণ করে।

Q.নারী ইতিহাস চর্চার উদ্দেশ্য কী?

Ans.এই ইতিহাস চর্চার উদ্দেশ্য হল নারীদের ঐতিহাসিক অবদানকে তুলে ধরা, নারীর অবমূল্যায়নের সমালোচনা করা, এবং পুরুষতান্ত্রিক ইতিহাসের ধারাকে সংশোধন করা।

Sharing Is Caring:

Leave a Comment